পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার নিয়ে সংঘর্ষকে ঘিরে শনিবার সকালে তেতে উঠল সন্দেশখালির রামপুর গ্রাম। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে এআইইউডিএফ সমর্থকদের মারামারি, বোমাবাজি, ভাঙচুর কিছুই বাদ যায়নি। শেষমেশ তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ও কিছু গ্রামবাসীর ঘেরাও-বিক্ষোভের মুখে পড়ে এআইইউডিএফ প্রার্থী আব্দুল ওহিদ আকুঞ্জি বাড়ি থেকে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে দেন বলে অভিযোগ। পুলিশের সামনেই ওই ঘটনা ঘটে। কেউ অবশ্য হতাহত হননি। ওহিদ এবং তাঁর ভাই-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওহিদের বাড়ির একটি ঘর থেকে নাইন এমএম এবং একটি সেভেন এমএম পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপুরের আকুঞ্জিপাড়ায় বিশাল বাড়ি ওহিদের। তিনি এ বারে সন্দেশখালি-১ জেলা পরিষদ আসনে এআইইউডিএফ প্রার্থী হয়েছেন। এ দিন সকালে ওহিদ কয়েক জন কর্মী-সমর্থককে নিয়ে বাড়ির কাছেই নির্বাচনী প্রচারের জন্য ব্যানার লাগাচ্ছিলেন। সেই সময়ে আসানুর শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মী কয়েক জনকে নিয়ে আসেন। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে হাতাহাতি বাধে। দিন কয়েক ধরেই ব্যানার ছেঁড়াকে ঘিরে দু’পক্ষের মধ্যে চাপান-উতোর চলছিল। এ দিন ওহিদের লোকজন শাবল দিয়ে আসানুরকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। গুরুতর জখম অবস্থায় আসানুরকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আসানুরের আহত হওয়ার খবর ছড়াতেই এক দল যুবক ওহিদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। বোমাবাজিও করে। ওহিদের এক ভাই জখম হন। তৃণমূল ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ। এর কিছু ক্ষণ পরেই কয়েকশো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ও কিছু গ্রামবাসী ওহিদের বাড়ি ঘিরে ফেলে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফাঁড়ি থেকে পুলিশ যায়। সেই সময়ে ছাদে উঠে ওহিদ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ করে প্রায় ছয় রাউন্ড গুলি চালান বলে অভিযোগ। এর পরে এসডিপিও (বসিরহাট) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামলান। গ্রেফতার করা হয় ওহিদ, তাঁর ভাই আব্দুল আজিজ আকুন্দি এবং এআইইউডিঅফ সমর্থক আসিকুল আকুঞ্জি ও হামিদুর আকুঞ্জিকে।
ওহিদের স্ত্রী তাঞ্জিলা বিবি এ বার বেড়মজুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের এআইইউডিএফ প্রার্থী হয়েছিলেন। পঞ্চায়েতে অবশ্য তৃণমূল আগেই জিতে গিয়েছে। এ দিন তিনি দাবি করেন, “গোলমালের জন্য তৃণমূলই দায়ী। ওরা আমাদের ব্যানার ছিড়েছে। স্বামী আদৌ গুলি চালাননি। আমাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে।” মহকুমার এআইইউডিএফ নেতা ফিরোজ মোল্লা বলেন, “কয়েক দিন ধরে তৃণমূলের লোকজন দলের পোস্টার-ব্যানার নষ্ট করছিল। ওরা ওহিদের মেছোভেড়িও দখল করে। এ নিয়ে পুলিশ ও আদালতে অভিযোগও জানানো হয়। পরিকল্পনা করে গুলি চালানোর মিথ্যা অভিযোগে আমাদের প্রার্থীকে ফাঁসানো হল।”
সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা রঞ্জিৎ দাস অবশ্য দাবি করেছেন গোলমালটি রাজনৈতিক নয়। তিনি বলেন, “মেছোভেড়ির দখল নিয়ে ওই গ্রামে দু’টি পক্ষের গোলমাল হয়েছে। ওহিদ ও তাঁর লোকজন এক গ্রামবাসীকে মারধর করেন। তা থেকে গোলমালের সূত্রপাত। আমাদের কেউ এতে জড়িত নন।” |