কামদুনির সহযোগিতা নিয়ে সংশয়ে সিআইডি
বারাসত আদালতে অসম্পূর্ণ চার্জশিট পেশ করে ভর্ৎসনা জুটেছিল সিআইডি-র। তার জেরেই ধর্ষণ-কাণ্ডের ঠিক এক মাসের মাথায় স্থানীয় মানুষের কাছে তথ্য চেয়ে কামদুনিতে পোস্টার সাঁটল তারা।
কিন্তু সিআইডি-র তদন্ত ঘিরে ওই ভেড়ি ঘেঁষা গ্রামে যে ‘অনাস্থা’র বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তাতে তদন্তকারী সংস্থার আহ্বানে বাসিন্দারা কতটা সাড়া দেবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের প্রতিক্রিয়া সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। তাঁদের বক্তব্য, তদন্তের গোড়াতেই যখন তাঁরা তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে গিয়েছিলেন, তখন সিআইডি তাঁদের সাক্ষ্য তো নেয়ইনি, উল্টে গ্রামের বাইরের বহু লোকের বয়ানের ভিত্তিতে চার্জশিট তৈরি করেছে। ধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযুক্ত একাধিক দুষ্কৃতীকে আড়াল করতেই সিআইডি ওই কাজ করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। এই পরিস্থিতিতে কামদুনির মানুষ আদৌ সহযোগিতা করবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পুলিশকর্তারাই।
কামদুনির মানুষের সিবিআই তদন্তের দাবি পুলিশের সংশয় আরও বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশ। শনিবারও ওই গ্রামের মানুষ দিনভর জটলা করে সিআইডি-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণের পরে নৃশংস ভাবে খুন করার পরেও সিআইডি যে মামলাটিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি, সেটা আদালতই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তার পরেও কী ভাবে ওই তদন্তকারী সংস্থার উপরে আস্থা রাখা যায়, সেই প্রশ্নই তুলেছেন কামদুনির মানুষ। এবং সেই কারণেই সিবিআই তদন্তের উপরে তাঁরা ভরসা রাখছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। একই সঙ্গে সিআইডি তদন্তের প্রতিবাদ জানাতে আজ, রবিবার কামদুনিতে মোমবাতি মিছিল করার পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। গ্রামের মানুষের বক্তব্য, “রবিবার ধর্ষণ-
কাণ্ডের এক মাস পূর্ণ হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যেই দোষীরা শাস্তি পাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কার্যত বিচারই শুরু হল না।” গত মাসের সেই দিনটাকে মনে করাতে রবিবার স্মরণসভারও আয়োজন করেছেন কামদুনির মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে সিআইডির পোস্টারকে কেন্দ্র করে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কামদুনিতে। গত ৭ জুন স্থানীয় চ্যাংড়াখালির যে ঘেরা জমিতে কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুন করে দুষ্কৃতীরা, এ দিন সেখানেই ওই পোস্টার দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন গ্রামের মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, অভিযুক্তদের মধ্যে এক জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে সিআইডি গোটা ঘটনা চাপা দিতে চাইছে। সেই উদ্দেশ্যেই ধর্ষণ কাণ্ডে অসম্পূর্ণ চাজর্শিট পেশ করেছিল তারা, যাতে অভিযুক্তদের কোনও শাস্তি না হয়। মৃত কলেজছাত্রীর এক ভাইয়ের (অভিযোগকারী নন) অভিযোগ, “সিআইডি অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই তাদের আর কিছু জানানোর নেই।” তাঁর আরও অভিযোগ, “গোপন জবানবন্দিতে আমি যে কথা বলেছিলাম, তা না লিখে আমার মুখে অন্য কথা বসানো হয়েছে।”
কী আছে পোস্টারে? সিআইডি লিখেছে, কামদুনির ধর্ষণ মামলায় কারও কাছে কোনও তথ্য থাকলে তা যেন ৯ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের বারাসত অফিস ও ভবানী ভবনে গিয়ে জানানো হয়। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওই তথ্য জানানো যাবে।
কিন্তু কেন এই পদক্ষেপ? পুলিশকর্তাদের একাংশ বলছেন, বারাসত ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় সিআইডি-র পেশ করা চার্জশিটে বেশ কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরার পরে তারা অপেক্ষাকৃত সতর্ক হয়ে বাকি তদন্ত শেষ করতে চাইছে। পোস্টার সাঁটিয়ে আমজনতার তথ্য চাওয়া সেই সতর্কতারই প্রতিফলন বলে মনে করছেন ওই পুলিশকর্তারা।
এর মধ্যেই শনিবার ফরওয়ার্ড ব্লকের সংগঠন যুবলিগের তরফে সাত জনের এক প্রতিনিধি দল মৃত ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে ওই পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁরাও সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। ওই দলটি এর পরে টুম্পা কয়ালের বাড়িতে গেলেও তিনি বাড়িতে ছিলেন না। টুম্পার সঙ্গে দেখা না হলেও কামদুনি আন্দোলনের অন্য মুখ মৌসুমী কয়ালের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.