জ্যোতি বসুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরির মামলা। দীর্ঘ ন’বছরেও কিনারা হয়নি তার। হাইকোর্ট এ বার সেই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিল। ঘটনাচক্রে এই নির্দেশটি এল প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শততম জন্মদিনে।
চুরি হওয়ার পরে ন’বছরের মধ্যে শেষ দু’বছর রাজ্যে তৃণমূলের সরকার চলছে। তার আগের গোটা সময়টা ক্ষমতায় ছিল বামেরা। এবং মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন পুলিশমন্ত্রী। চুরির ওই ঘটনায় অভিযুক্ত এক জন পুলিশ। অর্থাৎ এমন কেউ নয়, যাকে চিহ্নিত করা যায়নি। অথবা যে ফেরার। মামলার নিষ্পত্তিতে তবু কেন এত দেরি? হাইকোর্টের নির্দেশ সোমবার সে প্রশ্নই উস্কে দিয়েছে। বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে, ওই চুরির ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এএসআই অর্ধেন্দু মণ্ডলের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দ্রুত শেষ করতে হবে।
সালটা ২০০৪। জ্যোতিবাবু তখন সল্টলেকের ইন্দিরা ভবনে। শরীরটা বিশেষ ভাল যাচ্ছিল না। ব্যাঙ্কের কাজ নিজে করতে পারতেন না। দলের নির্দেশে প্রবীণ নেতার দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন জয়কৃষ্ণ ঘোষ। মাসিক ১ টাকার বিনিময়ে তিনি জ্যোতিবাবুর সচিবের কাজ করতেন। তিনিই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা, জমা দেওয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজ দেখাশোনা করতেন। তাঁকে সহায়তা করতেন ইন্দিরা ভবনের দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা। তাঁদেরই এক জন কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলার কথা জয়কৃষ্ণবাবুকে জানান। ২০০৪ সালের ৪ নভেম্বর উত্তর বিধাননগর থানায় এফআইআর দায়ের করেন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক্তন আপ্তসহায়ক জয়কৃষ্ণবাবু। তিনি অভিযোগ করেন, জ্যোতি বসুর এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক থেকে ১ লক্ষ ৫০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। টাকা চুরির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে ইন্দিরা ভবন থেকে জ্যোতি বসুর নানা জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার অভিযোগও করেন তিনি।
জয়কৃষ্ণবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। বুদ্ধদেববাবুর সরকার তদন্তভার তুলে দেয় রাজ্য গোয়েন্দা শাখার সুপারের হাতে। তিনি তদন্ত করে দেখেন, পুলিশকে দিয়ে কাজ করানোর সুযোগকে কাজে লাগিয়েই টাকা তুলেছেন অর্ধেন্দু মণ্ডল নামে এক এএসআই। ওই বছরের ১০ থেকে ১৯ মার্চের মধ্যে বিভিন্ন দিনে জ্যোতিবাবুর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের সল্টলেকের বিকাশভবন, পিএনবি এবং এ ই ব্লক শাখা থেকে। প্রতি বারেই এটিএম কার্ড ব্যবহৃত হয়েছে।
অভিযুক্ত ওই পুলিশকর্মীর বাড়ি নদিয়ার নাকাশিপাড়ার রাধানগর গ্রামে। তিনি অনেক দিন ধরে ইন্দিরা ভবনে কর্মরত ছিলেন। অর্ধেন্দু মণ্ডলের নাম ওঠার আগেই গোয়েন্দা অফিসারেরা তদন্ত করে নিশ্চিত হয়ে যান, যিনি টাকা তুলেছেন তিনি আগে থেকেই ওই অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে তা জানতেন। তিনি সব টাকা তোলার চেষ্টাও করেননি।
যেহেতু অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারি চাকরি করেন, তাই তদন্তের শেষে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল (স্যাট)-এ মামলা শুরু হয়। প্রধান অভিযুক্ত করা হয় অর্ধেন্দু মণ্ডলকেই। শুনানির শেষে প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু করার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে আপিল মামলা করেন অর্ধেন্দুবাবু। সেই আপিল মামলার রায় দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এই ফৌজদারি মামলাটি অত্যন্ত গুরুতর। দ্রুততার সঙ্গে মামলার নিস্পত্তি করতে হবে।
|