|
|
|
|
দিল্লিকে দুষে তীব্র আক্রমণ মমতার
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের পরে ফের কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধোনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক ফেসবুক বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার কী করছে?’ দুষেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকেও। একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলিকে সমস্যায় ফেলার উদ্দেশ্য নিয়েই কি এমন কাজ করা হচ্ছে? প্রথমে ছত্তীসগঢ়, তার পরে ঝাড়খণ্ড, এ বার বুদ্ধগয়া (বিহার) জায়গার নামগুলির উল্লেখ করে মমতার আশঙ্কা, এ বার কি তবে পশ্চিমবঙ্গ?
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে দীর্ঘ বার্তায় যে ভাবে কেন্দ্রকে এ দিন আক্রমণ করেছেন মমতা, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণকে ধাপে ধাপে আরও শাণিত করার রণকৌশলই নিচ্ছেন তিনি। কেন? কারণ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে পশ্চিমবঙ্গে নিজের রাজনৈতিক পরিসরটাকে মজবুত করতে চাইছেন মমতা। এবং তা করতে গিয়ে একটি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠাও করতে চাইছেন। সেটা হল, কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে এই তিনটি শক্তি গাঁটছড়া বেঁধেছে। গত কালও দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক জনসভায় তিনি বলেছেন, “দিল্লি জেনে রেখো, আমরা ভিক্ষে চাইতে যাব না। বাংলায় তোমাদের ভিক্ষে চাইতে আসতে হবে।....আমিই দিল্লির সরকার চালিয়ে দেব।”
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতা আসলে এই বার্তাটাই দিতে চাইছেন যে, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের পরে আঞ্চলিক দলগুলির আধিপত্য থাকবে। তিনি আশা করেন, তখন তৃণমূলও দিল্লির রাজনীতিতে একটা নির্ধারক শক্তি হবে। |
প্রথমে ছত্তীসগঢ়... ঝাড়খণ্ড...এখন বিহার। এর পর পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্র না ওড়িশা? কেন্দ্র কী করছে? যে সব কেন্দ্রীয় সংস্থা রাজ্যের ব্যাপারে মাথা ঘামায়, কিন্তু মানুষের নিরাপত্তার খেয়াল রাখে না, তারা কী করছে? লোকসভা নির্বাচনের আগে এটা কি একটা ছক? বেশ কিছু
রাজনৈতিক নেতাকে খুনের পরিকল্পনা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ টুঁ শব্দ করতে না পারে?
নাকি ইউপিএ-র উপর যারা নির্ভর করে না, সেই আঞ্চলিক দলগুলিকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা? |
|
অক্টোবর মাসে ইউপিএ জোট ছেড়েছেন মমতা। তার পর থেকে ধীরে ধীরে কংগ্রেস-বিরোধিতা বাড়াচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি নীতীশ কুমার এনডিএ ছাড়ার পরে তৃণমূল নেত্রী আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে একটি ফেডেরাল ফ্রন্ট গড়ার বার্তাও দেন। নীতীশ তো বটেই, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয় বিজেডি প্রধান নবীন পট্টনায়কেরও।
কিন্তু নীতীশ কুমার সব দরজাই খুলে রেখেছেন। তিনি এখনও স্পষ্ট করে বলেননি, কংগ্রেসের সঙ্গে যাবেন কি না। কিন্তু ইউপিএ-র প্রধান দলের সঙ্গে বোঝাপড়ার পথেই এগোচ্ছেন। নীতীশ যে তাঁর মতো জোট-নিরপেক্ষ না থেকে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গী হতে চাইছেন, তাতে মমতা ক্ষুব্ধ। কারণ, নীতীশের কাছে তিনি আগেই ফেডেরাল ফ্রন্টের কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ভোটের পরে নয়, এখনই ফ্রন্টের ঘোষণা করা হোক। চেয়েছিলেন, তৃণমূলের মতো জোটে থাকুক নীতীশের জেডিইউ-ও। নীতীশ এখনও কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়ার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেননি বটে, কিন্তু তিনি কোনও ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনে উৎসাহও দেখাননি।
জেএমএম-এর প্রতিনিধিরাও মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু এখন জেএমএম-ও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঝাড়খণ্ডে সরকার গঠনের চেষ্টা করছে। জেএমএম-এর মধ্যে অবশ্য প্রবল অন্তর্কলহ রয়েছে। তবু শিবু সোরেনের পুত্র হেমন্তকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে রাহুল গাঁধী পূর্বাঞ্চলে নয়া জোট গঠনের বার্তা দিয়ে রেখেছেন। যে জোটে জেএমএম, জেডিইউ-এর সঙ্গে লালু প্রসাদকেও চাইছেন তিনি।
আর এখানেই মমতার বক্তব্য, কংগ্রেস এখন ডুবন্ত জাহাজ। লোকসভা ভোটের পরে কংগ্রেসের আসন একশোর নীচে চলে যাবে এমনটাই বিশ্লেষণ তৃণমূলের। তাই তাদের বক্তব্য, নীতীশ ভুল করছেন। তিনি যা করছেন, তাতে লালু প্রসাদের লাভ হতে পারে। কিন্তু নীতীশের রাজনৈতিক লাভ হবে না।
একটি রাজনৈতিক সূত্র বলছে, ইউপিএ থেকে বেরিয়ে আসার পরে মমতাকে বার্তা দিচ্ছে বিজেপি-ও।
সে কারণেই সম্প্রতি হাওড়া লোকসভা উপনির্বাচনে তারা প্রার্থী দেয়নি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, মমতা কি এই বার্তা গ্রহণ করবেন? বিজেপি যে নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটে এগোচ্ছে, সেটা চাননি তিনি। মোদীর থেকে তিনি যে দূরত্ব রাখতে চান, সেটা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেই বোঝা গিয়েছিল। মোদী আমন্ত্রণ জানালেও যাননি মমতা। এ বারে বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে আরও সরব হওয়ার জন্যও তৈরি হচ্ছেন মমতা। তৃণমূল নেত্রী মনে করেন, ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবে শুধু বিজেপি নয়, কংগ্রেসও মেরুকরণের রাজনীতি করছে। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের কোনও লাভ নেই। তাঁর আরও বক্তব্য, মানুষ এত বোকাও নয়। মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতা এগুলো ভুলে গিয়ে মানুষ কংগ্রেসকে ভোট দেবে, এমনটা ভাবার কারণ নেই।
তাই আঞ্চলিক ঐক্যের বিষয়ে এখনও আশা ছাড়েননি মমতা। এ দিন বিস্ফোরণের পরে পরোক্ষে আরও এক বার সেই কথাই বলেছেন তিনি। ফেসবুক বার্তায় তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার কী করছে? যে সব কেন্দ্রীয় সংস্থা রাজ্যের ব্যাপারে মাথা ঘামায়, কিন্তু দেশের মানুষের নিরাপত্তা-সুরক্ষার খেয়াল রাখে না, তারা কী করছে? লোকসভা নির্বাচনের আগে এটা কি একটা গেম-প্ল্যান? রাজ্য ও আঞ্চলিক দলগুলি বিড়ম্বনায় ফেলার পরিকল্পনা? নাকি বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতাকেও খুনের পরিকল্পনা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ টুঁ শব্দও না করতে পারে? অথবা দায়িত্ব এড়াতে চাপানউতোরের খেলা এবং ইউপিএ-র উপর যারা নির্ভরশীল নয়, সেই সব আঞ্চলিক দলকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা?” এবং সব শেষে তাঁর মন্তব্য, “এক জন নাগরিক হিসেবে আমি লজ্জিত বোধ করি।”
ইউপিএ থেকে বেরিয়ে আসার পরে গত আট মাসে মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক ধাপে ধাপে খারাপই হয়েছে। তৃণমূল সাংসদ কে ডি সিংহের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। এত কিছুর পরেও কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের নতুন করে বোঝাপড়া নিয়ে জল্পনা রয়েই গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। মমতা অবশ্য সেই সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়ে আপাতত জাতীয় স্তরে কংগ্রেস-বিরোধিতাকে তীব্রতর করতে চাইছেন। একই সঙ্গে চাইছেন আঞ্চলিক জোট গঠনের সম্ভাবনাও জিইয়ে রাখতে। এ দিনের ফেসবুক বার্তায় আরও এক বার তারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|