পরিকল্পনা সঙ্ঘ পরিবারের
সুশাসনের সঙ্গে
হাতিয়ার রাম মন্দিরও
রেন্দ্র মোদী যখন এক দিকে উন্নয়নের স্লোগান তুলে লোকসভা ভোটের প্রচারে নেমেছেন, অন্য দিকে তখন হিন্দুত্বের কর্মসূচি পুনরুজ্জীবনের অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে ফেলেছে সঙ্ঘ পরিবার। বস্তুত, দিল্লিতে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বহু বছর পরে আবার এক সূত্রে নিজেদের বাঁধতে উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বরে রথযাত্রা শুরু করেছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। সেই রাম মন্দির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এক জোট হয়েছিল বিজেপি, আরএসএস এবং ভিএইচপি। বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। তার পর গত দু’দশকে এই তিন সংগঠনের মধ্যে নানা বিভেদ, নানা সংঘাত সৃষ্টি হয়। এত বছর পরে আবার পারস্পরিক সমন্বয় বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার এ জি নুরানি যাকে বলছেন, “এটি হল বিজেপি-র শ্রম বিভাজন। উদ্দেশ্য হিন্দু রাষ্ট্র। আরএসএস সাংস্কৃতিক দিক থেকে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ধর্মীয় দিক দিয়ে এবং বিজেপি রাজনৈতিক দিক দিয়ে একই উদ্দেশ্যে কাজ করছে।”
হিন্দুত্ব প্রশ্নে বিজেপি-র রণকৌশল কী? তাদের অ্যাকশন প্ল্যান বলছে, ফের রাম মন্দির নির্মাণের আওয়াজ তোলা হবে। উত্তরপ্রদেশে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মোদী-ঘনিষ্ঠ অমিত শাহকে। তিনি ইতিমধ্যেই রাম মন্দির গড়ে তোলার কথা বলেছেন। অমিতের পাশাপাশি উমা ভারতী, বরুণ গাঁধী, কল্যাণ সিংহ, বিনয় কাটিয়ার প্রমুখ নেতাকেও এই সংক্রান্ত প্রচার গড়ে তোলার কাজে লাগানো হবে।
অটলবিহারী বাজপেয়ীর হাত ধরে ক্রমশ উদারনৈতিক মুখ তুলে ধরা বিজেপি ফের কেন হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে? বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, তাদের ক্রমোত্থানের পিছনে মূল কারণ হিন্দুত্বই। ১৯৮৪ সালে উত্তরপ্রদেশের ৮৫টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৮৩টি-ই ছিল কংগ্রেসের দখলে। বিজেপি একটিও আসন পায়নি। ১৯৮৯ সালে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ১৫টি, বিজেপি ৮টি এবং জনতা দল ৫৪টি আসন পায়। কিন্তু ’৯০ সালে রাম মন্দির আন্দোলন শুরুর পরে ছবিটা পাল্টে যায়। ১৯৯১ সালে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র আসন বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ (কংগ্রেস ৫ ও জনতা দল ২২)। ’৯৬ সালে সংখ্যাটা হয় ৫৩ (কংগ্রেস ২)।
বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করা হয়েছিল বলেই উত্তরপ্রদেশে এই ক্রমিক শক্তিবৃদ্ধি ঘটেছিল। উদারনৈতিক মুখ তুলে ধরার পর থেকে আবার জনসমর্থনে ভাটা পড়তে থাকে। গত লোকসভা ভোটে হিন্দুত্বকে গুরুত্ব না-দিয়ে আডবাণীর নেতৃত্বে সুশাসনকে প্রধান হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। অনুপ্রবেশ ও পাক সন্ত্রাসকে তুলে ধরে জাতীয়তাবাদী প্রচার করা হয়েছিল। অনন্ত কুমার, সুধীন্দ্র কুলকার্নির মতো প্রচারের দায়িত্ব পাওয়া নেতারা তখন বলেছিলেন, নবীন প্রজন্মের কাছে রামমন্দির একটি মৃত বিষয়। কিন্তু সেই রণকৌশলে লাভের লাভ কিছু হয়নি। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র আসন সংখ্যা কমে হয়েছে ১০ (কংগ্রেস ২২)।
বিজেপি নেতারা এখন বলছেন, ’৯০ সালের ১৭ অক্টোবর দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাব ছিল, রাম-রথ যাত্রা বিরাট সাফল্য পেয়েছে। রাম জন্মস্থানে রামমন্দির নির্মাণ করে হিন্দু আবেগকে মর্যাদা দিতে হবে। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ বলেন, “বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ সরকারের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে সে দিন যে সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু প্রত্যাহার করা হয়নি। এই দলীয় কর্মসূচি আজও বহাল আছে।”
আপাতত সঙ্ঘের সিদ্ধান্ত:
• ’৮৯ সালে ধর্মসংসদের সিদ্ধান্ত অনুসারে সাধুদের নিয়ে চতুর্মাস কর্মসূচি ফের শুরু হবে এই বর্ষায়।
• জেলায় জেলায় সাধুদের পদযাত্রা হবে।
• বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দুই মহিলা সংগঠন দুর্গাবাহিনী এবং মহিলা বিভাগের সদস্য সংখ্যা বাড়াতে অভিযান চালানো হবে,
• লোকসভার প্রার্থী হিসাবে আরও বেশি সংখ্যায় সাধুদের মনোনয়ন দেওয়া হবে,
• বিজেপি-র শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-কেও ভোট প্রচারে নামানো হবে,
• আরএসএস পরিচালিত স্কুলগুলিতে হিন্দু রাষ্ট্র সম্পর্কিত প্রচার অভিযান বাড়ানো হবে।
তবে অতীতে বিজেপি-কে যে ভাবে মুসলিম ও খ্রিস্টান বিরোধী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, দলীয় নেতারা এখন তার বিরোধিতা করছেন। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি বলেন, “এ বার নির্বাচনী প্রচারে আমাদের প্রধান বক্তব্য হল, ভারতকে নরম নয়, এক শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ কোনও একটি সম্প্রদায়কে তোষণ করা নয়। ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির জন্য কংগ্রেস নিরাপত্তার প্রশ্নেও আপস করছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে গেলে, প্রশাসনকে দক্ষ করতে গেলে নিরাপত্তার প্রশ্নেও ভারতকে শক্তিশালী হতে হবে।”
অর্থাৎ, এক দিকে মোদীকে সামনে রেখে সুশাসনের প্রচার করবে বিজেপি। তুলে ধরা হবে পাক সন্ত্রাস, অনুপ্রবেশ, জাতীয় নিরাপত্তা প্রসঙ্গ। অন্য দিকে আরএসএস এবং ভিএইচপি-কে দিয়ে হিন্দুত্বের পুনরুত্থানের চেষ্টা চালানো হবে। যার কেন্দ্রে প্রায় দু’দশক আগের সেই রাম মন্দির আন্দোলন।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.