হুগলির একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন মেধাবী ছেলেটি। কয়েক দিন পরেই ভিন্ রাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পান তিনি। সেখানে ভর্তিও হয়ে যান। তখন হুগলির কলেজের কাছে ভর্তির টাকা ফেরত চান মহম্মদ নাসিম নামে ওই ছাত্র। কিন্তু টাকা ফেরাতে রাজি ছিলেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত নাসিমের পরিবার হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়। আদালতের নির্দেশে ভর্তির ফি বাবদ দেওয়া প্রায় গোটা টাকাটাই ফেরত পেয়েছেন নাসিম।
নাসিমের বাড়ি আদতে বিহারের আরা জেলার মহল্লা-মৌলাবাগে। বাবা নইম সিদ্দিকি সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। ২০১১ সালে নাসিম হুগলির বৈঁচিতে ‘ক্যামেলিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ম্যানেজমেন্টে’ ভর্তি হন। ভর্তির সময় দিতে হয় ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা। নাসিমের দাবি, ভর্তির সময়ই তাঁর বাবা কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন ছেলে অন্যত্র ভর্তি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভর্তির টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলেছিলেন কর্তৃপক্ষও। ২০১১ সালের অগস্টে পুণের এআইটি-তে ভর্তি হন নাসিম। তার আগেই এ কথা হুগলির ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষকে জানান নাসিম। কথামতো ভর্তির টাকা ফেরত চান। নাসিমের পরিবারের বক্তব্য, কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথমে টাকা ফিরিয়ে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। জানানো হয়, ২০১২ সালের অগস্ট মাসে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এড়িয়ে যেতে থাকেন বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে বার বার আবেদন-নিবেদন করেও কোনও কাজ হয়নি। শেষে টাকা ফেরত চেয়ে চলতি বছরের ৪ এপ্রিল আইনজীবীর মাধ্যমে কলেজ কর্তৃপক্ষকে নোটিস দেন নইম। তাতেও সুরাহা হয়নি। ওই নোটিস কলেজের তরফে গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ। উপায়ান্তর না দেখে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি।
২৫ মে মামলার শুনানির দিন গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে আদালতের প্রধান বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী ক্যামেলিয়ার অধ্যক্ষকে নাসিমের ভর্তি বাবদ নেওয়া টাকা ফেরতের নির্দেশ দেন। আদালত সূত্রের খবর, এর পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই পরিমাণ টাকার একটি চেক আদালতে জমা দিতে আসেন। কিন্তু তাতে কিছু ভুল থাকায় আদালত তা সংশোধন করে ফের জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে। শেষ পর্যন্ত গত ২৮ জুন আদালতে এসে নইমের হাতে চেক তুলে দেন অধ্যক্ষ। মোট ৫২ হাজার ৩০০ টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্র গোটা মরসুমের টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেই পরিষেবা আদৌ গ্রহণ না করে নিজের পছন্দসই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। তাই তার ভর্তির টাকা হুগলির কলেজ কর্তৃপক্ষের আগেই ফিরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তা ছাড়া, ভর্তির সময়েই নাসিমের বাবা এমন সম্ভাবনার কথা কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রেখেছিলেন। এ প্রসঙ্গে অবশ্য ক্যামেলিয়া কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |