শুনছেন সরকারি মুরগি আজ ১২৯ টাকা কেজি।
অ্যাঁ! বলেন কী?
হ্যাঁ। এই তো দু’কেজি কিনে আনলাম। এখনই যান। শেষ হয়ে যাবে।
সত্যিই মহাকরণের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের স্টলে সোমবার মুরগির মাংস বিক্রি হয়েছে ১২৯ টাকা কেজি দরে। অল্পক্ষণেই পাঁচ কেজি মুরগি উবে গেল। দেখা গেল ১ কেজির কমে কেউ কিনছেনই না। প্রতিবেশীদের জন্যও নিতে ভুলছেন না। মহাকরণে মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে দেখা করতে আসা বাইরের লোকেরাও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সস্তার মুরগি।
শুক্রবারও মহাকরণে প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের স্টলে মুরগির দর ছিল ১৩৭ টাকা কেজি। তাতেই না কি রেকর্ড পরিমাণ মুরগি বিক্রি হয়েছে। ওই স্টলের পক্ষ থেকে অশোক দাস জানান, ওই দিন দু’দফায় ৪০ কেজি মাংস বিক্রি হয়েছে। চাহিদা আরও ছিল। কিন্তু হরিণঘাটা থেকে মুরগি আর আসেনি বলে বিক্রি করা যায়নি।
অন্য দিকে, সরকারি দাম ১২৯ টাকা হওয়া সত্ত্বেও সেখানে ১৪০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠল বেহালার এস এন রায় মার্কেটে। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন বেশ কয়েক জন ক্রেতা। যদিও ওই স্টল পরিচালকদের বক্তব্য, ভুলবশত এটা হয়েছে। বাড়তি টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে ক্রেতাদের। |
মহাকরণের স্টলে মুরগির ‘সর্বশেষ’ দর। —নিজস্ব চিত্র |
প্রশাসন সূত্রের খবর, শনিবার থেকে সরকারি মুরগির দাম কমে ১২৯ টাকা কেজি হয়। সোমবার মহাকরণে এই খবর জানাজানি হতেই মুরগি কেনার ধুম আরও বাড়ে। এ দিন হরিণঘাটা থেকে সকালে মহাকরণে ২৫ কেজি মুরগি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিকেল ৫টার মধ্যে তা উধাও। স্টল থেকে জানা গেল, যে-ই আসছেন ১-২ কিলো করে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ অগ্রিম টাকা দিয়ে মুরগির মাংস ‘বুক’ করে রেখে গিয়েছেন। অফিস ছুটির পরে সেই মাংস কিনে বাড়ি ফিরেছেন। বিক্রি বেড়েছে চিকেন নাগেট্স, চিকেন সসেজেরও। কারণ পাঁচ-দশ টাকা করে দাম কমেছে ওই সমস্ত পণ্যেরও। তবে রাজ্য প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন নিগমের এমডি জয়ন্ত চৌধুরী জানান, পোলট্রি ফেডারেশন থেকে তাঁরা যে দরে মুরগি কিনছেন সেই মতোই বাজারের দাম ঠিক হচ্ছে। তাই সোমবারের দাম বুধবার না-ও থাকতে পারে বলে জানালেন তিনি।
গত মাসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুরগির দাম ১৫০ টাকা কেজি করে বেধে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের কিছু স্টল ও পুরসভার কয়েকটি বাজার ছাড়া কলকাতার অধিকাংশ বাজারেই ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি হয়েছে। বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের যে টাস্ক ফোর্স আছে, সেখানে এই বিষয়টি নিয়ে বারবার আলোচনা হলেও বেসরকারি বাজারগুলির উপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বহু বাজারে চড়া দামেই বিকোচ্ছে মুরগি। বিক্রেতাদের দাবি, তাঁরা যে দরে পাইকারি বাজার থেকে মুরগি কেনেন, সেই অনুপাতেই খুচরো বাজারে দাম ঠিক করেন। সরকার দাম বেঁধে দিলেও ওই দরে মুরগি বিক্রি করা সম্ভব নয় বলেই তাঁরা জানিয়েছিলেন। রবিবারও উত্তর কলকাতার নাগেরবাজার থেকে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাটের মতো বহু বাজারে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে মুরগির মাংস।
সাধারণকে কম দামে মুরগির মাংস দিতে রাজ্য প্রাণীসম্পদ দফতরের উদ্যোগে পোলট্রি ফেডারেশন সংস্থা কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রতি জেলার শহরে মুরগির বিক্রির কেন্দ্র চালু করেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন দফতর ও কলকাতা পুরসভা দফায় দফায় পোলট্রি ফেডারেশন এবং বিভিন্ন বাজার কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। একই সঙ্গে শহর জুড়ে সরকারি স্টলের সংখ্যাও বাড়ানো হয়। রবিবার শহরের ১১টি সরকারি স্টলে ৩,০৯৭ কেজি মুরগি বিক্রি হয়েছে।
পুরসভার বাজার দফতরের এক আধিকারিকের অবশ্য বক্তব্য, “সরকারি স্টলে মুরগির দাম কম হওয়ায় বেসরকারি বাজারেও দাম কমানোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে।” যদিও পোলট্রি ফাউন্ডেশনের সভাপতি মদন মাইতির বক্তব্য, “গোটা মুরগির দাম কমতে থাকায় মাংসের দরও কমছে।” তিনি জানান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১২২, হাওড়ায় ১২২, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১১৩, বাঁকুড়ায় ১১৪, বর্ধমানে ১১৪ ও সিউড়িতে ১১৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কিন্তু এ বার অভিযোগ উঠল প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে চলা পোলট্রি ফেডারেশনের স্টলে মুরগির দাম নিয়েও। আর তা ঘিরেই ক্ষোভ দেখান বেহালার এস এন রায় মার্কেটের ক্রেতারা।
অভিযোগ, শনিবার থেকে কিলো প্রতি ১২৯ টাকা দাম নির্ধারিত হওয়া সত্ত্বেও রবিবার বেহালার ওই বাজারে পোলট্রি ফাউন্ডেশনের স্টলে ১৪০ টাকা করে বিক্রি হয় মুরগি। স্থানীয় এক ক্রেতা বলেন, “দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে বলা হলেও ওঁরা তা মানতে চাননি।” সে দিন ওই স্টল থেকে প্রায় ১৭১ কিলোগ্রাম মুরগি বিক্রি হয়েছে। ক্রেতাদের পক্ষ থেকেই বিষয়টি জানানো হয় স্থানীয় বাসিন্দা তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহকে। ঘটনাটি প্রাণীসম্পদ দফতরের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে জানান তিনি। খবর পাঠানো হয় পোলট্রি ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতির কাছেও।
সংস্থার সভাপতি মদন মাইতি বলেন, “এই স্টলে অনভিজ্ঞ সেল্সম্যান থাকায় সমস্যা হয়েছে।” তিনি জানান, সে দিন ১২০ কিলোগ্রাম বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা দরে। ওই বাড়তি টাকা ক্রেতাদের ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। |