|
|
|
|
জার্মান বেকারির বিস্ফোরণে কলকাতা-যোগ নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পুণের জার্মান বেকারিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর উদ্দেশ্যে জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর পান্ডা ইয়াসিন ভটকল কলকাতায় এসে বিস্ফোরক নিয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করল পুলিশ। তার সন্দেহভাজন সরবরাহকারীকে শনিবার শহরের কেন্দ্রস্থলে পাকড়াও করার পরে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে নদিয়া সীমান্ত পেরিয়ে সেই বিস্ফোরক কলকাতায় ঢুকেছিল।
প্রসঙ্গত, রবিবারই বুদ্ধগয়ায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ফের ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের নাম উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) এবং ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)-র মতে, কর্নাটকের বাসিন্দা ইয়াসিন-ই ভারতে আইএমের ‘অপারেশনাল চিফ।’ আইএমের যাবতীয় হামলা কার্যকর করার দায়িত্ব তার। পুণে বিস্ফোরণের পরে অবশ্য ইয়াসিনের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ।
এ বার বিস্ফোরক ও প্রায় দেড় লক্ষ টাকার জাল নোট সমেত তার ‘ক্যুরিয়র’ জালে পড়ায় আইএমের কোনও নাশকতার সঙ্গে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের নাম এই প্রথম নির্দিষ্ট ভাবে জড়াল বলে মনে করছেন রাজ্যের পুলিশ-কর্তাদের একাংশ। এসটিএফ-সূত্রের খবর: শনিবার রাতে বিবাদী বাগ চত্বরে আনোয়ার হুসেন মল্লিক নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি নদিয়া জেলায়, চাপড়ার রানাবন্ধে। তদন্তকারীদের দাবি: চাপড়ার গোংরা সীমান্ত দিয়ে পাচার করা আট কেজি বিস্ফোরক কলকাতায় এনে আনোয়ারই তুলে দেয় ইয়াসিনের হাতে। সেটা ২০০৯-এর সেপ্টেম্বর। সায়েন্স সিটি-র কাছে ‘চালান’ হস্তান্তর হয়। এবং তার সাহায্যেই ২০১০-এর ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পুণের জার্মান বেকারিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে পুলিশের দাবি। তাতে চার বিদেশি-সহ ১৭ জনের প্রাণ যায়, জখম হন ৬০ জন। |
 |
ব্যাঙ্কশাল আদালতের পথে আনোয়ার। —নিজস্ব চিত্র |
এসটিফের সন্দেহ, রানাবন্ধের মুদি-দোকানের মালিক, বছর চল্লিশের আনোয়ার আইএমের স্লিপার সেলের সদস্য। গত ছ’-সাত বছর যাবৎ সে বাংলাদেশ থেকে বিস্ফোরক কলকাতায় এনে আইএম-কে সরবরাহের দায়িত্ব পালন করেছে। এসটিএফের এক কর্তা বলেন, “এত দিন আমরা জানতাম, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ-বসিরহাটের সীমান্ত দিয়ে হাতিয়ার, বিস্ফোরক ইত্যাদি এ দেশে ঢোকে। জানা ছিল না, নদিয়ার সীমান্ত-পথও ব্যবহার করা হচ্ছে।”
কী ধরনের বিস্ফোরক ইয়াসিন পেয়েছিল? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এ ব্যাপারে আনোয়ার নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলতে পারেনি। তবে তার মুখে বর্ণনা শুনে এসটিএফের অনুমান, সেটি আরডিএক্স। ফরেন্সিক-রিপোর্টের ভিত্তিতে পুণের পুলিশও জানিয়েছিল, জার্মান বেকারিতে ব্যবহৃত বিস্ফোরকের উপাদান আরডিএক্স, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও পেট্রোলিয়াম হাইড্রোকার্বন অয়েল। এসটিএফের দাবি: জেরায় আনোয়ার জানিয়েছে, সে আইএম থেকে হাজার সাতেক টাকা মাসোহারা পেত। তবে ২০০৯-এ সায়েন্স সিটি’র মোলাকাতে ইয়াসিন তাকে নিজে থেকে তিন হাজার টাকা দিয়েছিল। আনোয়ার এ-ও বলেছে, কলকাতায় তখন ইয়াসিনের সঙ্গে ছিল কামাল হাসান ওরফে বিলাল, যাকে গত বছর এপ্রিলে বেঙ্গালুরু পুলিশ কলকাতা থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। ২০১০-এর এপ্রিলে আইপিএল ম্যাচের আগে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যে বিস্ফোরণ হয়, বিহারের বাসিন্দা কামাল তাতে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। ওই ঘটনায় প্রাণহানি না হলেও ১৫ জন জখম হয়েছিলেন।জার্মান বেকারি বিস্ফোরণ-মামলায় মহারাষ্ট্র পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াড (এটিএস)-এর দাখিল করা চার্জশিটে অবশ্য বলা হয়েছে, সেখানে ইয়াসিন নিজে বোমা বসিয়েছিল। সেই বোমার অন্যতম উপকরণ যে সে কলকাতায় এসে নিয়ে গিয়েছিল, তা জেনে গোয়েন্দারা তাজ্জব। “আমরা জানতাম, ২০০৯-এ ইয়াসিন কলকাতায় এসেছিল। জানতাম না যে, এখান থেকে সে বিস্ফোরক নিয়ে গিয়েছে!” মন্তব্য এক এসটিএফ-কর্তার। ঘটনা হল, এই ইয়াসিন এক বার কলকাতা পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছিল। কিন্তু আসল পরিচয় জানা না-থাকায় সে হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে।
গোয়েন্দা-সূত্রের দাবি: ইয়াসিন আসলে কে, তা আনোয়ারও জানত না। সে ইয়াসিনকে চিনত ইউসুফ নামে। আনোয়ারের থেকে আরও বিস্ফোরক নিতে ‘ইউসুফ’ ২০০৯-এর নভেম্বরে ফের কলকাতায় এসে এসটিএফের হাতে ধরা পড়ে যায়। এসটিএফ-ও তখন তার সন্ত্রাসবাদী-পরিচয় জানতে পারেনি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সাবসিডিয়ারি ইনটেলিজেন্স ব্যুরো-র তথ্যের ভিত্তিতে এসটিএফ শুধু জেনেছিল, কলুটোলা স্ট্রিটে জাল নোটের যে কারবারিটিকে তারা ধরেছে, তার নাম মহম্মদ আসরাফ। প্রথমে এসটিএফ হেফাজত, পরে জেল কলকাতায় সব মিলিয়ে মাস দুয়েক বন্দিদশা কাটিয়ে আসরাফরূপী ইয়াসিন ভটকল জামিন নিয়ে বেপাত্তা হয়ে যায়।
এসটিএফ-সূত্রের খবর: আনোয়ার জানিয়েছে, ইয়াসিন ওরফে আসরাফ ওরফে ইউসুফ যে দিন কলুটোলা স্ট্রিটে ধরা পড়ে, তার দু’দিন পরেই তাদের মোলাকাতের দিন নির্দিষ্ট ছিল। সে বারও সায়েন্স সিটি-র সামনে, এক চায়ের দোকানে। প্রায় ১০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট হস্তান্তরের কথা ছিল। ‘চালান’ নিয়ে আনোয়ার চাপড়া থেকে ট্রেনে শিয়ালদহে নেমে বাসে চেপে সায়েন্স সিটি রওনা দেয়। শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের ‘সাপ্লায়ার’ তাকে মোবাইলে ফোন করে জানায়, ইউসুফ পুলিশের হাতে পড়েছে। আনোয়ার নদিয়া ফিরে যায়।
এক গোয়েন্দা-অফিসার বলেন, “নদিয়ার গোংরা সীমান্তের ও-পারে বাংলাদেশের চুয়াডাঙা। কুতুবপুর-মুন্সিপুর গ্রাম। সেখানকার কয়েক জন সরবরাহকারীর নাম পেয়েছি। চাপড়ায় আইএম স্লিপার সেলের আরও কিছু মেম্বার কাজ করছে বলে সন্দেহ।”
|
পুরনো খবর: পুণের রেস্তোঁরায় বোমা ফেটে হত ৯, জখম ৫৩ |
|
|
 |
|
|