|
|
|
|
মায়ানমার নিয়ে শোধ তোলার ডাক দেয় হাফিজ
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
এক দিকে মায়ানমার, অন্য দিকে পাকিস্তানের লাহৌর। আর এক দিকে ধর্মশালা।
বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দিরে বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে উপমহাদেশের মানচিত্রে এই তিনটি বিন্দুকে মেলাতে চাইছেন গোয়েন্দারা।
মায়ানমারে রোহিঙ্গিয়া মুসলিমদের উপর সে দেশের সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরা নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। পাকিস্তানের লাহৌরে বসে মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগছে লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সঈদ। হাফিজের অভিযোগ, মায়ানমার সরকারের পিছনে ভারতেরও মদত রয়েছে। তাই বৌদ্ধ তীর্থস্থানকে নিশানা করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত কাল, শনিবার ছিল চতুর্দশ দলাই লামা-র ৭৮তম জন্মদিবস। এই সময় বুদ্ধগয়ায় বৌদ্ধদের ভিড় বেশি হয়। আর সেই কারণেই আজকের দিনটি বিস্ফোরণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ।
রবিবার বিস্ফোরণের পরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্তারা বলছেন, পাকিস্তানি মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলির অনেক দিন ধরেই নজর ছিল মহাবোধি মন্দিরের দিকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই বিস্ফোরণ ঠেকানো গেল না কেন, তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে যেমন বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে, তেমনই গোয়েন্দা-তথ্য আদানপ্রদান ও তার ভিত্তিতে নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অন্দরমহলে। ফেব্রুয়ারি মাসে হায়দরাবাদের দিলসুখনগরের বিস্ফোরণ নিয়েও আগাম খবর ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। অন্ধ্র সরকারকে সে কথা জানানোও হয়েছিল। তাতেও বিস্ফোরণ ঠেকানো যায়নি। এ বার বুদ্ধগয়াও ঠেকানো গেল না। অথচ আজ থেকে নয় মাস আগে এই দু’টি বিষয়েই একই সঙ্গে তথ্য মিলেছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বুদ্ধগয়া যে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গিদের হিট-লিস্টে রয়েছে, তা প্রথম জানা যায় গত বছরের অক্টোবর মাসে। পুণের জার্মান বেকারি বিস্ফোরণের তদন্ত করতে গিয়ে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের হাতে ধরা পড়ে দুই ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি সঈদ মকবুল এবং ইমরান খান। জেরার মুখে তারাই জানায়, নাশকতার জন্য দু’টি জায়গাকে বেছে নিয়ে তারা সেখানকার রাস্তাঘাট সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছিল। এক, হায়দরাবাদের দিলসুখনগর। দুই, বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির। নাশকতার ছক কষেছিল ইন্ডিয়ান-মুজাহিদিনের দুই পাণ্ডা, ইকবাল ও রিয়াজ ভটকল। সে সময়ই বিহার সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যের আদানপ্রদানের যে মাল্টি-এজেন্সি সেন্টার (ম্যাক) রয়েছে, তার মাধ্যমেই এই তথ্য গিয়েছিল। |
|
মায়ানমার নিয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নীরবতা দুঃখজনক
বললে কম বলা হয়।
মায়ানমার
সরকারকে
মদত দিচ্ছে ভারত।
রোহিঙ্গিয়া মুসলিমদের মর্যাদা
রক্ষা মুসলিম সমাজের দায়িত্ব।
হাফিজ সঈদ লস্কর প্রধান |
|
গত ফেব্রুয়ারিতে দিলসুখনগরে বিস্ফোরণের পরে গোয়েন্দারা ফের নড়ে বসেন। বুঝতে পারেন, মকবুলরা ঠিক তথ্যই দিয়েছিল। তাই ফের বিহার সরকারকে সতর্ক করা হয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্তার বক্তব্য, “জুন মাসেও ফের নীতীশ কুমারের সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল। কারণ মায়ানমারে রোহিঙ্গিয়া মুসলমানদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই লস্কর নেতা হাফিজ সঈদের উস্কানিমূলক বিবৃতি শুরু হয়। আমরা প্রমাদ গুনি, বৌদ্ধ তীর্থস্থানগুলিতে হামলা হতে পারে।” গত ২ জুলাই কেন্দ্র-রাজ্যের গোয়েন্দা বৈঠকেও বুদ্ধগয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থার মহড়াও হয়েছিল।
কেন আজকের দিনেই বিস্ফোরণ? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, যতটা বেশি সম্ভব ক্ষয়ক্ষতিই ছিল জঙ্গিদের উদ্দেশ্য। তা যে হয়নি, সেটা নেহাতই কপালজোর এবং জঙ্গিদের ব্যর্থতা। শনিবার ছিল দলাই লামার ৭৮তম জন্মদিন। এই সময় বুদ্ধগয়ায় বৌদ্ধ পর্যটক, বিশেষত বিদেশিদের ভিড় হয়। একসঙ্গে বহু মানুষকে হত্যার জন্য ট্যুরিস্ট বাসের তলায় বিস্ফোরক রাখা হয়। বোমায় ধাতব পাইপ, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রাখা হয়েছিল। সময়-নিয়ন্ত্রক টাইমার তো ছিলই। কিন্তু অধিকাংশ বোমাই ভিজে থাকায় বড় মাপের বিস্ফোরণ হয়নি। বেশ কিছু আইইডি-ও (ইমপ্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) কাজ করেনি।
অন্যান্য বৌদ্ধ তীর্থস্থান ছেড়ে বুদ্ধগয়াকেই বেছে নেওয়ার পিছনেও নির্দিষ্ট ছক রয়েছে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। কারণ বুদ্ধগয়ায় দলাই লামা প্রায়শই আসেন। ক’মাস আগেই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ্রা রাজাপক্ষে বুদ্ধগয়া ঘুরে গিয়েছেন। অন্তত ৫০টি দেশের এখানে গুম্ফা রয়েছে। ফলে বুদ্ধগয়ায় নাশকতা ঘটালে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু তো হবেই, দিল্লিও অস্বস্তিতে পড়বে। আরেকটি উদ্দেশ্য হল, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো। যেমন, অসমে গোষ্ঠী-সংঘর্ষের পরে বিভিন্ন রাজ্যে উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল। সে সময়ও অসমে সংঘর্ষের ছবির বদলে মায়ানমারের রোহিঙ্গিয়াদের উপর নির্যাতনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বুদ্ধগয়ায় প্রাথমিক ভাবে আত্মঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনাই করেছিল আইএম। সেই অনুযায়ী গত পাঁচ বছর ধরেই ‘সুইসাইড বম্বার’দের একটি দল তৈরির পরিকল্পনা হয়। রিয়াজ-ইকবাল এই দায়িত্ব দেয় আতিফ আমিনকে। মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত আল-কায়দা কম্যান্ডার আবু মুসাব আল জারকায়ি-র নামে এই দলের নাম হয় শহিদ আল-জারকায়ি ব্রিগেড। কিন্তু ২০০৮ সালে দিল্লির বাটলা হাউসে পুলিশের গুলিতে আমিন মারা যাওয়ায় এই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তাই এর পর থেকে পুণের জার্মান বেকারি বা বারাণসী, সর্বত্র আইইডি-র মাধ্যমেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। সেই তালিকায় ঢুকে পড়ল বুদ্ধগয়াও। |
|
|
|
|
|