চেনেন কেবল অধিনায়ক মেহতাব হোসেনকে। তাও একটি ম্যাচের অভিজ্ঞতার নিরিখে।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান সম্পর্কে সে ভাবে কোনও ধারণা নেই।
লাল-হলুদ সমর্থক, কর্তা, মায় সাংবাদিক দেখলেই হাত জোড় করে নমস্কারের ভঙ্গিতে ভাঙা হিন্দিতে বলছেন, ‘নমস্কার’ বা ‘শুকরিয়া’।
দলের গোলমেশিন চিডি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য ইন্টারনেটের সৌজন্যে ।
আর কলকাতায় পা দিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যাইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের আবেগের বিস্ফোরণ দেখে মেহতাব, মোগাদের নতুন কোচ ব্রাজিলীয় মার্কোস ফালোপার অকপট স্বীকারোক্তি, “ইস্টবেঙ্গল ভারতের কোরিন্থিয়ান্স।”
তবে অর্ণব-ওপারা-সুয়োকাদের মাথায় চটজলদি নেইমারদের ‘হোগা বোনিতো’ চাপিয়ে দিতে চান না লাল-হলুদের দ্বিতীয় ব্রাজিলীয় কোচ। বরং তেলে সান্তানা, রিনাস মিশেলস, ত্রাপাতোনি-এর ভক্ত চলতি মরসুমে ইস্টবেঙ্গলকে সাফল্য দিতে চান ভারতীয় ঘরানার ফুটবল খেলেই। বলছেন, “একটা দল কোনও স্টাইলে বা ফর্মেশনে খেলবে তা নির্ভর করে পরিশ্রম এবং ফুটবলারদের দক্ষতায়। চাইলেই তো আর বার্সেলোনা-ব্রাজিলের মতো নেইমার মিলবে না।” আর তার প্রথম ধাপেই ফালোপার পাখির চোখ এএফসি কাপ কোয়ার্টার ফাইনাল। |
সাম্বার দেশ থেকে লাল-হলুদে। মঙ্গলবার শহরে এলেন ফালোপা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
এ দিন বিকেলে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে সাংবাদিক সম্মেলন করার ফাঁকেই ফালোপা বললেন, “আগের কোচ ভাল কাজ করেছেন। আমার কাজ আরও ভালও করা। সেপ্টেম্বরে এএফসি কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইন্দোনেশিয়ার সেমেন পাডাং-এর বিরুদ্ধে জিততে হবে যে কোনও মূল্যে।” কোচের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক মেহতাবও বলছেন, “কারও সঙ্গে তুলনা নয়। তবে নতুন কোচ খুব মিশুকে। ওঁর এই অমায়িক ব্যবহার দলের কাজে লাগতে পারে।”
প্রথম দিন ক্লাব তাঁবুতে এসেই কথায় কথায়, ফালোপা বুঝিয়ে দিয়েছেন, আগের কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের মতো তিনিও জয় চান যে কোনও মূল্যে। আর তার জন্য শৃঙ্খলা কিংবা অনুশীলনে ‘নো কম্প্রোমাইজ’। ট্রেভর মর্গ্যান সন্তুষ্ট ছিলেন না ইস্টবেঙ্গল মাঠ নিয়ে। পেলে, রিভেলিনোদের মাস্টার্স দলকে কোচিং করানো ফালোপার তা হলে এই পরিকাঠামোয় কী হবে? প্রশ্ন উঠতেই ব্রাজিলীয় কোচের মন জয় করা উত্তর, “যে কোনও পরিকাঠামোতেই ভাল ফল করানোটা আমার ইউএসপি।”
পরনে নীল টি শার্ট এবং জিন্স। ছেলে আমেরিকো (ইনিই সামলাবেন ইস্টবেঙ্গলের ফিটনেস এবং গোলকিপার কোচের দায়িত্ব) এবং স্ত্রীকে নিয়ে সকাল সাড়ে ন’টাতেই শহরে ঢুকে পড়েছিলেন এই ব্রাজিলীয় কোচ। সাওপাওলো, জোহানেসবার্গ, মুম্বই ঘুরে কলকাতা। বিমানবন্দরেই নতুন কোচের হাতে লাল-হলুদ পতাকা তুলে দিয়েছিলেন হাজির ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। যা দেখে অবাক ফালোপা বলে ওঠেন, “এত আবেগ!” বিকেলে ফালোপা যার পালটা দিলেন ইস্টবেঙ্গল সচিবকে ব্রাজিলের জার্সি উপহার দিয়ে। দুপুরটা সল্টলেকে এফ ই ব্লকের বাড়িতে (আপাতত এটাই কলকাতায় তাঁর আস্তানা) কাটিয়ে বিকেলেই ছেলেকে নিয়ে ক্লাবে চলে আসেন লাল-হলুদের নয়া কোচ। ঘুরে দেখেন মাঠ, ক্লাব তাঁবু।
সোমবার থেকেই নেমে পড়বেন অনুশীলনে। তার পর ২১ জুলাই থেকে কল্যাণীতে আবাসিক শিবির। এমন ইঙ্গিতই এ দিন দিয়েছেন ব্রাজিলীয় পিতা-পুত্র প্রশিক্ষক জুটি।
গত তিন মরসুমে দেশের সব ট্রফিই ট্রেভর মর্গ্যানের কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গলে ঢুকলেও অধরা থেকে গিয়েছে আই লিগ। এ বার কি সেই আক্ষেপ মিটবে? ফালোপা বলছেন, “ফেড কাপ, আই লিগ দু’টোই চাই। সেই লক্ষ্যেই প্রতিদিন নিজেদের পারফরম্যান্স আরও ধারালো করতে হবে।”
|
বললেন ফালোপা |
• জাতীয় এবং এশীয় স্তরে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স যথেষ্ট ভাল। এই ক্লাবের কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পারাটা যথেষ্ট সম্মানের।
• মোহনবাগান! (পাশ থেকে সচিব ততক্ষণে বোঝাতে শুরু করেছেন দুই ক্লাবে ‘গোলাপের যুদ্ধ’-র ঐতিহ্য। সাংবাদিকদের মধ্য থেকে ভেসে এল বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ। শুনে মুচকি হাসি) ভাল। আমি ইস্টবেঙ্গল নিয়েই ভাবতে চাই। তবে মোহনবাগানের জন্যও শ্রদ্ধা থাকবে।
• একটা দল কোন স্টাইলে বা ফর্মেশনে খেলবে তা নির্ভর করে পরিশ্রম এবং ফুটবলারদের দক্ষতায়। চাইলেই তো আর বার্সেলোনা-ব্রাজিলের মতো নেইমার মিলবে না।
• সেপ্টেম্বরে এএফসি কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইন্দোনেশিয়ার সেমেন পাডাং-এর বিরুদ্ধে জিততে হবে যে কোনও মূল্যে।
• যে কোনও পরিকাঠামোতেই ভাল ফল করানোটা আমার ইউএসপি।
• ফেড কাপ, আই লিগ দু’টোই চাই। সেই লক্ষ্যেই প্রতিদিন নিজেদের পারফরম্যান্স আরও ধারালো করতে হবে। |
|