জামিন পেলেন স্বামী-শ্বশুর
বেঁটে বলে কার্নিসে ঝুলিয়ে নির্যাতন গৃহবধূকে
উ লম্বায় ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি। স্বামীর দৈর্ঘ্য আর কয়েক ইঞ্চি বেশি। তাও বউকে লম্বা করতে কখনও কার্নিসে, কখনও বা গ্রিল ধরে একটানা ঝুলিয়ে রাখা হত। দ্রুত লম্বা করতে জোর করে খাওয়ানো হত ওষুধও। এক বছর ধরে এই নির্যাতন চালানো হয়েছে ঘটেছে হুগলির গোঘাটের পাণ্ডুগ্রামের বধূ অনুভা মণ্ডলের উপর।
শুক্রবার আরামবাগ মহকুমা আদালত অনুভার স্বামী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বাবলু মণ্ডলকে ৬ মাস এবং শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত হাইস্কুল শিক্ষক বিশ্বনাথ মণ্ডল, শাশুড়ি সুমিতা মণ্ডল, ননদ নমিতা সামুই এবং নন্দাই ভক্তদাস সামুইয়ের ৩ মাসের জেলের নির্দেশ দিল। বিচারক সৌরভ দে আসামিদের প্রত্যেকের ৫০০০ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক মাসের জেলের নির্দেশও দেন। সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করার জন্য জামিন প্রার্থনা করেন। যে হেতু সাজার মেয়াদ তিন বছরের নীচে, তাই আদালত জামিন মঞ্জুর করে। এত অল্প শাস্তিতে অবশ্য খুশি হতে পারেননি অনুভা। সকলেই জামিন পেয়ে যাওয়ায় তাঁর দুঃখ আরও বেড়ে গিয়েছে।
কী ভাবে কার্নিস ধরে ঝুলতে হত তা দেখাচ্ছেন অনুভা। ছবি: শুভ্র মিত্র
২০০৬ সালে অনুভার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বাবলু মণ্ডলের। অনুভার অভিযোগ, তাঁর ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও বিয়ের পর থেকে তাঁকে লম্বা করতে কার্নিস ধরে ঝুলে থাকতে বাধ্য করা হত। জোর করে খাওয়ানো হত লম্বা হওয়ার ওষুধ। খর্বাকৃতির জন্যই বিয়ের সময়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা পণের পরও বাপের বাড়ি থেকে টাকার দাবি করে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হত। বছরখানেক পরেই তিনি ফিরে আসেন বাপের বাড়ি, বাঁকুড়ার জয়পুরের টানাদিঘি গ্রামে। ২০০৮ সালে গোঘাট থানায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে জামিনে থাকা বাবলু মণ্ডলের ৭০ বছরের বৃদ্ধ বাবা বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, “অভিযোগ ঠিক নয়, আমাদের হেনস্থা করতেই কাল্পনিক অভিযোগ করা হয়েছে।” পাণ্ডুগ্রামে তাঁদের প্রতিবেশী সঞ্জয় মণ্ডল, আরতি ঘোষও ঐ শিক্ষক পরিবারটির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বিশ্বাস করতে পারেননি।
বাঁকুড়ায় বাপের বাড়িতে বসে বছর পঁচিশের অনুভা কিন্তু তাঁর উপর নির্যাতনের বিশদ বিবরণ দেন। “মেপেজুপে বিয়ে করার পরও আরও লম্বা হওয়ার জন্য বাড়ির গ্রিলের রডে, কার্নিসে ঘন্টার পর ঘন্টা ঝুলিয়ে রাখা হত। না পারলেই চলত মার। পায়ের তলার টুল কেড়ে নিলে নিচে লাফিয়ে পড়তে বাধ্য হতাম, তখন হাততালি দিত শ্বশুরবাড়ির সবাই। আয়ুর্বেদের নামে জড়িবুটি মুখে জোর করে গুঁজে দিত। কিন্তু এত বছর পরে এই রায়?”
নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনুভা অবশ্য আত্মপ্রত্যয়ী। বললেন, “কংসের কারাগার থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছি। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় বসছি। অন্যের ভরসায় থাকা নয়, এবার স্বাবলম্বী হতে চাই। সেটাই হবে আমার প্রতি অত্যাচারের যোগ্য জবাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.