কেন খুন হলেন কসবার বৃদ্ধা, পুলিশ আঁধারেই
ন্যাশনাল স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষিকা সুলোচনা চারি খুন হয়েছেন রবিবার দুপুর আড়াইটে থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে। ধারালো অস্ত্রের ছ’টি আঘাতের পাশপাশি খুনিরা তাঁর মুখও চেপে ধরেছিল। অস্ত্রের আঘাত এবং শ্বাসরোধেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে।
তবে নিছক টাকা-গয়না লুঠ না অন্য কোনও আক্রোশে এই ভাবে খুন, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় গোয়েন্দারা। ধন্দ রয়েছে আততায়ীদের ব্যাপারেও। তবে আততায়ী যে বা যারাই হোক, তারা যে সুলোচনাদেবীর পরিচিত ছিলেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা।
রবিবার বিকেলে কসবার বেদিয়াডাঙা সেকেন্ড লেনের ফ্ল্যাটে খুন হন ৬৯ বছরের ওই শিক্ষিকা। পুলিশ জানায়, খুনি তাঁর ঘরের আলমারি এবং সব জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করেছে। এমনকী কয়েকটি সোনার বাক্স খোলা অবস্থায় বিছানায় পড়েছিল। আলমারি খোলা থাকলেও, তাতে কোনও টাকা পয়সা বা গয়না পাওয়া যায়নি। টাকা পয়সার লোভে ওই শিক্ষিকাকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানালেও, পড়শি এবং তাঁর আত্মীয়ের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে সুলোচনাদেবী খুব একটা সোনার গয়না পরতেন না। মাঝে মাঝে তিনি ঝুটো গয়না পরতেন বলে প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন। সুলোচনাদেবীর পড়শি এবং তাঁর বোনঝি, বেহালার বাসিন্দা নীলাঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে পুলিশ তাঁর সম্পত্তি কিংবা টাকা পয়সার সঠিক পরিমাণ জানতে পারেনি। সুলোচনাদেবীর ব্যাঙ্কে কত টাকা রয়েছে, তা জানার জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন গোয়েন্দারা।
তবে খুনিরা যে পাকা দুষ্কৃতী নয়, তা প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। গোয়েন্দারা জানান, যে ভাবে বৃদ্ধার শরীরে একাধিক আঘাত করা হয়েছে, তা দেখে মনে করা হচ্ছে, এটা পেশাদার খুনির কাজ নয়। ওই শিক্ষিকার মোবাইলটি পুলিশ উদ্ধার করছে। তবে সেটি খারাপ বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। মোবাইলের কললিস্ট দেখে পুলিশ জেনেছে, রবিবার সকালে ৭টা ৪০ নাগাদ এক ছাত্র তাঁকে ফোন করে। সেটিই তাঁর মোবাইলের শেষ ফোন। সুলোচনাদেবী ল্যান্ড ফোনটিই বেশি ব্যবহার করতেন বলে জেনেছে পুলিশ।
সোমবার সকালে বেদিয়াডাঙার ওই বহুতলে গিয়ে দেখা যায়, এ দিনও কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়নি। মূল ফটক খোলা। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে একটু এগোতেই উপরে ওঠার সিঁড়ি। চারতলার এই বহুতলের সামনের দিকে তিনটি এবং পিছনের দিকে তিনটি ফ্ল্যাট। সুলোচনাদেবীর ফ্ল্যাটটি চারতলায় পিছনের দিকে। রবিবারের ঘটনার পর পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে দিয়ে গিয়েছে। এ দিন দুপুরে ওই ফ্ল্যাটে যান কসবা থানার আধিকারিকরা। যান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরাও। ফ্ল্যাটের দরজা খুলেই বসার ঘর। ঢোকার মুখেই চোখে পড়ল চাপ চাপ রক্ত। শোয়ার ঘরে বিছানার পাশে জমাট রক্ত। এখানেই পড়েছিল সুলোচনাদেবীর দেহ।
ঠিক নীচের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মনজিৎ কৌর রবিবারের ঘটনায় স্তম্ভিত। তিনি বলেন, “আমার উপরেই ওঁর ফ্ল্যাট। আমি বাড়িতেই ছিলাম। কিন্তু কোনও চেঁচামেচি বা শব্দ শুনিনি। শুনলে তো ফ্ল্যাটের বাকিদের ডেকে ওঁর ঘরে যেতাম। উনি খুব মিশুকে ছিলেন।”
সুলোচনাদেবীর মৃত্যুতে বিচলিত তাঁর প্রতিবেশী শান্তি রঘুপতির পরিবার। তাঁর বাড়িতেই সুলোচনাদেবী ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবি রাখতেন।
শান্তিদেবী এ দিন বলেন, “প্রতি রবিবারের মতো বৌদ্ধমন্দিরে প্রার্থনা সেরে ফিরে দুপুর দেড়টার সময় আমাকে ডেকে কথাও বলেছেন। তবে বেশিক্ষণ দাঁড়াননি। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলেন খুব খিদে পেয়েছে, এখন যাই।” সারাদিনই বৃদ্ধা ছাত্রছাত্রী পড়াতে ব্যস্ত থাকতেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.