|
|
|
|
সন্দেহ গোয়েন্দাদের |
নাশকতায় হাত কি মুর্শিদাবাদ ও চট্টগ্রাম-গোষ্ঠীর |
অগ্নি রায় ও প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
হিফাজত-ই-ইসলামি এবং আহলে হাদিস। একটি যদি চট্টগ্রামের হয়, দ্বিতীয়টির শিকড় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে।
বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের চব্বিশ ঘণ্টা পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রেডারে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের পাশাপাশি এই দু’টি নতুন মৌলবাদী সংগঠনের নাম উঠে এসেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, মায়ানমারে রোহিঙ্গিয়া মুসলিমদের উপর ‘অত্যাচারের’ বদলা নেওয়ার ঘটনায় এই সংগঠনগুলির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
পাকিস্তানের লাহৌর থেকে লস্কর-ই-তইবার জেহাদের পাশাপাশি কয়েক মাস আগে ভারতে এসে হিফাজত-ই-ইসলামি এই নিয়ে হাওয়া গরম করে গিয়েছিল। দিল্লিতে রোহিঙ্গিয়া মুসলিমদের সঙ্গে প্রকাশ্য সমাবেশ করে তারা। একই সঙ্গে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনদের সঙ্গেও ওরা নাশকতার ছক কষেছিল বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। মুজাহিদিনদের সঙ্গে হিফাজতের কর্তাদের ঠিক কী আলোচনা হয়েছিল, সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
অন্য দিকে আহলে হাদিসের বহু সদস্য মুর্শিদাবাদে ছড়িয়ে রয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগেই তৈরি হয়েছে এই সংগঠনটি। বাংলাদেশি মৌলবাদীদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কারণ মুর্শিদাবাদে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশের সমস্যা যথেষ্টই রয়েছে। রোহিঙ্গিয়াদের উপরে নির্যাতনের বদলা নিতে লস্কর তথা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের নির্দেশে এই আহলে হাদিসই মহাবোধি মন্দিরে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জামিয়াত আহলে হাদিস বলে বহু পুরনো যে সংখ্যালঘু সংগঠন রয়েছে, তার সঙ্গে এই নতুন সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। |
|
ছবি: পিটিআই |
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, হিফাজত-ই-ইসলামিও কিন্তু আদতে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন নয়। বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের নীতির প্রতিবাদ জানাতে তিন বছর আগে তৈরি হয় সংগঠনটি। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়েছিল তারা। মে মাসে বাংলাদেশে তাদের হিংসাত্মক আন্দোলনে বেশ কিছু প্রাণহানিও হয়। এদের বেশ কিছু মাদ্রাসার উপর নজরদারি চালাচ্ছে ঢাকা। ভারতীয় গোয়েন্দাদের অনুমান, নিজেরা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন না হলেও তলে তলে হিফাজতের শাখা ছড়িয়ে রয়েছে লস্কর-ই-তইবার নেতৃত্ব পর্যন্ত।
এখনও পর্যন্ত হিফাজত-হাদিসের মতো সংগঠনের মাধ্যমে লস্করই এই নাশকতা চালাচ্ছে ধরে নিয়ে এগোচ্ছেন গোয়েন্দারা। তিনটি বিস্ফোরকে উর্দুতে লেখা সঙ্কেতও মিলেছে। এর মধ্যে দু’টিতে উর্দু হরফে লেখা ছিল, ‘বড়া বাট’ ও ‘বাস’। অর্থাৎ এই দু’টি বোমা বুদ্ধের বড় মূর্তি ও বাসের নীচে রাখার কথা ছিল। কিন্তু আর একটিতে লেখা ছিল ‘ইরাক যুদ্ধ’। এটি কোনও সাঙ্কেতিক শব্দ নাকি তদন্তকারীদের ভুল পথে চালিত করতে লেখা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশ্ন হল, ইন্দোনেশিয়া বা শ্রীলঙ্কার মতো কোনও বৌদ্ধ রাষ্ট্রে ‘বদলা’ না নিয়ে কেন ভারতকেই বেছে নেওয়া হল? মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ভারত হল মায়ানমার, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সীমান্তে। ফলে ভারতকে নিশানা করা সহজ। হিফাজত-ই-ইসলামি বা আহলে-হাদিসের মতো সংগঠনগুলিকে কাজে লাগানোর সুবিধাও রয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ থেকেই শুরু হল ভারত-মায়ানমারের মধ্যে বিদেশ মন্ত্রক পর্যায়ের আলোচনা (ফরেন অফিস কনসাল্টেশন)। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই আজ মায়ানমার গিয়ে বলে এসেছেন, এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোই অগ্রাধিকার। এমনিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জঙ্গি সমস্যার প্রশ্নে মায়ানমারের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে, মুসলিম উগ্রপন্থাই মায়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় প্রাধান্য পেতে চলেছে। এটা দু’দেশের সম্পর্কের মাত্রা বদলে দিতে পারে বলেই মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। মাথাই আজ মায়ানমারের সেনা প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। স্থির হয়েছে, বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের সমস্ত তথ্য ভারত মায়ানমারকে জানাবে। ও দেশের বিরোধী নেত্রী আউং সান সু চিও এই বিস্ফোরণের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।
|
পুরনো খবর: মায়ানমার নিয়ে শোধ তোলার ডাক দেয় হাফিজ |
|
|
|
|
|