মানবাধিকার কর্মীকে এ বার মাওবাদী তকমা জ্যোতিপ্রিয়র
শুধু মাওবাদী বলে উল্লেখ করাই নয়। নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগে গাইঘাটার এক মানবাধিকার কর্মীর বিরুদ্ধে সরাসরি পুলিশে এফআইআর দায়ের করলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই সঙ্গে সুটিয়ার নিহত প্রতিবাদী যুবক বরুণ বিশ্বাসের বাবা জগদীশ বিশ্বাস-সহ মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছেন এলাকার অন্য দুই তৃণমূল নেতা।
এর আগে একাধিক বার একাধিক ব্যক্তিকে মাওবাদী তকমা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর বেলপাহাড়ির সভায় সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কৃষিজীবী পরিবারের যুবক শিলাদিত্য চৌধুরীকে ‘মাওবাদী’ বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এক টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে প্রশ্নকারিণী কলেজছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজ থেকে শুরু করে সম্প্রতি কামদুনির প্রতিবাদী মহিলাদেরও মাওবাদী বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া মাওবাদী তকমার জেরেই শিলাদিত্যকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ দায়ের হয়নি। গাইঘাটার মানবাধিকার-কর্মী সভাপতি নন্দদুলাল দাসের বিরুদ্ধেও কিছু করা হয়নি। শিলাদিত্যর বিরুদ্ধে সভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। নন্দদুলালের বিরুদ্ধে চারটি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। ব্যক্তির নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, ভয় দেখানো, কথার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলার অবনতি

বরুণ বিশ্বাস
ঘটানো এবং সম্মানহানি। বারাসত থানা এফআইআরের কপি গাইঘাটা থানায় পাঠিয়েও দিয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা করা হবে।” শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবশ্য নন্দদুলালের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
নন্দদুলাল একা নন। বরুণের বাবা জগদীশ বিশ্বাস, প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধেও গাইঘাটা থানায় ডায়েরি করেছেন সুটিয়া এলাকার দুই তৃণমূল নেতা মিহির বিশ্বাস এবং বিষ্ণুপদ ঘোষ। অভিযোগ, জগদীশবাবুরা মঞ্চের তরফ থেকে জ্যোতিপ্রিয়বাবু, মিহিরবাবু এবং বিষ্ণুবাবুর বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় এবং বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের যোগ রয়েছে। বিষ্ণুবাবু এ বার গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী। তিনি বলেন, “প্রতিবাদী মঞ্চের লোকেরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলছে, জ্যোতিপ্রিয়বাবু এবং আমরা নাকি বরুণকে খুন করিয়েছি। মঞ্চের সঙ্গে মাওবাদী, সিপিএম, কংগ্রেস যুক্ত রয়েছে।” মঞ্চের সভাপতি ননীগোপালবাবু উত্তরে বলেন, “সম্পূণর্র্ মিথ্যা কথা। মঞ্চে সব রাজনৈতিক দলেরই লোক আছে। মঞ্চের কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য নেই। আমাদের যে চার জনের নামে অভিযোগ হয়েছে, নিরাপত্তার জন্য তাঁদের সঙ্গে পুলিশ থাকে। তা হলে দুষ্কৃতীরা তাঁদের কাছে আসবে কী করে?”
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার। ওই দিন ছিল বরুণ বিশ্বাসের স্মরণসভা। সভামঞ্চে নন্দদুলালবাবু বরুণ-হত্যায় জ্যোতিপ্রিয়বাবুর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, নন্দদুলালবাবু দাবি করেছিলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁরা বরুণ-হত্যার বিষয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন। তাতে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। নন্দদুলাল সভায় বলেন, ২০০২ সালেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে বরুণকে সমাজবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে লিফলেট ছড়ানো হয়েছিল। গত বছর গুলি খাওয়ার পরেও বরুণ ৪৫ মিনিট গোবরডাঙা স্টেশনে পড়ে ছিলেন। দুই তৃণমূল নেতা মানুষকে পুলিশি মামলার ভয় দেখিয়ে তাঁকে উদ্ধার করতে দেননি।
এই বক্তব্যের জেরেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, নন্দদুলালবাবু সুটিয়ার সভা থেকে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। মানুষকে প্ররোচিত করে তাঁর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, “এক মাওবাদী ওই অনুষ্ঠান-মঞ্চে কী ভাবে উঠল জানি না। আমি দশ বছর ধরে ওকে (নন্দদুলালবাবু) চিনি। দশ বছর ধরে ওর সঙ্গে মাওবাদীদের যোগ রয়েছে। মন্ত্রী হিসেবে নয়, বিধায়ক এবং দলের পর্যবেক্ষক হিসেবে আমি পুলিশের কাছে ওই অভিযোগ দায়ের করেছি।”
নন্দদুলালবাবু অবশ্য ঘাবড়ে যাননি। মাওবাদীদের সঙ্গে তাঁর যোগ নেই দাবি করে চাঁদপাড়ার বাসিন্দা, স্কুলশিক্ষা দফতরের গাইঘাটা অফিসের কর্মী বছর চুয়াল্লিশের নন্দদুলালবাবু বলেন, “এ আর নতুন কী? অপ্রিয় কথা বলায় মুখ্যমন্ত্রীও তো আগে কয়েক জনকে মাওবাদী বলেছেন। মনে হচ্ছে এটাই রেওয়াজ হয়ে যাচ্ছে। এতে আমি ভয় পাচ্ছি না।”
তবে এই ঘটনায় চাঁদপাড়া এলাকার সাধারণ মানুষের মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অনেকেই দাবি করছেন, যেখানেই সরকারের বিরুদ্ধে কথা উঠছে, সেখানেই ‘মাওবাদী’ বা ‘সিপিএম’ তকমা দেওয়া হচ্ছে। চাঁদপাড়ার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা দাবি করেন, গাইঘাটার মানবাধিকার সংগঠনের চাঁদপাড়া শাখার সভাপতি নন্দদুলালবাবু মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত বলে তিনি কখনও শোনেননি।
আর পুত্রহারা জগদীশবাবু তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ হয়েছে শুনে হেসে ফেলেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য সত্য প্রকাশ হোক। সেই জন্য আমরা সিবিআই তদন্ত চেয়েছি। কিন্তু নানা ভাবে সেই দাবি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.