দক্ষিণ বারাসতে নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া কথা ভাবছে ক্ষুব্ধ নির্বাচন কমিশন। রবিবারই জেলা প্রশাসনের কাছে ওই জনসভার সিডি চেয়ে পাঠিয়েছে কমিশন। কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই সিডি খতিয়ে দেখার পরে তারা সিদ্ধান্ত নেবে, আদালতে যাবে কি না। রবিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে বলেন, “আমরা সিডি চেয়ে পাঠিয়েছি। সিডি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রমজানে ভোট নিয়ে (কমিশন) এক বারও জিজ্ঞাসা করেনি। গায়ের জোরে যা ইচ্ছে করছে। এর বদলা নেব। মানুষকে বলব বদলা নিতে গণতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে।” রবিবার কমিশনের পদস্থ আধিকারিকেরা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, “দক্ষিণ বারাসতের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য খুবই দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্য অনভিপ্রেতও।” কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার সিডি চেয়েছি।”
কমিশনের প্রতি তৃণমূল নেতাদের আক্রমণ অবশ্য রবিবারেও বন্ধ হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতনে প্রচারে গিয়েছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁর সেই রোড শো-তে ছিল প্রায় ৮০০ মোটর বাইক, হাজার পনেরোশো সমর্থক। প্রচার গাড়িতে মদনের পাশে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শৈবাল গিরি। সংখ্যালঘু এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় মদনবাবু নিজেই স্লোগান তোলেন ‘রমজান মাসে নির্বাচন করলে কেন, মীরা পাণ্ডে জবাব দাও’। পরে বলেন, “৩০ তারিখের পর নির্বাচন কমিশন নিজেই লাগাম পড়ে যাবে। হাতে বালা পড়ে যাবে। নিজেকে বন্ধনে জড়িয়ে নেবে। আর মীরা পাণ্ডে যাঁদের পরামর্শে চলছেন, ৩০ তারিখের পর তাঁদের পরামর্শ নিতে গেলে দেশের বাইরে যেতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি মদন মিত্রের এই বক্তব্যের সিডিও চেয়ে পাঠিয়েছে কমিশন।
রমজান মাসে ভোট নিয়ে শাসক দল যে ভাবে নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করছে, তা নিয়ে এ দিন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে প্রশ্ন করা হয়। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যপাল বলেন, “এটা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই হয়েছে। সেখানে আমিই বা কে, নির্বাচন কমিশনই বা কে?” মদন মিত্ররা যা বলছেন, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যপালের মন্তব্য, “যা হচ্ছে সব শুনছি।” তার পরে একটু হেসে বলেন, “এটা তো গণতন্ত্রের পক্ষে ভাল।”
রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষায় আক্রমণ করছেন, তার নিন্দায় এ দিন সরব হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, “যে ভাষায় উনি কমিশনের মতো সাংবিধানিক সংস্থা সম্পর্কে বিষোদ্গার করছেন, তা উদ্বেগের। এমন ভাষা কোনও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে থেকে কাম্য নয়! ওঁকে অনুরোধ করব, এ কাজ থেকে বিরত হোন। একটু সুস্থ মানুষের মতো কথা বলুন!” প্রশাসনিক প্রধান হয়েও নাগাড়ে কমিশনকে আক্রমণ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও মান্নানের দাবি।
হাওড়ার বাগনানে এ দিন পঞ্চায়েতের নির্বাচনী সভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, তৃণমূল পঞ্চায়েত ভোট করতেই চাইছিল না। “সুপ্রিম কোর্ট যখন পাঁচ দফায় ভোট করার জন্য নির্দেশ দিল, এখন মাঠেঘাটে ঘুরে নতুন কাঁদুনি গাইছেন যে, রমজান মাসে ভোট হবে কী করে?” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “আমরা সাত বার ভোট করেছি। আমাদের আমলে এক বারও রমজান মাসে ভোট হয়নি।” কমিশনের কথা মেনে ঠিক সময়ে ভোট করলে এই সমস্যা এড়ানো যেত বলেও বুদ্ধবাবু ফের যুক্তি দিয়েছেন। |