|
|
|
|
বিস্ফোরণের তদন্তে এখনও অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে পুলিশ |
স্বপন সরকার • পটনা |
জঙ্গিদের ফেলে যাওয়া ভোটার কার্ডের সূত্র ধরে এক জনকে আটক করা এবং গত কালের ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে আরও একটি বিস্ফোরক উদ্ধার করা।
বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের ৩৬ ঘণ্টা পরে তদন্তের অগ্রগতি বলতে কার্যত এটুকুই। সূত্রের খোঁজে এলাকা জুড়ে হন্যে হয়ে ঘুরছেন পুলিশ-গোয়েন্দারা। গত কাল রাতেই এনআইএ-র একটি দল বুদ্ধগয়ায় পৌঁছয়। তবে তারা এখনও তদন্তভার হাতে নেয়নি। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এনএসজি-র বোমা বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনও সূত্রই এখনও মেলেনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কাল একটি পুলিশ কুকুরকে বোধিবৃক্ষের নীচে আনা হলে কুকুরটি মন্দিরের বাঁ দিকে একটি প্রাচীরের কাছে ছুটে যায়। ওইখানে প্রাচীরটি বেশ নিচু এবং সেখান থেকে কোনও লোক সহজেই মন্দির চত্বরে ঢুকতে পারে বলে দাবি পুলিশের। বিহার পুলিশের ডিজি অভয়ানন্দ বলেন, “মনে করা হচ্ছে, নাশকতাকারীরা প্রাচীরের এই অংশ দিয়েই মন্দিরের ভিতরে ঢুকেছিল।” সেখানে একটি ব্যাগ, চপ্পল এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একটি কাপড় মিলেছে। ডিজি বলেন, “ব্যাগের ভিতরে কিছু কাগজ এবং একটি ভোটার কার্ড পাওয়া যায়। সেটি বিনোদ মিস্ত্রি নামে এক ব্যক্তির। বিনোদকে গয়ার বারাচাট্টি এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।” |
|
মহাবোধি মন্দিরে কড়া তল্লাশি। সোমবার। ছবি: পিটিআই |
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে বারাচাট্টিতে একটি সাইকেল সারাইয়ের দোকান আছে বিনোদের। বিনোদ পুলিশকে জানিয়েছেন, তিন দিন আগে তাঁর ভোটার কার্ডটি হারিয়ে যায়। পুলিশ অবশ্য এই বক্তব্য বিশ্বাস করছে না। ডিজি বলেন, “প্রয়োজনে বিনোদের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা হতে পারে।” আজ তল্লাশির সময় মহাবোধি মহাবিহার থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বৈজুবিঘা এলাকায় আরও একটি বোমা পুলিশ উদ্ধার করেছে। ডিজি বলেন, “অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জাতীয় বিস্ফোরকই এই ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত আরডিএক্স বা উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক ব্যবহারের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।” পুলিশ প্রাথমিক ভাবে মনে করছে, আগের দিন রাতেই এই বোমাগুলি লাগানো হয়েছিল। যে তিনটি জায়গায় বোমা ফাটেনি, সেখানে বোমার গায়ে ইংরেজি ও উর্দুতে লেখা নির্দেশিকা কোন বোমাটি কোথায় রাখতে হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, মন্দিরের ভিতরে ১৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। তার মধ্যে একটি ক্যামেরা কাজ করছে না। পুলিশ সিসিটিভি-র ফুটেজ থেকে বোধিবৃক্ষের কাছে বিস্ফোরণের ছবি উদ্ধার করতে পেরেছে। বিস্ফোরণ হয়েছে, মন্দিরের এমন তিনটি জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। ৮০ ফুট বুদ্ধ মূর্তিটিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য ২০ ফুট উপরে উঠে তিনটি বোমা রাখা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে রাতে কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছিল না। দুষ্কৃতীরা সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। ডিজি-র অনুমান, “মন্দিরের ভিতর সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত এমন কোনও স্থানীয় মানুষের সাহায্য ছাড়া এ কাজ করা সম্ভব নয়।”
মহাবোধি মন্দির চত্বর থেকে গ্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার হওয়ায় উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের আর কোনও নাশকতায় গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার দেখা যায়নি। গোটা দশেক আইইডি-বিস্ফোরক মহাবোধি মন্দিরে ঢুকিয়ে ফেলার পরেও কেন এত কম মাত্রার বিস্ফোরণ, তা নিয়েও তাঁরা ধন্দে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, পরিকল্পনার অভাব। যদিও পুলিশের একাংশের অনুমান, বিশেষ কোনও বার্তা দিতেই এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই দীর্ঘ দিনের আপত্তি সরিয়ে অবশেষে বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মহাবিহারের নিরাপত্তার দায়িত্ব সশস্ত্র রক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে সায় দিয়েছেন অছি পরিষদের সদস্যরা। এত দিন মন্দির চত্বরের বাইরে কিছু সশস্ত্র বিহার পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিহার সরকার ওই মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্ব সিআইএসএফ-এর হাতে তুলে দিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আজ বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করার পরে মন্দির কর্তৃপক্ষ ভিতরেও সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনে রাজি হয়েছেন।” ডিজি বলেন, “এত দিন ওঁরা মনে করতেন, অহিংসার জায়গায় কোনও অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী থাকবে না। শেষ পর্যন্ত ওঁরা রাজি হয়েছেন।”
|
পুরনো খবর: বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণ, আহত ২ সন্ন্যাসী |
|
|
|
|
|