চার ঘণ্টা ধরে ভোট-প্রচারে এলাকায় দাপাচ্ছে প্রায় ৭০০ মোটরবাইক। নির্বাচনের প্রচারে মোটরবাইক বাহিনী ব্যবহার করা নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও মঙ্গলবার এ দৃশ্য দেখলেন পুরাতন মালদহের বাসিন্দারা। সৌজন্যে কংগ্রেস। রাজ্যের অন্যত্র একই বিধি ভাঙায় অভিযুক্ত শাসক তৃণমূল ও বিরোধী সিপিএম।
উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের নীলগঞ্জের কাছে প্রচারে গিয়ে তৃণমূলের মোটরবাইক বাহিনী রাজ্যের প্রাক্তন ত্রাণমন্ত্রী তথা বাম নেতা মোর্তজা হোসেনকে হেনস্থা এবং দুই বাম নেতাকে মারধর করে বলে অভিযোগ। বর্ধমানের আউশগ্রামে আবার মোটরবাইক নিয়ে প্রচার করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন এক নেতা-সহ তৃণমূলের চার জন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে একমাত্র আউশগ্রামের ঘটনা নিয়েই অভিযোগ জমা পড়েছে। |
কমিশনের নিষেধ সত্ত্বেও মোটরবাইক নিয়ে মিছিল হচ্ছে কেন? তৃণমূল নেতা মুকুল রায় বলেন, “কমিশনের নির্দেশিকা হাতে পাইনি। নির্দেশিকা হাতে পেলে দলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তাঁর বক্তব্য, বাংলার মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটেছে। আগে গ্রামের বাড়িতে সাইকেল থাকত। এখন অনেকেরই মোটরবাইক রয়েছে। অনেকেই তা নিয়ে মিছিলে আসেন।
তবে ভোটের সময় মোটরবাইক বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বাম আমলে বিরোধীরা সিপিএমের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ তুলত। তৃণমূল আমলে এসে অভিযোগকারী বদলে হয়েছে সিপিএম-কংগ্রেস। হাইকোর্টে এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের এক বৈঠকে বাইক-বাহিনী নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত হয়। বলা হয়, মিছিলে একটির বেশি মোটরবাইক রাখা যাবে না। রবিবার জেলাশাসকদের কাছে পাঠানো হয় সেই নির্দেশ। |
কিন্তু সোমবার বেলা ১০টায় পুরাতন মালদহে স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ হালদারের (অর্জুন) নেতৃত্বে মোটরবাইক-মিছিল শুরু হয়। নাগেশ্বরপুর, ছাতিয়ান মোড়, মাধাইপুর, সুজাপুর, ভাটরা হয়ে চার ঘণ্টা ধরে এলাকায় দাপিয়ে মিছিল ফুরোয় সাহাপুর হাইস্কুলের পাশের আমবাগানে। বিধায়কের দাবি, “বিডিও-র অনুমতি নিয়েই মিছিল করেছি।” তিনি জানান, র্যালিতে ৬৬১টি মোটরবাইক ও ২০০টি সাইকেল ছিল। কিন্তু পুলিশ এবং বিডিও কী ভাবে ওই অনুমতি দিলেন সে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। বিডিও দুলেন রায় দাবি করেছেন, কমিশনের নির্দেশ পাওয়ার আগেই মালদহ থানার আইসি-র ছাড়পত্রের ভিত্তিতে ওই মোটরবাইক মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়। মালদহ থানার আইসি আশিস দেব জানান, কমিশনের নির্দেশ মেলার অনেক আগে ওই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় জানান, সংশ্লিষ্ট আইসি-র কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
এ দিনই সকালে গোটা পনেরো মোটরবাইকে দলীয় পতাকা নিয়ে খড়্গপুরের গোপালিতে সিপিএম মিছিল করে। সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই তাঁরা ওই মিছিল করেছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য, মিছিলের অনুমতি ছিল, মোটরবাইক মিছিলের নয়। |
এই দু’টি ঘটনা ছাড়া রাজ্যের অন্যত্র মোটরবাইক-বিধি ভাঙায় আঙুল উঠেছে শাসক দলের দিকেই। বর্ধমানের আউশগ্রামে এ দিন সকালে প্রায় ৬০টি মোটরবাইক নিয়ে তৃণমূল কর্মীরা প্রচার করছিলেন বলে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ধাওয়া করে স্থানীয় তৃণমূল নেতা মৃণালকান্তি রায়-সহ চার জনকে ধরে ও পাঁচটি মোটরবাইক আটক করে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, “আউসগ্রাম থেকে অভিযোগ পেয়েই জেলাশাসককে হস্তক্ষেপ করতে নির্দেশ দেয় কমিশন। পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করেছে।” বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “কোথাও একাধিক মোটরবাইক নিয়ে প্রচার করতে দেখলেই সব থানাকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” বর্ধমানের রানিগঞ্জ এবং জামুড়িয়াতেও শাসক দল মোটরবাইক নিয়ে প্রচার চালায় বলে অভিযোগ। জামুড়িয়ার মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের দাবি, মিছিল থেকে তাদের উপরেই হামলা হয়েছে।
বারাসতে ‘আক্রান্ত’ ফব নেতা মোর্তাজা হোসেনের দাবি, “একে তো তৃণমূল বিধি ভেঙে মোটরবাইক মিছিল করছে, আবার তা থেকে হামলাও করছে!” অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “আমরা ও রকম কোনও মিছিলই করিনি। বামেরা নিজেরাই মারপিট করেছে।”
কমিশনের নির্দেশ উপেক্ষা করে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, বেলদা, শালবনি, চন্দ্রকোনা, দাসপুর, গোয়ালতোড়, কেশপুর, বাঁকুড়ার জয়পুর, কোতুলপুর এবং পুরুলিয়ার বরাবাজারে মোটরবাইক মিছিল করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কার অনুমতিতে মিছিল হলো, খোঁজ নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। |
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল ও মনোজ মুখোপাধ্যায়
|