পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে বাইক-বাহিনী নিষিদ্ধ করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। জেলাশাসকদের কাছে নির্দেশ পাঠিয়ে কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে একসঙ্গে একটির বেশি বাইক ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষ প্রয়োজনে একাধিক বাইক যদি ব্যবহার করতেও হয়, সে ক্ষেত্রে পুলিশের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিতে হবে।
বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের বাইক-বাহিনী সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে বলে বিরোধী দলগুলি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল। একাধিক প্রচারসভাতেও বাইক-বাহিনীর প্রসঙ্গ তুলেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ অন্য বিরোধী নেতারা। ভোটের প্রচারে যথাযথ নিরাপত্তা চেয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে যে মামলা করা হয়, তাতেও বাইক-বাহিনীর হুমকির অভিযোগ ছিল। হাইকোর্ট বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে নির্দেশ দেয়। শনিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবের ওই বৈঠক হয়। সেখানেই বাইক-বাহিনী নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে কমিশন সূত্রের খবর।
রবিবার জেলাশাসকদের কাছে বাইক-বাহিনী নিষিদ্ধ করার নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কমিশনের একটি সূত্র এ দিন বলেন, প্রচারপর্বে রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে পরিমাণ সশস্ত্র বাহিনী চেয়েছিল, এমনিতেই তা পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় বাইক-বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে। অবাধ ও সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।
কমিশনের এই নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “নির্বাচনী আচরণবিধি কোনও আইন নয়। উনি (কমিশনার) নতুন কী আচরণবিধি লাগু করেছেন, নির্দেশিকাটি দেখলে তা বুঝতে পারব। তার পরে প্রতিক্রিয়া দেব।” |
নিরাপত্তার পাঁচ দফা |
• অনুমতি ছাড়া প্রচারে একাধিক মোটরবাইক নিয়ে মিছিল নয়। |
• সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ এলাকার ভোটার না হলে ভোটের দিন সেখানে থাকা যাবে না |
• কোনও দলের সভাপতি ভোটের দিন এলাকায় থাকবেন, কিন্তু ঘুরতে পারবেন না |
• মাওবাদী হানার জেরে বীরভূমের ডিএম-এসপিকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা মোতায়েনের নির্দেশ |
• সন্ত্রাসমুক্ত ভোট করতে বিশেষ নজর দিতে হবে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনকে |
|
বাইক-বাহিনী নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট করতে নির্বাচন কমিশন খুবই ভাল নির্দেশ দিয়েছে। সারা দিন বিভিন্ন এলাকায় শাসক দলের বাইক-বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। রাতে মাথায় কালো কাপড় বেঁধে মদ্যপ অবস্থায় বাইক-বাহিনী বাড়ি বাড়ি গিয়ে চড়াও হচ্ছে। অনেক অভিযোগ দায়ের হলেও আজ পর্যন্ত পুলিশ কাউকে ধরেনি।” তবে শাসক দল কমিশনের এই নির্দেশিকা মেনে চলবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মানসবাবু।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিএমও। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, “গ্রামে গ্রামে মূলত বাইকবাহিনীর মাধ্যমেই তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে। কোথাও তারা অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে, কোথাও অস্ত্র বাইরে না এনেও ভয় দেখাচ্ছে। এই অবস্থায় কমিশনের নির্দেশিকাকে অবশ্যই স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু এটা যাতে কার্যকর হয়, সেটা দেখবে কে?”
সেলিমের অভিযোগ, পুলিশের একটা বড় অংশ পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। “স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী প্রতিদিন কমিশনকে হুমকি দিচ্ছেন। তাই এই নির্দেশিকা কার্যকর করার জন্য কড়া নজরদারি প্রয়োজন।”
কমিশনের একটি সূত্র এদিন বলেন, নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে জেলাশাসকেরা কমিশনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। তাই জেলাশাসকেরা কমিশনের নির্দেশ না মানলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। কমিশনের নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না পর্যবেক্ষকদের সে ব্যাপারে নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। শনিবারের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, প্রচারের সময় রাজ্য ব্লক প্রতি ২১ জন করে সশস্ত্র বাহিনী দেবে। কিন্তু প্রথম দফার ভোট প্রচারের সময়সীমা শেষ হওয়ার এক দিন আগে পর্যন্ত কোনও বাহিনী আসেনি বলে কমিশনের সচিব তাপস রায় অভিযোগ করেন।
বাইক-বাহিনী নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, সেই তৃণমূল কংগ্রেস কী বলছে? নির্দেশিকা খতিয়ে দেখে তবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলেছেন মুকুলবাবু। তবে এই নির্দেশ যে তাদের মনঃপূত নয়, তা বোঝাতে দলের এক শীর্ষনেতার যুক্তি, “ঘরে ঘরে আগে সাইকেল ছিল। এখন সেখানে মোটরসাইকেল হয়েছে। ফলে মানুষ মোটরসাইকেল নিয়ে প্রচারে বেরোবে, সেটাই স্বাভাবিক।”
|
ভোটে দুই জেলায় নদী পেরোতে হাতি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পঞ্চায়েত ভোটে হাতি ব্যবহার করতে পারবে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায় সোমবার জানান, ভোটের কাজে খরস্রোতা নদী পারাপারের জন্য প্রয়োজনে হাতি ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের জেলাশাসক। কারণ, বর্ষায় পাহাড়ি নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় নৌকা চালানো যায় না। কমিশন ওই দুই জেলাকে হাতি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম দফায় যে ৮টি জেলায় পঞ্চায়েত ভোট হবে, সেগুলির জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা প্রশাসন হাতি ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়। কমিশন সূত্রের খবর, মূলত ভোটকর্মী, ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স পাঠানো ও ফিরিয়ে আনার জন্যই হাতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাতি চাওয়া হবে রাজ্যের বন দফতরের কাছে। তবে হাতির জন্য দৈনিক কত খরচ হবে তা কমিশনের কর্তারা জানাতে পারেননি। |