আনুষ্ঠানিক ভাবে আজ, সোমবার তাঁর শততম জন্মদিন থেকেই শুরু হচ্ছে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মশতবর্ষ পালনের বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠান। জন্মদিনে শহর জুড়ে থাকছে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক নানা অনুষ্ঠান। দলের তরফে শতবর্ষের সূচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য কলকাতায় আসছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। প্রয়াত প্রাক্তনের জন্মদিনে অবশ্য শহরে থাকছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে ঈষৎ গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
পূর্বনির্ধারিত নির্বাচনী কর্মসূচি মেনে রবিবার সন্ধ্যাতেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী চলে গিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে। লালগড়ে আজ তাঁর নির্বাচনী সমাবেশ। শহরে না-থাকায় বিধানসভা বা মহাকরণ, কোথাওই জ্যোতিবাবুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিত থাকা হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে মহাকরণে কী অনুষ্ঠান হবে, তা স্পষ্ট নয়। বিধানসভার আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে বিধানসভার অনুষ্ঠানে থাকবেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। |
জ্যোতি বসুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সেজে উঠছে ইন্দিরা ভবন চত্বর। ছবি: শৌভিক দে |
মমতার রাজনৈতিক জীবনের গোড়ার দিকে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবুকে তিনি প্রবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবেই দেখতেন। মমতার নেতৃত্বে যুব কংগ্রেসের ‘মহাকরণ অভিযানে’ পুলিশের গুলিতে ১৩ জনের মৃত্যু বসুর আমলেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে সরে যাওয়ার পরে বসুর সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন বিরোধী নেত্রী মমতা। তাঁর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ছুটে গিয়েছেন সল্টলেকের হাসপাতালে। বসুর শেষকৃত্যের দিন বিধানসভায় সনিয়া গাঁধী, লালকৃষ্ণ আডবাণী থেকে শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের অনুষ্ঠান অবশ্য এড়িয়েই গিয়েছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা। শহিদ মিনার ময়দানে স্মরণসভার দিনও ছিলেন দিল্লিতে।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মহাকরণে নানা ব্যক্তিত্বের জন্মদিন পালনের রেওয়াজ চালু করেছেন মমতাই। গত সোমবারই যেমন বিধানচন্দ্র রায়ের ছবিতে মালা দিয়েছেন। অর্ধদিবস ছুটিও ঘোষণা করেন। সেই মহাকরণেই দেশে রেকর্ড-সময়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বের নজির সৃষ্টিকারী বসুর স্মরণে অনুষ্ঠান ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে সরকারি মহলে। রাজ্যের এক প্রথম সারির মন্ত্রীর কথায়, “এটা তো কোনও দলের ব্যাপার নয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে স্মরণ। বিরোধী থাকার সময় ফুল নিয়ে যেতাম। সরকারে গিয়ে তাঁকে একেবারে এড়িয়ে গেলে ভাল দেখাবে না। জানি না মহাকরণে কী হবে।” শেষ পর্যন্ত কোনও বর্ষীয়ান মন্ত্রীকে মহাকরণে বসুর ছবিতে শ্রদ্ধা জানানোর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
বিধানসভায় গত বার ছুটির দিনে বসুর জন্মদিন উদযাপন না-হওয়ায় বিতর্ক বেধেছিল। এ বার বিধানসভার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত লোকসভা ও বিধানসভার দুই প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ও হাসিম আব্দুল হালিম। জ্যোতিবাবুর ‘শিষ্য’ সোমনাথবাবুকে বসু-স্মরণে একেবারে উপেক্ষা করেনি সিপিএম। তাঁর পুরনো দলের পানিহাটি জোনাল কমিটির আয়োজনে বসুর শতবর্ষের সভায় বক্তা হিসাবে আমন্ত্রিত সোমনাথবাবু।
ইন্দিরা ভবনের সামনে প্রতি বছরের মতো আজ সকালে অনুষ্ঠান করবে বসুর আর এক প্রিয় ‘শিষ্য’, প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তীর সংস্থা। আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠক সেরে বিকালে মহাজাতি সদনের অনুষ্ঠানে মুখ্য বক্তা কারাট এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সমাবেশের ২৪ ঘণ্টা আগেই বসু-স্মরণের সুর কিছুটা বেঁধে দিয়েছেন বুদ্ধবাবু। ভোটের প্রচারে বেরিয়ে বলেছেন, “এই পঞ্চায়েত আমরা গড়েছি। ১৯৭৭ সালে নির্বাচন জেতার পরের বছরই পঞ্চায়েত নির্বাচন করি। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, মহাকরণ থেকে সরকার চলবে না। গ্রামের সরকার
চালাতে হবে।” |