লোকসভা ভোটে ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনে যে নেতাদের উপর ভরসা করেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশেরই এখন আর অবস্থান স্পষ্ট নয়। এ দিকে পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে বৃহত্তর জোটের চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস। এই অবস্থায় পূর্ব ও উত্তর ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে নতুন মিত্র সন্ধানে দক্ষিণমুখো হলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত কাল অন্ধ্রপ্রদেশের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির স্ত্রী তথা জগন্মোহনের মা ওয়াই এস বিজয়াম্মার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মমতা। পরে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দলের সভাপতি বিজয়াম্মার সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর ফোনে কথা হয়েছে। দু’দলের একসঙ্গে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করার বিষয়টি নিয়েও ঐকমত্য হয়েছে।’ শুধু জগন্মোহনের দলই নয়, তামিলনাড়ুর এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতার সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলেছেন মমতা।
ইউপিএ ছাড়া ইস্তক মমতা চাইছিলেন নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়ক এমনকী মুলায়মকেও নিয়ে একটি আঞ্চলিক জোট গড়তে। প্রাথমিক ভাবে বেশ কয়েক কদম এগিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিহারে এনডিএ জোট ভেঙে যাওয়ার পর নীতীশ এখন সব দিক খুলে রাখতে চাইছেন। বস্তুত, নীতীশ, লালু প্রসাদ ও শিবু সোরেনকে নিয়ে পূর্বাঞ্চলে নয়া জোট গঠনে উঠেপড়ে লেগেছেন রাহুল গাঁধী। কখনও আস্থা ভোটে সমর্থন জুগিয়ে, কখনও বিপুল প্যাকেজ ঘোষণা করে নীতীশ সরকারকে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে চলেছে কংগ্রেস। তাই নীতীশও এই মুহূর্তে ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনে নতুন করে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আর এক আঞ্চলিক নেতা, ওড়িশার নবীন পট্টনায়ক এখনও বিজেপিকে সমর্থনের প্রশ্নে কিছুটা নরম। ও দিকে, মুলায়ম তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে সঞ্জয় ডালমিয়াকে আলিমুদ্দিনের বৈঠকে পাঠিয়ে বসে আছেন। যদিও পরে ডালমিয়ার সঙ্গে সপা-র কোনও সম্পর্ক নেই বলে দলীয় সূত্রে দাবি করা হয়। কিন্তু মোটের উপর নেতাদের অবস্থান নিয়ে তৃণমূল নেত্রী কিছুটা সংশয়ে পড়েন বলে অনেকেই মনে করছেন।
তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, কংগ্রেস-বিরোধিতার প্রশ্নে মমতা তাঁর অবস্থানে অনড়। তাঁর মতে, কংগ্রেস ডুবন্ত জাহাজ। আগামী লোকসভা নির্বাচনে তাদের আসন একশোর নীচে চলে যাবে। রাজশেখর পুত্র জগন্মোহন কট্টর কংগ্রেস-বিরোধী। লোকসভা ভোটে অন্ধ্রে জগন্মোহনের কাছে ধরাশায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে খোদ কংগ্রেস হাইকম্যান্ডেরই। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব ও দক্ষিণের দুই কংগ্রেস-বিরোধী শক্তির মধ্যে সেতুবন্ধন করতে চাইছেন মমতা। বিজয়াম্মার সঙ্গে আলাপচারিতায় মমতা জানান, সম্ভবত নভেম্বরেই লোকসভা নির্বাচন হতে চলেছে।
|