বিজেপি-বিপদের বার্তা বুদ্ধের
শতবর্ষে ফিরল সেই প্রধানমন্ত্রিত্ব-অস্বস্তি
জীবদ্দশাতেই বলেছিলেন, ‘ঐতিহাসিক ভুল’! প্রয়াণের পরে জ্যোতি বসুর শতবর্ষে এসে সেই প্রধানমন্ত্রী-প্রস্তাবের ভূত ঘাড় থেকে নামল না সিপিএমের! বিরোধী শিবির থেকে প্রশ্ন উঠল। বসুর এক কালের প্রিয় ‘শিষ্য’ও বিতর্ক উস্কে দিলেন। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শততম জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রিত্ব-বিতর্ক ফের সামনে এল। তবে সিপিএমের তরফে বসু শতবর্ষ উদযাপনের সূচনা অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট, রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কেউই অতীতের ‘ক্লোজ্ড চ্যাপ্টার’ খোলার কোনও চেষ্টা করলেন না। বরং, আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে কারাটকে পাশে বসিয়েই বুদ্ধবাবু সেখানে বুঝিয়ে দিলেন, উদারনীতির কংগ্রেসের চেয়ে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি বড় বিপদ!
জ্যোতি বসুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং প্রকাশ কারাট। —নিজস্ব চিত্র।
বসুকে নিয়ে বিতর্কিত অধ্যায়ের কথা সোমবার সকালে প্রথম তোলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ইন্দিরা ভবনের সামনে রমলা চক্রবর্তীর সংস্থা আয়োজিত অনুষ্ঠানে একদা বসু-ঘনিষ্ঠ সোমনাথবাবুর মন্তব্য, “বললেই বিতর্ক হবে! ১৯৯৬ সালে দু’টি বৃহৎ দল ছাড়াই সরকার গঠনের সুযোগ এসেছিল। একাধিক দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। ফের তাঁরা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকেই বামেদের সমর্থক ছিলেন না। কেউ অর্বাচীনও ছিলেন না! কেন তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করা হল না? কেননা সাধারণ শ্রমজীবী ও গরিব মানুষের বন্ধু ছিলেন জ্যোতিবাবু।” বাম নেতৃত্বের দূরদর্শিতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশিই বর্তমান শাসক দলের পরোক্ষ সমালোচনাও বাদ দেননি সোমনাথবাবু।
পরে বিধানসভায় বসু-স্মরণে গিয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রসঙ্গে আর ঢুকতে চাননি সোমনাথবাবু। “সেটা ইতিহাস, আর কিছু বলতে চাই না,” বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে ওই অনুষ্ঠানে ১৯৯৬ সালের প্রসঙ্গ আনেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। দেশের প্রথম সারির দাপুটে রাজনীতিক হয়েও একেবারে জ্যোতিবাবু কী ভাবে নিজের জামা-কাপড় নিজে কাচতেন, নিজেই জুতো পরিষ্কার করতেন, সেই প্রসঙ্গ ঘুরে সৌগতবাবু বলেন, “কমিউনিস্ট উনি, দলই ওঁর কাছে সব ছিল। দলই তাঁকে নেতা করেছিল। সেই দলই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেয়নি! আবার তিনি জ্যোতিবাবু বলেই তার পরে ঐতিহাসিক ভুল বলার পরেও দল কিছু করতে পারেনি!” মঞ্চে তখন উপস্থিত বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র।
বিকালে ভিতরে-বাইরে ভিড়ে-ঠাসা মহাজাতি সদনে সিপিএমের রাজ্য কমিটি আয়োজিত বসু শতবর্ষের অনুষ্ঠানে দলের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু ব্যাখ্যা করেন, জ্যোতিবাবু কী ভাবে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই বুদ্ধবাবু বলেন, “সামনে লোকসভা ভোট। নরেন্দ্র মোদীকে বিজেপি সামনে আনার চেষ্টা করছে।... এক দিকে কংগ্রেসের উদারনীতি। কিন্তু বিজেপি-র উদারনীতির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী! আর এ রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে বিজেপি-র সম্পর্ক। বিজেপি-র জন্য ওদের দরজা খোলা আছে। এটা নতুন বিপদ।” জ্যোতিবাবুর কথা তুলে ধরেই এই বিপদ থেকে এখনই সতর্ক হওয়ার কথা বলেন বুদ্ধবাবু।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে নেমে প্রতিদিন নিয়ম করে রমজান মাসে ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সিপিএম এবং কংগ্রেসকে দায়ী করছেন। তাঁর এই কৌশলকে বানচাল করতে সিপিএমের পাল্টা চাল মোদীর প্রসঙ্গ এনে আগামী দিনে বিজেপি-র জন্য মমতার দরজা খুলে রাখার কথা তুলে ধরা। পাশাপাশিই বুদ্ধবাবুর কথায় স্পষ্ট আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি-র বিপদকে বড় করে তুলে ধরে কংগ্রেস সম্পর্কে নরম মনোভাব নেওয়ার পক্ষপাতী এ রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্ব।
অনুষ্ঠানে শরিক দলের নেতা অশোক ঘোষ, ক্ষিতি গোস্বামী, মঞ্জুকুমার মজুমদার ছাড়াও সিপিএমের অধিকাংশ রাজ্য নেতা উপস্থিত ছিলেন। আমন্ত্রণ পেয়ে এসেছিলেন বামফ্রন্টের বাইরের কিছু বাম দলের প্রতিনিধিরা। মালা দিতে গিয়ে তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি অভিনন্দন পেয়েছেন পিডিএস নেতা এবং জ্যোতিবাবুর এক কালের সহযোগী সমীর পূততুণ্ড। আর ইন্দিরা ভবনের বাইরে অনুষ্ঠানে ছিলেন অশোকবাবু, প্রয়াত বসুর ছায়াসঙ্গী জয়কৃষ্ণ ঘোষ।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.