জঙ্গলমহলেই বকেয়া ৫৫০ কোটি
আধাসেনার গন্ধমাদন
বইতে বেহাল বাংলা
বোঝার উপরে শাকের আঁটি নয়। বোঝার উপরে আরও বোঝা!
ভাঁড়ারের দুর্দশায় জঙ্গলমহলে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচ (ফোর্স কস্ট)-ই মেটাতে পারছে না রাজ্য সরকার। তার উপরে চাপছে পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল আধাসেনার বিরাট বোঝা। কী ভাবে ওই বকেয়া টাকা দেওয়া যাবে এবং নতুন খরচের ধাক্কা সামলানো হবে, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছে না রাজ্য সরকার।
জঙ্গলমহলে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচ খাতে কেন্দ্রের পাওনা বাড়তে বাড়তে ৫৫০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন বকেয়া ফেলে রাখায় জরিমানাও বসিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এমনিতেই এই অবস্থা। তার উপরে চাপছে পঞ্চায়েত ভোটে ভিন্ রাজ্যের বাহিনীর জন্য খরচ। কত পুলিশ আসবে, তা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে টাকার হিসেবও দিয়ে দিয়েছে তারা। কবে, কী ভাবে ওই টাকা মেটানো যাবে, তা নিয়েই সংশয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা।
মহাকরণ সূত্রের খবর, সিআরপি-র অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্যান্ডান্ট (অর্থ) গোবিন্দ প্রসাদ সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়েছেন রাজ্যকে। তাতেই এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে মোতায়েন বাহিনী বাবদ ৫৫০ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ে থাকার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এমনকী বকেয়া টাকার পরিমাণ কী ভাবে ধাপে ধাপে বেড়েছে, তা-ও অঙ্ক কষে দেখিয়েছেন ওই সিআরপি-কর্তা। সেই হিসেব অনুযায়ী, ২০১২-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া ছিল ৫০৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৩১ মার্চে সেটা বেড়ে হয়েছে ৫৪১ কোটি ১৮ লক্ষ। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এই বিষয়ে আগেও দু’বার চিঠি দিয়েছে সিআরপি। কিন্তু তা পড়ে থাকায় এ বার পাওনার উপরে ন’কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা জরিমানা (পেনাল্টি) চাপিয়ে হিসেব পাঠিয়েছে তারা। যত দিন যাবে, ওই জরিমানার পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।”
রাজ্য যদি সেই টাকা না-দেয়?
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “পুলিশের বহু প্রকল্পে অনুদান দেয় কেন্দ্র। বহু দিন ধরে বকেয়া পড়ে থাকলে তারা ওই পরিমাণ টাকা রাজ্যের প্রাপ্য থেকে কেটে নেয়।”
এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পিছনে অর্থ খরচের বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টেও তুলেছিলেন সরকারি আইনজীবীরা। রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে ওই খরচ যে বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে, আদালতকে তা বোঝানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। মহাকরণের এক কর্তা বলেন, “রাজ্যের পুলিশ দিয়ে ভোট করানোর পিছনে অর্থসঙ্কটও একটা কারণ। কিন্তু নিজেদের পর্যাপ্ত পুলিশ না-থাকায় কার্যত বাধ্য হয়েই কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয় সরকার। বাহিনী চেয়ে চিঠি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে।” রাজ্যের সেই আর্জিতে গোড়ায় অবশ্য কান দেয়নি কেন্দ্র। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাহিনী পাঠানো যে সম্ভব নয়, পাল্টা চিঠিতে রাজ্যকে তা জানিয়ে দেয় তারা। পরে সুপ্রিম কোর্ট বাহিনী পাঠানোর জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয়। দিন তিনেক আগেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে ১৫০ কোম্পানি বাহিনী দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। আর তাতেই মাথায় হাত সরকারের।
বাহিনী খাতে টাকা চেয়ে পঞ্জাব পুলিশ ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছে মহাকরণে। ওই রাজ্যের কম্যান্ডান্ট জেনারেল (হোমগার্ড) লিখেছেন, তাঁরা বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাত কোম্পানি ‘বর্ডার উইং হোমগার্ড’ পাঠাবেন। সেই বাবদ ৮ জুলাইয়ের আগে এক কোটি চার লক্ষ টাকা চেয়েছেন তাঁরা। পঞ্জাব ছাড়াও অসম সাত কোম্পানি এবং ত্রিপুরা পাঁচ কোম্পানি বাহিনী দেবে পঞ্চায়েত ভোটে। সেই চিঠিও পৌঁছেছে মহাকরণে। তারই সঙ্গে পাঠানো হয়েছে তাদের প্রাপ্যের ফিরিস্তি।
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “রাজ্যের পুলিশ দিয়ে ভোট হবে ধরে নিয়েই বাজেটে অতিরিক্ত অর্থের সংস্থান রাখা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে এখন পুলিশ ভোটের প্রাথমিক খরচ চেয়েছে। আপাতত তাদের দেওয়া হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। এর উপরে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ভিন্ রাজ্যের পুলিশের পিছনে কত খরচ হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে কোনও ভাবেই ১০০ কোটি টাকার কম হবে না।”
সব মিলিয়ে রাজ্যের মাথায় হাত।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.