কোথাও হানাহানির অভিযোগ। কোথাও ভয় দেখানোর। কোথাও আবার প্রচারে বাধা দেওয়ার। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে নানা ধরনের সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠছে। এই অবস্থায় প্রচার পর্বেও উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
মাসাধিক কাল ধরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার চলছে। আর প্রচারকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে সন্ত্রাসের অভিযোগ। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে তো বটেই, রাজ্য নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগের পাহাড় জমছে। আর অভিযোগের তির মূলত শাসক দলের দিকেই। শুক্রবার এই নিয়ে একটি মামলার শুনানির শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, প্রচার পর্বে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। কী ভাবে তা সম্ভব, তার পরিকল্পনা করতে হবে তাদেরই।
বিচারপতির নির্দেশে আজ, শনিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, সন্ত্রাস ও প্রার্থীদের নিরাপত্তার অভাব নিয়ে যে-সব অভিযোগ জমা পড়েছে, ওই বৈঠকে তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে। রাজ্যের হাতে যে-বাহিনী রয়েছে, তার সাহায্যেই প্রচার পর্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে।
ভোটে যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা না-থাকায় তাদের প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রচার চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা করেছে কংগ্রেস। ওই মামলার আইনজীবী প্রদীপ তরফদার আদালতে অভিযোগ করেন, নিরাপত্তা না-থাকায় প্রার্থীরা প্রচারে যেতে পারছেন না। অনেক প্রার্থী ঘরছাড়া। সন্ত্রাসের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও অনেকে এলাকায় থাকতে পারছেন না।
শুনানিতে রাজ্যের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শুক্রবার রাতের মধ্যেই রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে যাওয়ার কথা। শনিবার তাদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক হবে। কমিশনের পক্ষে আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি বলেন, এ দিন যে-বাহিনী আসছে, তা প্রথম দফা ভোটের জন্য। বিভিন্ন এলাকায় প্রচার পর্বের নিরাপত্তার কাজে তাদের ব্যবহার করা যাবে না।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে এ দিনই জানানো হয়েছে, মোট ৫৭ হাজার ৩৩০টি বুথের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে না। ওই সব বুথ রক্ষার দায়িত্ব থাকবে রাজ্য পুলিশের হাতেই। এর মধ্যে অতি-স্পর্শকাতর, স্পর্শকাতর বুথও আছে। কমিশনের এক কর্তা বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের ক্ষেত্রে যে-নিয়ম রয়েছে, তা মানতে গিয়েই অর্ধেকেরও বেশি বুথে আধাসেনা দেওয়া যাচ্ছে না।”
কমিশন এ দিন জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পুলিশ মোতায়েনের দায়িত্ব থাকবে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের হাতে। তবে এই কাজে জেলা পর্যবেক্ষকদের মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথম তিন দফায় যে-ন’টি জেলায় ভোট হবে, এ দিন সেখানকার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে করে কমিশন এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।
কমিশন সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম পুলিশ-জেলা, কোচবিহার ও বর্ধমানের পুলিশ সুপারদের সতর্ক করে দিয়েছে কমিশন। ওই তিন পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে। তাই এ দিনের বৈঠকেই তিন পুলিশ সুপারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অবশ্য বৈঠকে ছিলেন না। তাঁকে ফোন করে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরাদেবী ঝাড়গ্রাম পুলিশ-জেলা ও বর্ধমানের পুলিশ সুপারদের জানিয়ে দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। কেন এত অভিযোগ উঠছে, তাঁদের কাছে জানতে চান কমিশনার। তাঁর নির্দেশ, নির্বাচন ঘিরে কোনও অভিযোগ এলে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। ভোটের দিন বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে প্রতিটি জেলার প্রশাসনকেই।
জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের জন্য মীরাদেবীর স্পষ্ট নির্দেশ, প্রার্থীরা যাতে অবাধে প্রচার চালাতে পারেন, তার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা করতে হবে। বর্ষার কথা মাথায় রেখে যথেষ্ট সংখ্যক নৌকা ও স্পিডবোটের ব্যবস্থা করতে হবে বন্যাপ্রবণ এলাকায়। ভোটপত্র, ভোটকর্মী এবং ভোটবাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে অস্থায়ী বুথ করে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছে কমিশন।
ভোটের দিন মুসলিম ভোটকর্মীদের রোজা পালনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে বলেছে তারা।
|