দাবি নিয়ে প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের
সংখ্যা থাকলে সরাতাম মীরাকে, বললেন মমতা
ক্কর চলছিলই। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, তাঁর ইচ্ছা ছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেকে সরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু আইনের গেরোয় পারেননি। আইনের গেরো সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে সরাতে বিধানসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগে। আমাদের ১৮৫ রয়েছে। আরও ৫-৬ জন থাকলে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে সরিয়ে দিতাম। কংগ্রেস তো আর এখন আমাদের সমর্থন করবে না।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই ব্যাখ্যা অবশ্য মানছেন না সংবিধান বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের অনেকের মতে, বিধানসভায় ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব এনে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে সরানো যায় না। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ বিষয়ে সংবিধানের নির্দেশ খুব স্পষ্ট। ঠিক যে ভাবে হাইকোর্টের কোনও বিচারপতিকে সরাতে চাইলে সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব এনে তা পাশ করাতে হয়, তেমনই রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে সরাতে গেলেও লোকসভায় ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা যেতে পারে। এ ব্যাপারে বিধানসভার কোনও ভূমিকা নেই।”
লালগড়ের সভায় মমতা-শুভেন্দু। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
পঞ্চায়েত নির্বাচন-পর্বের গোড়া থেকেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের দ্বৈরথ চলছে। ভোটের নির্ঘণ্ট থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা, সবেতেই বিতর্ক বেধেছে বারবার। কমিশনের ডাকা সর্বদল বৈঠকেও যায়নি তৃণমূল। গত শনিবার দক্ষিণ বারাসতের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রমজানে ভোট নিয়ে (কমিশন) এক বারও জিজ্ঞাসা করেনি। মানুষকে বলব বদলা নিতে গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে।” তার পরেই এ দিনের মন্তব্য। লালগড়ে এ দিনের প্রথম সভাতেও মমতা বলেন, “নির্বাচন কমিশনারকে আমরা নিয়োগ করিনি। আগের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিয়োগ করেছিলেন। তাঁর কাজের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছিল ওই আমলেই।”
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে মীরাদেবী এ দিন বলেন, “আমি এই সংক্রান্ত সিডি-টা চেয়েছি। নিজে সেটা না দেখে কোনও মন্তব্য করব না।” কমিশনের সচিব তাপস রায়ও বলেন, “আমরা বিষয়টি এখনও জানি না। ফলে, মন্তব্য করব না।”
শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, কমিশনের বিরুদ্ধে সরব তাঁর সরকারের অন্য নেতা-মন্ত্রীরাও। এ দিন আসানসোলে প্রচারে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আদালতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন যে আচরণ করেছে, তা অত্যন্ত স্বৈরতান্ত্রিক, অসৌজন্যমূলক ও অগণতান্ত্রিক।” আর এক মন্ত্রী মদন মিত্র মহাকরণে অভিযোগ করেন, “কমিশনের প্রতিটি আচরণ পক্ষপাতদুষ্ট। কমিশন হচ্ছে ‘ফিমেল জেন্ডার’।” দাঁতনের রোড শোয়ে কমিশন প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে যথাযথ প্রচারিত হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়


আগামী বৃহস্পতিবার জঙ্গলমহলের তিন জেলায় (পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর) পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে এ দিন শেষ লগ্নের প্রচারে এসেছিলেন মমতা। দুপুরে লালগড়ে ও বিকেলে ডেবরায় সভা করেন তিনি। এর আগে জঙ্গলমহলের প্রতিটি সভাতেই মাওবাদীদের কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা। তাঁকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন। তবে সোমবারের সভাতেই প্রথম তাঁকে বলতে শোনা গেল, “শুনছি ওরা নাকি ‘সুইসাইড স্কোয়াড’ করেছে। বলছে, ‘উনি পাবলিকের সঙ্গে মেশেন। তাই সুইসাইড স্কোয়াড দিয়ে ওঁকে মার্ডার করো।’ আমাকে, মুকুলকে, শুভেন্দুকে মারবে! কাপুরুষের দল। আমি বারবার জঙ্গলমহলে আসব। একটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুন করে কণ্ঠরোধ করা যাবে না।” মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলির সীমানা ‘সিল’ করারও দাবি তোলেন মমতা। বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের দেখা উচিত, কেন বিহার, ঝাড়খণ্ড দিয়ে আমাদের রাজ্যে লোক ঢুকছে। কেন্দ্রের বর্ডারগুলো সিল করে দেওয়া উচিত।” জঙ্গলমহলের শান্তি বিঘ্নিত করতে বিরোধী দলগুলি মাওবাদীদের সঙ্গে ‘আঁতাঁত’ করছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন।
সপ্তাহ দেড়েক আগেই জঙ্গলমহলে একাধিক প্রচারসভা করে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তবে লালগড় না ছুঁলে বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় না। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকা জঙ্গলমহলের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। মমতার রাজনৈতিক কেরিয়ারেও লালগড়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সোমবার দুপুরে স্থানীয় সজীব সঙ্ঘের মাঠে ছিল সভার আয়োজন। বিকেলে ডেবরা বাজারের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দ্বিতীয় সভাটি হয়। দু’জায়গাতেই নাম করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কটাক্ষ, “বুদ্ধবাবু, যুদ্ধবাবু আবার ঘুষি পাকাচ্ছে। বলছে করে নেব, দেখে নেব, বুঝে নেব। দেখার কী আছে? ৩৫ বছরে মানুষ অনেক দেখেছে। অনেক বুঝেছে।” দু’টি সভাতেই হাজির ছিলেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়-সহ জেলার নেতারা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.