আগামী লোকসভা ভোটে তৃণমূলই জাতীয় রাজনীতিতে চালিকা শক্তি হবে বলে ফের ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির কংগ্রেসেকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইউপিএ সরকারকে রীতিমত হুঁশিয়ারি দিয়ে শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণ বারাসতের নির্বাচনী সভায় মমতা বলেন, “পঞ্চায়েতের পর আরও একটা বড় নির্বাচন রয়েছে। এখন কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি এক জায়গায় হয়েছে। সিপিএম আর কংগ্রেসকে একসঙ্গে মার্চ করতে হবে। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর ভিক্ষে চাইতে যাব না। আমরা ভারতে এমন জায়গায় যাব যে, কেন্দ্রীয় সরকারকেই আমাদের কাছে ভিক্ষে চাইতে আসতে হবে।”
তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের ব্যাখ্যায়, পঞ্চায়েত ভোটে দলের বিরাট সাফল্য আশা করছেন নেত্রী। তারপরেই লোকসভার ভোট। ফলে, পঞ্চায়েতের সাফল্য লোকসভা ভোটে তাঁদের দলকে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থায় রাখবে। এ দিন মমতার বক্তব্যেও এমন আভাস মিলেছে। দক্ষিণ বারাসতের সভায় তিনি বলেছেন, “পঞ্চায়েত ভোটের পর বিজেপিকে বাংলা-ছাড়া হতে হবে। সিপিএম ও কংগ্রেস মিলে আমাকে সরাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাকে সরাতে পারবে না। সব জবাব আমরা ব্যালটে দেব।” তবে পঞ্চায়েতে দলের বড় সাফল্য পেতে তিনি মানুষের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচন টেস্ট কেস। চোরের পঞ্চায়েত আমরা তৈরি করব না।” জেলার বড় উন্নয়নের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা রমজান থাকা সত্ত্বেও কষ্ট করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে ভোট দিন। |
মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি। —নিজস্ব চিত্র |
মমতার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির প্রতিক্রিয়া, “অতীতের দু’টি নির্বাচনে তৃণমূলকেই আসন এবং অর্থের জন্য ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে কংগ্রেসের কাছে আসতে হয়েছিল। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে কংগ্রেস কখনও আসেনি। এটা বাস্তব এবং ইতিহাস। যারা এসেছিল তারাই ভিক্ষার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছে। আর মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য তো একপ্রকার ভিক্ষা চাওয়াই।” দীপার আরও কটাক্ষ, “কংগ্রেসের হাত ধরলে ১ থেকে ১৯ (সাংসদ) হওয়া যায়। হাত ছাড়লে কী অবস্থা হবে, তা ভেবেই এখন থেকে বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এ ধরনের মন্তব্য করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।”
ইউপিএ-র বিকল্প গড়তে ইতিমধ্যেই মমতা ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ার ডাক দিয়েছেন। কিন্তু মমতার সেই ফ্রন্ট গঠনের ভবিষ্যত নিয়েই এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির মুখপাত্র সাংসদ শাহনওয়াজ হুসেন। এ দিন ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী স্মারক সমিতি’র অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে প্রশ্নের জবাবে শাহনওয়াজ বলেন,“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেডারেল ফ্রন্টের কোনও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। কী হবে কেউ জানে না।”
এ দিন হাওড়ার শিবপুরে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আবক্ষ মর্মর মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন তিনি। কেন মমতা ফ্রন্ট গড়তে পারবেন না তা ব্যাখ্যা করে শাহনওয়াজ বলেন, “মুলায়ম, মায়াবতী সবাই কংগ্রেসের পক্ষে রয়েছেন। আবার বিহারের নীতিশ কুমার, লালুপ্রসাদ যাদবও কংগ্রেসের পক্ষে রয়েছেন। কংগ্রেস সবাইকেই পকেটে পুরে ইচ্ছামতো ব্যবহার করেছে। তাই আর কোন দলকে নিয়ে মমতা ফেডারেল ফ্রন্ট গঠন করবেন?”
তিনি আরও জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে মুলায়ম, মমতার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছিলেন। কিন্তু পরে তিনিও কংগ্রেসের পাশে চলে গিয়েছেন। আবার নীতিশ বিজেপির সঙ্গ ছাড়ার পরেই কংগ্রেসের দিকে চলে গিয়েছেন। আবার বিজেপি এবং সিপিএমের সঙ্গেও তৃণমূলের জোট বাধার কোনও সম্ভাবনা নেই। |