অ্যান্ডি মারে শুনলাম উইম্বলডন জেতার উত্তেজনায় ম্যাচের শেষে প্লেয়ার্স বক্সে ওর মা-কেই জড়িয়ে ধরতে ভুলে গিয়েছিল। বিলেতের কাগজে নিজে সেটা স্বীকারও করেছে। জুডি মারে শুধু অ্যান্ডির জন্মদাত্রী নন। তাঁর প্রথম কোচও। আক্ষরিক অর্থে ‘টেনিস মাদার’। কিন্তু মারেকে যদি কেউ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে থাকে, তা হলে সেটা ইভান লেন্ডল। পাওয়ার টেনিসের যুগে এখন স্কিলের চেয়েও ফিটনেস দু’জন তুল্যমূল্য দুর্দান্ত প্রতিপক্ষের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়। রবিবার উইম্বলডন ফাইনালে যেটা জকোভিচের সঙ্গে মারের হয়েছিল।
আমি এখনও বলছি, এই মারের সামনে পড়লে সাত বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন ফেডেরার বা সাম্প্রাসও হেরে যেত। সেন্টার কোর্ট যাদের ‘সেকেন্ড হোম’। সাম্প্রাসের সময় ঘাসের কোর্ট এখনকার চেয়ে দ্রুত ছিল। বল হালকা ছিল। সাম্প্রাস মূলত দুর্ধর্ষ সার্ভ অ্যান্ড ভলি খেলত উইম্বলডনে। ফেডেরার-জমানার প্রথম দিকেও উইম্বলডনের কোর্ট এখনকার মতো এতটা স্লো ছিল না। এখন শুধু কোর্টই স্লো নয়। বল-ও আগের চেয়ে ভারী। ফলে সাম্প্রাসের সময়ের মতো তো বটেই। ফেডেরারের প্রথম দিকের মতোও চিপ অ্যান্ড চার্জ উইম্বলডনে আর দেখা যায় না। বলতে গেলে ব্যাপারটা টেনিস থেকে উঠেই গিয়েছে। সাম্প্রাস আর মারে-যুগ সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটো টেনিস-যুগ। |
মারে-জকোভিচ-নাদালরা এখন যে তীব্র গতিতে কোর্টে মুভ করে। ঘাসের কোর্টেও বেসলাইন থেকে যে প্রচণ্ড পাওয়ারফুল রিটার্ন করে, সাম্প্রাস এমনকী ফেডেরারের স্বর্ণযুগে সেই গতি, শটে সেই শক্তি ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা, গত পনেরো-কুড়ি বছরে শীর্ষমানের টেনিস প্লেয়ারদের ফিটনেসে বিরাট পার্থক্য ঘটে গিয়েছে। ফেডেরারও ওর সেরা ফর্মে দুর্দান্ত ফিট ছিল। কিন্তু সেটা অন্য রকম ফিটনেস। যার জোরে বড় ধরনের চোট পায়নি গোটা কেরিয়ারে। কিন্তু রবিবারের মারে বা জকোভিচের মতো মাত্র তিন সেটের ম্যাচে কোর্টে তিন-চার মাইল দৌড়ানোর ফিটনেস ফেডেরারের ছিল না। সাম্প্রাসের সময়ের কথা ছেড়েই দিলাম। সার্ভ-ভলি টেনিসে অত ছোটার দরকারও হয় না। আমাদের খেলোয়াড় জীবনের মতো সাম্প্রাসের সময়েও সেন্টার কোর্টের যে জায়গাটায় প্লেয়াররা বেশির ভাগ ভলি মারত, সেখানটা টুর্নামেন্টের শেষের দিকে সাদা হয়ে উঠত। এখন কোর্টে ভলি মারার জায়গাগুলো সবুজই থাকে। সাদা হয়ে ওঠে বেসলাইনটা।
আমি কেন বলেছি, রবিবারের ফর্মে খেললে মারে হারিয়ে দিত সাম্প্রাস-ফেডেরারকেও, তার আরও একটা ব্যাখ্যা বেসলাইন থেকে যে ভাবে মারে গতকাল ধারাবাহিক প্রচন্ড গতিতে মুভ করে একের পর এক পাওয়ারফুল রিটার্ন করে গিয়েছে, তার সামনে সাম্প্রাস-ফেডেরার নেটে আসার তেমন সুযোগই পেত না। আমার সামান্য টেনিস-বুদ্ধি বলছে, সার্ভ-ভলি খেলা এ রকম দুর্ধর্ষ বেসলাইন রিটার্নের সামনে প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে রাস্তা, প্রতিদ্বন্দ্বীকে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। পাল্টা বেসলাইন থেকেই আরও কঠিন ‘অ্যাঙ্গেল’ তৈরি করে রিটার্ন মারা। আর প্রত্যেকটা ফার্স্ট সার্ভে পয়েন্ট পাওয়ার চেষ্টা করা। |
মারের দুর্দান্ত অলরাউন্ড খেলার জন্য জকোভিচ ফাইনালে খারাপ খেলেছে সাধারণ ভাবে মনে হচ্ছে। কিন্তু আসলে জকোভিচ ওর ‘এ’ গেম না খেললেও যথেষ্ট ভাল খেলেছে। নইলে তিনটের মধ্যে দুটো সেটে ৪-১ আর ৪-২ এগিয়ে থাকত না। বলতে পারেন, মারের দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্সই জকোভিচের ভাল খেলাটাকে খারাপ দেখাতে বাধ্য করেছে।
তা সত্ত্বেও জকোভিচ আমার মতে এখনও বিশ্বের এক নম্বর টেনিস প্লেয়ার। মারে দুই। উইম্বলডন ফাইনাল শেষে প্রকাশিত এটিপি র্যাঙ্কিংও সেটাই বলছে। শুধু গ্র্যান্ড স্ল্যামই তো নয়। পেশাদার ট্যুরে মাস্টার্স, এটিপি অনেক টুর্নামেন্ট বছরভর খেলতে হয়। আর সেখানে জকোভিচ এখনও মারের চেয়ে ধারাবাহিক। মারে যে নতুন কোনও ধারা টেনিসে রবিবার আমদানি করেছে তাও নয়। বর্তমান পাওয়ার টেনিসকেই লেন্ডল-রেজিমের জোরে আরও একধাপ তুলে দিয়েছে। যার পিছনে অন্যতম অস্ত্র সর্বাত্মক ফিটনেস!
|