সেই ঘরের সামনে এসে কান্নায় ভিজল কামদুনি
স্কুলের মাঠ থেকে মিছিলটা শুরু হয়ে সোজা চলে যাচ্ছিল কামদুনি মোড়ের দিকে। কিন্তু বাধ সাধল সেই পাঁচিলঘেরা জমিটা। চলতে চলতে মিছিলটা প্রথমে থমকাল। তার পর পাঁচিলের ভাঙা অংশ দিয়ে ঢুকে মহিলারা সোজা গিয়ে দাঁড়ালেন সেই ঘরটার সামনে। প্রতিবাদের জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে নিয়েও হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন কামদুনির মহিলারা।
ঠিক এক মাস আগে এই ঘরেই চরম, নৃশংস অত্যাচার সয়েছিলেন কামদুনির এক মেয়ে। গণধর্ষণের পর খুন করা হয় ওই কলেজ ছাত্রীকে। দু’পা টেনে দু’দিক থেকে চিরে দেয় খুনিরা। তার পর পাঁচিলের উপর দিয়ে জলা জমিতে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসতে ফুঁসতে রাস্তায় নেমেছিল গোটা এলাকা। আর সেই ক্ষোভকে সামাল দিতে এক মাসের মধ্যে বিচার, এলাকার রাস্তার আলো ও নিরাপত্তা বাড়ানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু রবিবার, ঘটনার এক মাস পরেও সেই সব প্রতিশ্রুতির কতটা কী কাজে হয়েছে, কামদুনি তা দেখে ফেলেছে। সিআইডি চার্জশিট দিলেও তা নিয়ে ভর্ৎসনা করেছে আদালত। এ দিন নিহত ছাত্রীর স্মরণসভায় সেই না-পাওয়ার কথাই উঠল। উঠল নতুন করে আন্দোলনের শপথ নেওয়ার কথা।
এ দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ কামদুনি স্কুল মাঠে জড়ো হন এলাকাবাসীরা। ছিলেন গ্রামের মাস্টারমশাই প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, চিত্রশিল্পী সমীর আইচ, মানবাধিকার কর্মী শাশ্বতী ঘোষ। প্রথমে নিহত ছাত্রীর ছবিতে মালা দেওয়া হয়। সামনে জড়ো হতে থাকে শ্বেতপদ্ম, বেলফুল, গোলাপ। তার পরে শুরু হয় মিছিল। কোনও স্লোগান ছাড়াই।
কামদুনিতে মিছিল। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র
মিছিলে গোড়া থেকেই ছিলেন প্রচুর মহিলা। ছিলেন নিহতের আত্মীয়ারা। মৌসুমি কয়ালও। টুম্পা কয়াল শ্বশুরবাড়ি গিয়েছেন। এসেছিলেন তাঁর মা। স্কুল মাঠ থেকে মিছিল যত কামদুনি মোড়ের দিকে এগিয়েছে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন কোনও বৃদ্ধা, কখনও বাচ্চা কোলে মা। প্ল্যাকার্ড ধরে গোটা রাস্তাটা পা ঘষটে ঘষটে চললেন বাদল ঘোষ নামে এক প্রতিবন্ধী যুবক। এত লোক দেখে নিহত ছাত্রীর ছোট ভাই ডুকরে উঠলেন, “এক মাস আগে এই দিনে দিদির সঙ্গে একটা লোক থাকলে হয়তো দিদিকে মরত হত না।”
মিছিল এগোতে এগোতে সেই পাঁচিলঘেরা জায়গার কাছে এসে থমকে গেল। মহিলারা একের পর এক পাঁচিলের ভাঙা অংশ দিয়ে ঢুকে পড়লেন ভিতরে। পিছন পিছন পুরুষরাও। তত ক্ষণে মহিলারা পৌঁছে গিয়েছেন সেই ঘরটির কাছে। ঠিক হল, দরজা বন্ধ। দরজার সামনের সিঁড়িতেই জ্বালানো হবে মোমবাতি। আর ফুঁপিয়ে নয়, এ বার হাউহাউ করে কেঁদে উঠলেন নিহত ছাত্রীর জেঠিমা। তাঁকে সামলাতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন বাকি মহিলারাও। তারই মধ্যে ঘরের সামনে সিঁড়িতে কেউ কেউ জ্বেলে দিলেন কয়েকটা মোমবাতি। গ্রামের মেয়ের স্মৃতিতে।
ফের মিছিল শুরু। পায়ে পায়ে পৌঁছে গেল কামদুনি মোড়ে। সেখানে নিহত ছাত্রীর নামে বেদি তৈরি করা হয়েছিল। একের পর এক জ্বলল মোমবাতি। এলাকার মা-মেয়েদের পাশাপাশি চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল ছেলেদেরও। বলা হল, ১৫ জুলাই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন কামদুনির ২৮ জন বাসিন্দা। কী বলবেন তাঁরা?
এলাকার প্রতিবাদী মহিলা হিসেবে পরিচিত মৌসুমি কয়াল বললেন, “ন্যায়বিচার চাইব। আমাদের মাওবাদী-সিপিএম, যা-ই বলা হোক না কেন, কিছু এসে যায় না।”
এ বার কামদুনি মোড় থেকে ফের গ্রামে ফেরার পালা। যেতে যেতে কেউ তখনও ফুপিয়ে কাঁদছেন, কেউ বা ছিঁড়ে দিচ্ছেন সিআইডি-র লাগানো পোস্টার। পাড়ায় ঢুকেও ঘরে ফিরে গেলেন না এলাকার মহিলারা। চোখের জল মুছে একজোটে তাঁরা নতুন শপথ নিতে ব্যস্ত।
মনে পড়ল নিহত ছাত্রীর বাড়ি থেকে বেরোতে বেরোতে সমীর আইচের মন্তব্য, “কামদুনির এই আন্দোলন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

প্রতিশ্রুতির পাঁচ কাহন
প্রতিশ্রুতি কী ছিল কী কী হয়েছে
এক মাসের মধ্যে অপরাধীদের শাস্তি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনই হয়নি
গ্রামের রাস্তায় আলো কয়েকটি খুঁটি পোঁতা হয়েছে মাত্র
বেহাল রাস্তার সংস্কার কোনও কাজই এখনও শুরু হয়নি
এলাকায় স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প অস্থায়ী একটি ক্যাম্প বসেছে
এলাকার সব উঁচু পাঁচিল ভাঙা হবে কোনও কাজই হয়নি

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.