নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ইস্টবেঙ্গলে ছয় বছর পর ফিরছে ব্রাজিলীয় জামানা।
কার্লোস পাহিরার পর ফের লাল-হলুদ ব্রিগেডের কোচিং করাতে আসছেন আর এক ব্রাজিলীয়মার্কোস ফালোপা। ইস্টবেঙ্গল তাঁকে সরকারিভাবে কোচ নির্বাচিত করার কয়েক ঘণ্টা পর ব্রাজিলে তাঁকে ফোনে ধরা হলে ফালোপা বলে দিলেন, “ইস্টবেঙ্গলকে সাফল্য দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই ভারতে যাচ্ছি। দায়িত্ব পেয়ে আমি খুশি। শুনেছি গত কয়েক বছরে ওই ক্লাব ভারতে প্রচুর সাফল্য পেয়েছে। সেই সাফল্য ধরে রাখা এবং আরও উপরে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য হবে আমার।” তিনি জানিয়ে দেন, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই কলকাতায় আসতে চান। দ্বিতীয় সপ্তাহেই চিডি-মোগাদের নিয়ে শুরু করতে চান প্রি সিজন প্র্যাক্টিস। ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করিয়ে যাওয়া কার্লোসের জীবনপঞ্জির সঙ্গে চৌষট্টির ফালোপার বর্ণময় কোচিং জীবনের অবশ্য আকাশ-পাতাল তফাত। ব্রাজিল মাস্টার্স জাতীয় দলের প্রাক্তন সহকারী কোচ ছিলেন ফালোপা। যে মাস্টার্স দলে অবসর নেওয়ার পর পেলে-জিকো-সক্রেটিসের মতো প্রাক্তন তারকারা খেলেন। পতুর্গাল বিশ্বকাপ দলের প্রাক্তন সহকারী কোচ ম্যানুয়েল গোমস এতদিন ছিলেন ভারতে আসা সেরা বিদেশি কোচ। চার্চিল ব্রাদার্সের কোচিং করতে দু’বছর আগে ভারতে এসেছিলেন লুইস ফিগোদের কোচ ম্যানুয়েল। ফালোপার যা জীবনপঞ্জী তা-ও বেশ চমকপ্রদ। ফিফার ইনস্ট্রাকটর হিসেবে বিশ্বের একশোটি দেশে কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে ফিফার প্রতিনিধি হয়ে ব্রাজিল ইউথ ডেভেলপমেন্টের দেখাশুনা করছেন ফালোপা। তাঁর দেশ এবং ক্লাব দলের কোচিং জীবন চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। মায়ানমার জাতীয় দলের কোচিং করানোর পাশাপাশি ক্লাব পর্যায়ে ব্রাজিলের স্যান্টোস, পালমেইরাস ছাড়াও সৌদি আরব, বাহারিন, কাতার এবং জাপানে কোচিং করিয়েছেন। এশীয় ক্লাবগুলিতে কোচিং করানোর সুবাদে ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে ধারণা আছে তাঁর। ব্রাজিল এবং ইতালির যৌথ নাগরিকত্ব রয়েছে ফালোপার। ইতালিতেও কোচিং করিয়েছেন তিনি।
বুধবার বিকেলে ক্লাব তাঁবুতে সাংবাদিক সম্মেলন করে ফালোপার নাম কোচ হিসেবে ঘোষণা করেন ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার। “ফালোপার জীবনপঞ্জী আমাদের পছন্দ হয়েছে। আর্থিক দিক থেকেও সাধ্যের মধ্যে তাঁকে আমরা পেয়েছি। সে জন্যই ফালোপাকে পরের মরসুমের জন্য কোচ বাছা হয়েছে।” কোচের নাম ঘোষাণার সময় সচিবের পাশে ছিলেন সভাপতি প্রণব দাশগুপ্তও। ফালোপার সঙ্গে আর্থিক চুক্তির ব্যাপারে যাঁর অবদান রয়েছে। |
নাম মার্কোস ফালোপা
জন্ম ২ এপ্রিল, ১৯৪৯
কোচিং লাইসেন্স উয়েফা প্রো কোচিং লাইসেন্স রয়েছে বর্ষীয়ান এই কোচের। এ ছাড়াও কোচিংয়ে ফিফার টেকনিক্যাল ইনস্ট্রাকটর।
যে সব উল্লেখযোগ্য দলে কোচিং করিয়েছেন ব্রাজিল মাস্টার্স ন্যাশনাল টিম (১৯৮৬-৮৮), পালমেইরাস (১৯৯০), ওমান যুব দল (২০০৫-০৬), মায়ানমার জাতীয় দল (২০০৭-০৯)। টিডি হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন স্যান্টোস, ব্রাজিল (১৯৯৪-৯৫), দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দল (২০০২-০৪)। |
|
ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের ছেড়ে যাওয়া জায়গায় আসা চিডি-মেহতাব-মোগাদের নতুন কোচ ফালোপা ইংরেজি সহ অন্তত পাঁচ-ছ’টি ভাষায় কথা বলতে পারেন। প্রণববাবু বললেন, “ফালোপাকে বেছে নেওয়ার পিছনে ভাষা জানার ব্যাপারটাও একটা কাজ করেছে।” এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়ে দেওয়া হয়, ফালোপার সঙ্গে তাঁর ছেলে আমেরিকোও আসছেন। তিনি হবেন ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার ও ফিটনেস কোচ। ফলে গত বারের গোলকিপার কোচ অতনু ভট্টাচার্যকে আর দেখা যাবে না লাল-হলুদে। কিন্তু অন্য সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরী কি থাকছেন? ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “নতুন কোচ কি চান সেটা জেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” শুরু থেকেই কোচ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন ফালোপা। কিন্তু তাঁর সঙ্গে চুক্তি পাকা হচ্ছিল না অন্য কারণে। ফিফার প্রতিনিধি হয়ে কাজ করবেন বলে তিনি মাঝ মরসুমে দেড় মাস ছুটি চাইছিলেন। সেটা মানতে চাননি ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রতবাবু দাবি করলেন, “ফালোপা আমাদের পছন্দ ছিলই। কিন্তু দেড় মাসের ছুটির ব্যাপারটা আমরা মানতে চাইনি। সে জন্যই একসময় পিছিয়ে এসেছিলাম। কারণ, এএফসি কাপে ভাল ফল করার জন্যই আমরা চেষ্টা করছি। দল গড়ছি। কিন্তু গত শনিবার ফালোপা জানান ফিফার থেকে তিনি ছুটি পেয়ে গেছেন। ফলে সমস্যা মিটে যায়।”
|