শিলং পাহাড়ের অমিত রায় ও লাবণ্যের প্রেমকাহিনি বাঙালির অতি প্রিয়। কিন্তু ব্যারাকপুরের ইভটিজার অমিত রায় মেয়েদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক।
শেষের কবিতার অমিত তাঁর পদবিতে রায়ের বদলে ‘রে’ লিখতেন। নোয়াপাড়ার অমিতের নামের আগে জুড়ে গিয়েছে ‘নাইট্রো’ উপাধি। পুলিশ জানায়, বিশেষ একটি নেশার ওষুধে আসক্তির সুবাদে তাকে ওই খেতাবে ভূষিত করেছেন পাড়া-পড়শিরা। আইআইটি গুয়াহাটির এক ছাত্র-সহ তিন যুবককে মারধর ও স্কুল-ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে ‘নাইট্রো অমিত’কে আপাতত খুঁজছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য অমিতের কুকর্মের নজির আগেও দেখেছেন। ওঁদের দাবি, অমিতের নামে একাধিক বার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মাসখানেক আগে পলতা পিএন দাস কলেজের সামনে এক ছাত্রীর হার ছিনতাই মামলায় সে গ্রেফতারও হয়েছিল। দিন কুড়ি আগে জামিনে ছাড়া পায়। এবং জেল থেকে বেরিয়েই ফের উপদ্রব শুরু করেছে। |
যেমন করছিল গত বুধবার। অমিত ও তার সঙ্গী অভিজিৎ রায় ওরফে সোনু নোয়াপাড়া সুকান্ত পল্লিতে রাস্তা আটকে কয়েক জন স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিল বলে অভিযোগ। আইআইটি-র ছাত্র রিকি বিশ্বাস ও তাঁর ভাইয়েরা তখন ওই রাস্তা ধরে গাড়িতে যাচ্ছিলেন। মোটরবাইকে রাস্তা আটকে অসভ্যতার প্রতিবাদ করে তাঁরা অমিতদের রোষের মুখে পড়েন। অভিযোগ, অমিতরা রিকিদের মারধর করে পালিয়ে যায়। পরে রিকিরা নোয়াপাড়া থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে সেখানে তাঁদের চার ঘণ্টা বসিয়ে রেখে স্রেফ জেনারেল ডায়েরি নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি চাউর হতে সোনুকে পুলিশ পাকড়াও করে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত অমিতের হদিস মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা ‘অমিত গ্যাং’-এর দাপটে অতিষ্ঠ হলেও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশ অমিতের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অভিযোগ, এ দিন স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা পঙ্কজ মল্লিক ও মনোজ মল্লিক লোকজন নিয়ে রিকিদের বাড়ি বয়ে গিয়ে হুমকি দিয়েছেন, এমনকী সংবাদমাধ্যমকেও শাসিয়েছেন। এ দিন রিকি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কয়েক জন তৃণমূল নেতা তাঁদের বাড়ি এসে দাবি করেছিলেন, এলাকায় মেয়েদের নিরাপত্তার সমস্যা নেই। এ দিন তাঁরাই এসে রীতিমতো ধমকি দিয়ে বলেছেন, ব্যাপারটা নিয়ে বেশি ‘বাড়াবাড়ি’ করা হচ্ছে। শুনে রিকি যারপরনাই আতঙ্কিত। “আমি না হয় কলেজে চলে যাব। ভাইয়েরা তো এখানেই থাকবে।” বলছেন তিনি।
বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, অমিত তৃণমূল ঘনিষ্ঠ। অন্য দিকে রিকিদের পরিবার সিপিএম সমর্থক। রিকির জ্যাঠা রমেশ বিশ্বাস সিপিএম করেন। সে কারণেই বিষয়টি কিঞ্চিৎ ‘রাজনৈতিক মাত্রা’ পেয়ে গিয়েছে বলে ওঁদের অনুমান। অনেকে বলেছেন, দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী এসএফআইয়ের হাতে নিগৃহীত হওয়ার পরে পলতায় সিপিএম পার্টি অফিস ভাঙচুরে ‘নাইট্রো অমিত’ই নেতৃত্ব দিয়েছিল। রমেশবাবু বলেন, “পার্টি অফিসের সিলিং ফ্যান-আসবাব ও নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। তৃণমূল নেতাদের বলি, আপনারা এক জন সমাজবিরোধীকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এটা ঠিক হচ্ছে না।”
দুই দলের উচ্চতর নেতৃত্ব কী বলেন? |
নোয়াপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মঞ্জু বসু কিন্তু মেনে নিচ্ছেন, অমিত সমাজবিরোধী। এ দিন তাঁর প্রতিক্রিয়া, “ওই নেশাখোর, সমাজবিরোধী আমাদের দলের সদস্য হতে পারে না। ভাঙচুরে যুক্ত থাকলে পুলিশ ওকে ধরেনি কেন? ওই ছাত্রদের পাশে আমি আছি। আমাদের সরকার অপরাধীদের প্রশ্রয় দেয় না। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় সরকারের মুখ পুড়ছে।” ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তড়িৎ তোপদারের প্রশ্ন, “পরিবার সিপিএম বলে কি ছেলেরা কি প্রতিবাদ করতে পারবে না? ওদের গায়ে তো রাজনৈতিক তকমা নেই!”
অমিত অধরা থাকায় নোয়াপাড়ার কিশোরী-তরুণীদের একাংশও আতঙ্কে। এ দিন বিকেলে সুকান্ত পল্লিতে গিয়ে দেখা গেল, অনেক অভিভাবক স্কুলে এসেছেন মেয়েদের নিয়ে যেতে। এক জনের মন্তব্য, “অমিত পুরনো পাপী। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি। এখন পুলিশও ওকে ধরছে না। মনে হচ্ছে, পিছনে প্রভাবশালী কেউ রয়েছে।”
|