চিন্তায় মেরুকরণ ও জোট, সব দলেরই অস্ত্র বুদ্ধগয়া
ত কাল অহিংসার মন্দিরে রক্তপাত দেখেছে দেশ। এ বার ভোটের মেরুকরণ ও জোট সমীকরণকে মাথায় রেখে কে কার ঘাড়ে দায় চাপাবে, তারই দৌড় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে।
বুদ্ধগয়ার পরপর বিস্ফোরণের পরই থেকেই বিহার বিজেপি-র নেতারা বলছেন, সরকার বাঁচানোর ভাবনায় রাজ্যের নিরাপত্তার কথা বেমালুম ভুলেছেন নীতীশ কুমার। আজ আবার দিল্লি থেকে কংগ্রেস আক্রমণ শানাল বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীকে। পক্ষ নিল নীতীশ কুমারের।
বুদ্ধগয়ায় হামলা নিয়ে রাজনীতির এই চাপানউতোরে মূল দু’টি লক্ষ্য বেশ স্পষ্ট। ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতির মেরুকরণ থেকে যতটা সম্ভব ফায়দা তোলা এবং জোট সমীকরণকে নিজেদের অনুকূলে আনা। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত কালই বুদ্ধগয়ার ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় সরকার তথা কংগ্রেসকে। তাতে নীতীশ কুমার-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে এক মঞ্চে আনার চেষ্টা ফুটে উঠেছে। আজ কংগ্রেসও যে ভাবে নীতীশের পক্ষ নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, সেটাও মূলত জেডিইউ-এর মন পাওয়ার লক্ষ্যেই।
কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ কার্যত আজ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি-র বিরুদ্ধে। রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ এই কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, “অমিত শাহ অযোধ্যায় গিয়ে রাম মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেন। নরেন্দ্র মোদী বিহার বিজেপি-র কর্মীদের নির্দেশ দিলেন নীতীশকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার। আর তার পর দিনই কিনা বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণ হল! এর মধ্যে কি কোনও যোগ রয়েছে?” দিগ্বিজয়ের এই কটাক্ষে আলোড়ন তৈরি হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি এর জবাবে বলেছেন, “কংগ্রেস সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে না লড়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের আক্রমণে শক্তিক্ষয় করছে।”
দোষ কার

সন্ত্রাসের ঘটনাকে সামনে
রেখে বিজেপি ও লালু
প্রসাদের মধ্যে একটা
অশুভ আঁতাঁত তৈরি হচ্ছে।


বিজেপি নেতারা নীতীশ
কুমারকে দায়ী করতে
শুরু করেছেন। তাঁরা কি
সন্ত্রাসের ঘটনা নিয়ে
রাজনীতি করছেন না?


কিছু কংগ্রেস নেতা
সন্ত্রাসবাদীদের মুখপাত্র
হয়ে কাজ করছেন।


আরজেডি শাসনে বিহারে
সন্ত্রাসবাদী হামলা হতে
পারেনি। বুদ্ধগয়ায় হানা
রুখতে না পারা নীতীশ
সরকারের বড় ব্যর্থতা।

প্রশ্ন হল, বুদ্ধগয়ার বিস্ফোরণ নিয়ে কেন এমন বেমক্কা মন্তব্য করলেন দিগ্বিজয়? রাজনৈতিক সূত্রের ইঙ্গিত, এটা নিছক দিগ্বিজয়ের ব্যক্তিগত মত নয়। কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সুচিন্তিত ভাবেই এটা করাচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগে দিগ্বিজয়, শাকিল আহমেদ-সহ কংগ্রেসের একাংশ নেতা এ ভাবেই এখন আক্রমণ শানিয়ে যাবেন মোদীর বিরুদ্ধে। যাতে রাজনৈতিক মেরুকরণের পথ ধরে মুসলিমদের মন পাওয়া যায়। বস্তুত সেই উদ্দেশ্যে দিগ্বিজয় আজ এই প্রশ্নও তোলেন যে, “তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই কেন বিস্ফোরণের ঘটনায় মুসলিমদের যোগ থাকার কথা বলা হচ্ছে? জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে আগে তদন্ত শেষ করতে দেওয়া হোক।” নীতীশের মন জয়ে তাঁর মন্তব্য “ক’দিন আগে পর্যন্ত বিহারে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। এখন জোট ভেঙে যেতেই রাতারাতি সব খারাপ হয়ে গেল!”
বিজেপি নেতারা কিন্তু মনে করছেন, মুসলিমদের মন পাওয়ার চেষ্টায় কংগ্রেস যা করছে, তাতে তাঁদের বিশেষ ক্ষতি নেই। কারণ, মেরুকরণ হলে হিন্দু ভোট তাঁদের অনুকূলেই যাবে। মেরুকরণে ভরসা রাখার ওই সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কংগ্রেসও। দলের এক শীর্ষ সারির নেতা আজ এই প্রসঙ্গে বলেন, “দিগ্বিজয় যে ভাবে আজ মোদীকে আক্রমণ করেছেন তা কংগ্রেসের সামগ্রিক কৌশলের একটা অংশ মাত্র। তিনি বা শাকিল আহমেদের মতো দলের কিছু নেতা মোদীকে আক্রমণ করলেও সনিয়া-রাহুল-অ্যান্টনি-চিদম্বরমরা তা করবেন না। তাঁরা তুলে ধরবেন খাদ্য নিরাপত্তা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, আর্থিক সংস্কার ও সরকারের বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি ও তার সুফলের কথা। অর্থাৎ সংখ্যালঘুদের সমর্থন পাওয়ার জন্য তৎপর হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভোট টানারও চেষ্টা চলবে। এর সঙ্গে আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে পাশে এনে লোকসভা ভোটের আগে জোট মজবুত করার চেষ্টাও অব্যাহত রাখবেন রাহুল গাঁধী।
তবে মমতা বা বিজেপি-র অভিযোগ কিছুটা অস্বস্তিতেও রেখেছে কংগ্রেসকে। বিজেপি-র নকভিও আজ বলেছেন, “সন্ত্রাসের ঘটনা রুখতে বিহারের সঙ্গে-সঙ্গে কেন্দ্রেরও ব্যর্থতা রয়েছে। বিরোধীদের রাজনৈতিক আক্রমণ করে সেই ব্যর্থতা ঢাকা দিতে পারবে না কংগ্রেস।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.