ক্রীড়ামন্ত্রী ব্যস্ত বেঙ্গল কাপ নিয়ে
পাইকা’র টাকা বন্ধ, বন্ধ সব খেলার শিবির
ঞ্চায়েত স্তরে খেলাধুলা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র প্রতি বছর যে পাঁচ কোটি টাকা দেয় তার হিসাব দেয়নি রাজ্য ক্রীড়া দফতর। ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে ‘পাইকা’ প্রকল্প।
নানা অনুষ্ঠান করে ক্লাবগুলিকে বা ঘনিষ্ঠ ক্রীড়াবিদদের লাখ লাখ টাকা বিলনো হচ্ছে। অথচ প্রতিভাবান খেলোয়াড় তুলে আনার জন্য গ্রামে গ্রামে রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদের যে ৮৯টি ক্যাম্প ছিল তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে টাকার অভাবে। জুটছে না খেলোয়াড়দের খাবারের পয়সা। দেনা প্রায় ৯২ লাখ।
যাঁদের মাইনে দিতে সরকারের খরচ হয় লাখ লাখ টাকা, ক্রীড়া পর্ষদের সেই ৪২ জন কোচ বসে বসে মাইনে পাচ্ছেন। শিবির বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কোনও কাজ নেই তাদের। বলারও কেউ নেই।
রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদকে এড়িয়ে তৈরি হয়ে গিয়েছে রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমির কমিটি। ক্রীড়া পর্ষদের মিটিং দু’বছরে হয়েছে মাত্র দু’টি। খাতায়-কলমে দাবি করা হচ্ছে ক্রীড়া পর্ষদের সভায় অনুমোদন হয়েছে অ্যাকাডেমি। অথচ কোন মিটিং-এ অ্যাকাডেমির কমিটি হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
গ্রাম-গঞ্জের প্রায় আড়াই হাজার প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড়, শিবির ও কোচেদের জন্য বরাদ্দ চেক এসেছে ৫০ লাখ টাকার। অভিযোগ, ২২ লাখ টাকা খরচ দেখানো হচ্ছে শিবিরের খাতে। বাকি তিরিশ লাখ টাকা কোথায়, প্রশ্ন তুললে দফতরের সচিবরা একে অন্যকে দেখাচ্ছেন।

টাকার অভাবে গ্রাম-গঞ্জের ফুটবল ক্যাম্প বন্ধ। অথচ অ্যাকাডেমির উদ্বোধন-উৎসবে
ফুটবলারদের ডেকে এনে হচ্ছে হাস্যকর দৌড়। অ্যাকাডেমি কবে চালু হবে কেউ জানে না। —নিজস্ব চিত্র
রাজ্য ক্রীড়া দফতর এবং ক্রীড়ামন্ত্রীর নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এ রকম অসংখ্য অভিযোগে এই মুহূর্তে উত্তাল ময়দান। প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদের কোর কমিটির চেয়ারম্যান সাংবাদিক শ্যামসুন্দর ঘোষ। শ্যামবাবু ছেড়ে দিয়েছেন অ্যাওয়ার্ড কমিটি ও বেঙ্গল কাপ কমিটির চেয়ারম্যানের পদও। বলে দিলেন, “চূড়ান্ত অব্যবস্থা চলছে। টাকার হিসাব নেই। মন্ত্রী বারবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কাজ কিছুই হচ্ছে না।” শোনা যাচ্ছে, ক্রীড়া পর্ষদের কাজকর্ম নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন সুকুমার সমাজপতি, প্রণব রায়-সহ অনেকেই। এর মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দো্যপাধ্যায়ের দাদা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যিনি আবার বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েসনের প্রেসিডেন্ট।
তাঁর দফতরের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। ক্রীড়ামন্ত্রী বললেন, “সব অভিযোগ মিথ্যা। যে কেউ দেখতে চাইলে সব দেখিয়ে দেব। আমি কাউকে কোর কমিটির চেয়ারম্যান করিনি। নিজেরাই সব করেছে। রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদের চেয়ারম্যান তো আমিই। সচিব পর্যায়ের রদবদলের জন্য ক্যাম্পের টাকা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোট মিটলেই টাকা দিয়ে দেব। আর সরকারি টাকার তো অডিট হয়। হিসাব সেখানেই পাওয়া যাবে।”
তবে কবে গ্রাম-গঞ্জের প্রতিশ্রুতিমানদের তুলে আনার শিবিরগুলি ফের চালু হবে তা নিয়ে অবশ্য কিছু বলতে পারেননি মন্ত্রী। স্বীকার করে নিয়েছেন, এখনও হিসাব না দেওয়ায় ‘পাইকা’-র টাকা পাওয়া যায়নি। কিন্তু সরকারের দোষে কেন বঞ্চিত হবে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা? “ওটা সোমা বিশ্বাস দেখছে,” বলে দায় এড়িয়েছেন মদন।
রাজ্যের খেলাধুলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি স্তরে একমাত্র মাধ্যম নেতাজি ইন্ডোরের রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদ। পর্ষদের জন্য একটি বড় কমিটিও আছে। কিন্তু সেই কমিটির সভাই হয় না। কাজও নয়। বাম জমানার ট্র্যাডিশনই চলছে পরিবর্তনের সরকারের ক্রীড়া দফতরে। কোচেরা, কর্মীরা বেশিরভাগই বসে বসে মাইনে নিয়ে যান। ফুটবল-অ্যাথলেটিক্স-জিমম্যাস্টিক্স-টেবল টেনিসের সব কোচিং ক্যাম্প বন্ধ। মন্ত্রী ব্যস্ত উৎসব-সংবর্ধনা-প্রদর্শনী ম্যাচ করে টাকা তুলতে বা খরচ করতে। ছোট খেলাগুলোর কর্তারা প্রতিদিন ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে ধর্ন্য দেন, ক্ষুদিরাম বা নেতাজি ইন্ডোরের পুরনো ঘরের ঠিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। মন্ত্রী ব্যস্ত থাকেন ফুটবল অ্যাকাডেমির নামে কয়েক শো ছেলেকে এনে উৎসব করতে। সেই অ্যাকাডেমি আবার কবে চালু হবে কেউ জানে না। বারবার তারিখ বদল হচ্ছে। বাজেট দেওয়া হয়েছে অবশ্য চল্লিশ লাখ টাকা। সেটা কোথা থেকে আসবে কেউ জানে না।
কিশোরভারতী, রবীন্দ্র সরোবর, হাওড়া ইন্ডোর স্টেডিয়াম-সহ জেলার বহু ফুটবল স্টেডিয়ামের হাল প্রতিদিন খারাপই হচ্ছে। যুবভারতীতে বাসের গ্যারাজ, ডেকরেটারদের জিনিসপত্র ফিরে এসেছে। সে দিকে নজর নেই কারও।
অর্থের অভাবে ফুটবলের শিবির বন্ধের মধ্যেই বেঙ্গল কাপ ফুটবল নিয়ে মেতেছেন তিনি। “লন্ডনে লন্ডন কাপ আছে। হাঙ্গেরি কাপ আছে। আমাদের কিছু ছিল না। তাই বেঙ্গল কাপ করছি,” বলেছেন মদন। কে তাকে বোঝাবে, এই কাপ চালু করলে ফুটবলের কোনও উপকারই হবে না। একটা উৎসবই হবে মাত্র।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.