এক-আধ বার নয়। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর পান্ডা, তথা দেশে বহু নাশকতার হোতা ইয়াসিন ভটকল একাধিক বার ‘একটুর জন্য’ কলকাতা পুলিশের জাল এড়িয়েছে। পুণের জার্মান বেকারিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর উদ্দেশ্যে কলকাতায় ইয়াসিন যার কাছ থেকে বিস্ফোরক নিয়ে যায় বলে অভিযোগ, সেই আনোয়ার হুসেন মল্লিক ধরা পড়ায় এই তথ্য উঠে এসেছে বলে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর দাবি।
নদিয়ার চাপড়ার বাসিন্দা আনোয়ারকে শনিবার কলকাতার বিবাদী বাগ চত্বরে এসটিএফ পাকড়াও করে। অভিযোগ, ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে সে-ই ইয়াসিনের হাতে আট কেজি বিস্ফোরক তুলে দেয়, যা মাস পাঁচেক পরে জার্মান বেকারি-কাণ্ডে কাজে লাগানো হয়। পুণে পুলিশের চার্জশিট মোতাবেক, ওখানে ইয়াসিন নিজের হাতে বোমা বসায়। সেই ইস্তক তার আর হদিস পায়নি দেশের তাবড় গোয়েন্দা সংস্থা।
২০০৯-এ সায়েন্স সিটির কাছে ‘ক্যুরিয়র’ আনোয়ারের সঙ্গে সেই মোলাকাতের মাস দুয়েকের মধ্যে ইয়াসিন আবার কলকাতায় আসে। পুলিশ তার আসল পরিচয় না জানায় সে বার সে ধরা পড়েও পার পেয়ে যায়। লালবাজারের খবর: সে বার, অর্থাৎ ২০০৯-এর নভেম্বরে ইয়াসিনকে জাল নোটের মামুলি কারবারি ঠাউরে এসটিএফ গ্রেফতার করে কলুটোলা স্ট্রিটে। মহম্মদ আসরাফ নামধারী ইয়াসিন ভটকল সে যাত্রা মাস দেড়েক জেল খেটে জামিনে বেরোয়।
আনোয়ারকে জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, এর পরেই ইয়াসিন ফের শহরে আসে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের চালান নিতে। এসটিএফ সে বারও তার নাগাল ফস্কায়। বস্তুত ২০১০-এর জানুয়ারিতে ‘সোনু’ নামে যে অস্ত্র-কারবারিকে ধরতে পুলিশ জাল বিছিয়েছিল, লালবাজার জানত না, সে-ই ইয়াসিন। অবশ্য ‘সোনু’কেও জালে ফেলা যায়নি। কেন?
গোয়েন্দা-সূত্রের খবর: ধর্মতলায় ‘ক্যুরিয়রের’ সঙ্গে সোনুর মোলাকাতের পরিকল্পনার কথা জেনে পুলিশ তৈরি ছিল। কিন্তু এসটিএফেরই হুড়োতাড়ায় তাকে ধরা যায়নি। যাকে দিয়ে ফাঁদ পাতা হয়েছিল, সেই ব্যক্তিকে দিয়ে ইয়াসিনের মোবাইলে ঘন ঘন ফোন করানো হয়। এতে গণ্ডগোল আঁচ করে সোনু ওরফে ইয়াসিন আর দেখা দেয়নি। এসটিএফ টিমের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওত পেতে থাকাই সার হয়। লালবাজার-সূত্রের খবর: এই ব্যর্থতার জন্য এক আইপিএস অফিসার ও এক জন ইন্সপেক্টর একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছিলেন।
এক বার ধরা পড়ার ক’দিনের মধ্যে ইয়াসিন ফের কলকাতায় আসার ঝুঁকি নেয়ই বা কেন ? গোয়েন্দামহলের ব্যাখ্যা: দেশের বিভিন্ন শহরে নাশকতা ঘটাতে মরিয়া আইএম বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে আসা বিস্ফোরক ‘ডেলিভারি’ নেওয়ার ‘নিরাপদ’ জায়গা হিসেবে কলকাতাকে বেছেছিল।
আনোয়ারের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে ইয়াসিনের সঙ্গে এসেছিল কামাল হাসান ওরফে বিলাল। ২০১০-এর এপ্রিলে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্যতম প্রধান এই অভিযুক্ত আপাতত বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি। গত বছর এপ্রিলে কলকাতা থেকেই কামালকে ধরে নিয়ে গিয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। আইএমের বিহার সেলের চাঁইটিকে এ বার এসটিএফ নিজের হেফাজতে চাইবে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ইয়াসিন কলকাতায় এসে আনোয়ারের থেকে কী বিস্ফোরক, ঠিক কী উদ্দেশ্যে নিয়ে গিয়েছিল, সে সম্পর্কে কামাল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে। কারণ, ডেলিভারির সময়ে তৃতীয় ব্যক্তি বলতে সে-ই উপস্থিত ছিল। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে কামাল-আনোয়ারকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা যায়।”
দু’-এক দিনের মধ্যে এসটিএফের দল বেঙ্গালুরু যাবে বলে পুলিশ জানায়।
|