মানবাধিকার কর্মী নন্দদুলাল দাসের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চাপান-উতোর রবিবারেও অব্যাহত।
দু’দিন আগেই ‘মাওবাদী’ তকমা দিয়ে নন্দদুলালবাবুর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগে এফআইআর করেছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয়বাবু। এ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হয়। রবিবার হাবরার একটি জনসভায় যোগ দেওয়ার পরে জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, নন্দদুলালবাবু সুটিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে যে মন্তব্য করেছেন, তার জন্য যদি ভুল স্বীকার করে লিখিত ভাবে ক্ষমা চান, তা হলে তিনি অভিযোগ প্রত্যাহারের কথা ভাববেন। নন্দদুলালবাবু অবশ্য ওই শর্ত মানবেন না বলে জানান।
জ্যোতিপ্রিয়বাবু অবশ্য এ দিনও নন্দদুলালবাবুর সঙ্গে মাওবাদীদের যোগ নিয়ে নিজের অবস্থানে অনড়। তিনি বলেন, “২০০১ সাল থেকে নন্দদুলালের সঙ্গে মাওবাদীদের যোগ রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে বরুণ বিশ্বাসকে খুনের যে অভিযোগ ওঁরা তুলছেন, সেটা আদালতে গিয়ে প্রমাণ করুন।” তবে, তাঁরই দলের সুটিয়ার দুই নেতা বরুণের বাবা জগদীশ বিশ্বাস, প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে গাইঘাটা থানায় যে ডায়েরি করেছেন, তা নিয়ে তাঁর কিছু বলার নেই বলে জানান জ্যোতিপ্রিয়বাবু।
নন্দদুলালবাবু সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এ গাইঘাটা লোকাল কমিটির সম্পাদক। রবিবার তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করা হোক, এটাই চাই। কিন্তু সে জন্য কোনও শর্ত মানব না। উনি আমাকে মাওবাদী বলার পর থেকে তৃণমূল বাদে সব রাজনৈতিক দল পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।”
শুক্রবার সুটিয়ায় বরুণ বিশ্বাসের স্মরণসভায় নন্দদুলালবাবু বরুণ-হত্যায় জ্যোতিপ্রিয়বাবুর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। যার জেরেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, নন্দদুলালবাবু সুটিয়ার সভা থেকে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। মানুষকে প্ররোচিত করে তাঁর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যে চারটি ধারায় নন্দদুলালবাবুর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে, সব ক’টিই জামিনযোগ্য। তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এ দিন জানানো হয়, নন্দদুলালবাবু এবং বরুণের বাবা-সহ প্রতিবাদী মঞ্চের যাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে, তাঁদের নিরাপত্তা চেয়ে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে। এ দিকে, এলাকার দুই তৃণমূল নেতা যে ভাবে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তাঁর যোগসাজশের অভিযোগ তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন, তাতে বরুণের বাবা জগদীশবাবু বলেন, “ছেলের খুনের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলাম। এখন চাই, আমার বিরুদ্ধেও সিবিআই তদন্ত হোক। দোষী হলে জেলে যেতে রাজি।” জ্যোতিপ্রিয়বাবু ওই অভিযোগ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কেউ সিবিআই তদন্ত চাইতেই পারেন। এ নিয়ে কিছু বলার নেই।”
|