|
|
|
|
জোড়া কৌশল কংগ্রেসের |
বিজেপি রুখতে ইশরাত, খাদ্য সুরক্ষায় ভোট
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এক দিকে নরেন্দ্র মোদীকে অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টা। অন্যদিকে আম আদমির পাশে দাঁড়ানোর কৌশলে নিজের ঘর গোছানো। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এ ভাবেই ঘুঁটি সাজাতে চাইছে কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যেই আজ খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে ঢাক পেটাতে মাঠে নেমে পড়ল তারা। আজ বিকেলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় খাদ্য সুরক্ষা আইনের অর্ডিন্যান্সে সই করেছেন। ফলে পুরোদস্তুর প্রচারে নামতেও আর
বাধা থাকেনি।
পাঁচ বছর আগে গ্রামের মানুষের জন্য একশো দিনের রোজগার নিশ্চিত করার বড়াই করে ভোটের প্রচারে গিয়েছিল কংগ্রেস। এ বার দেশের ৮২ কোটি মানুষকে খাদ্যের আইনি অধিকার দেওয়ার কথা বলে ভোট-যুদ্ধে নামছে তারা। এ ক্ষেত্রে সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহের পাশাপাশি রাহুল গাঁধীর হয়েও কৃতিত্ব দাবি করতে চায় কংগ্রেস। দলের নেতাদের দাবি, গত লোকসভা ভোটের ইস্তাহারে সনিয়া, রাহুল ও মনমোহন যে খাদ্য সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেটাই এ বার পূরণ করল ইউপিএ সরকার।
তবে তার আগে সুকৌশলে আর একটি কাজও সেরে ফেলতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে তুলে ধরা নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে এখনও বিরোধ রয়েছে। তার মধ্যেই ইশরাত জহান হত্যা মামলা তুলে ধরে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে যতটা সম্ভব ‘ব্যাক ফুটে’ ঠেলে দিতে চাইছেন কংগ্রেস নেতারা। ইশরাত জহানকে ভুয়ো সংঘর্ষে মেরে ফেলা হয়েছিল বলেই গুজরাত পুলিশের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। কংগ্রেস নেতারা সরাসরি মোদীর দিকে আঙুল তুলছেন না। কারণ তা হলে আখেরে ভোটের মেরুকরণ হলে মোদীরই লাভ। কিন্তু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সে দিকেই ইঙ্গিত করে বিজেপি নেতাদের রক্ষণাত্মক অবস্থানে ঠেলে দিতে চাইছেন তাঁরা। সেই চেষ্টাতেই আজ আসরে নেমেছেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ। ইশরাত জঙ্গি ছিলেন কি না, তা নিয়ে চার্জশিটে কিছু জানায়নি সিবিআই। আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে দেখা করেন দিগ্বিজয়। তাঁর বক্তব্য, “ইশরাত জঙ্গি কি না তা নিয়ে এক এক গোয়েন্দা সংস্থা এক এক কথা বলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উচিত বিষয়টি ব্যাখ্যা করা।” অনেকের মতে, এ ভাবেই সুকৌশলে বিতর্ক উস্কে দিতে চেয়েছেন দিগ্বিজয়।
কংগ্রেস চায়, বিজেপি নেতারা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, সিবিআইএ সব নিয়ে বিতর্কে ব্যস্ত থাকুন। সেই ফাঁকে নিজের জনমুখী ভাবমূর্তি নতুন করে গড়ে তুলবে কংগ্রেস।
মনমোহন সরকারের এই খাদ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে অবশ্য নানা শিবির থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কম দামে চাল-গমের বন্দোবস্ত করতে গিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে উল্টো ফল মিলবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত অনেকেই। সস্তায় চাল-গম দিতে গেলে সরকারকে বিপুল পরিমাণে খাদ্যশস্য কিনতে হবে। ফলে বাজারে মধ্যবিত্তদের জন্য চাল-গমের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ খরচের ভার বহন করতে গিয়ে সরকারের আর্থিক ঘাটতি বাড়বে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আজ কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী কে ভি টমাস এবং কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, খাদ্য সুরক্ষা আইনে এক টাকা থেকে তিন টাকা দরের মধ্যে মাথা পিছু ৫ কেজি করে খাদ্যশস্যের ব্যবস্থা করতে সরকারের বছরে ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৭২৩ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। খাদ্যে ভর্তুকিতে এমনিতেই ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। তার সঙ্গে মিড-ডে মিল এবং আইসিডিএস প্রকল্পেও কম দামে খাদ্যের ব্যবস্থা করে সরকার। সেই হিসেবে বাড়তি খরচ হবে ২৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সরকারের ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার কোটি টাকার বাজেটের তুলনায় এই অঙ্কটা খুবই সামান্য। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার শুধুই খাদ্যে ভর্তুকির হিসেব কষছে। খাদ্যশস্য পরিবহণ ও মজুতের খরচ ধরা হচ্ছে না। খাদ্যশস্য কেনা নিয়ে টমাসের যুক্তি, সরকার গত চার বছর ধরে কৃষকদের থেকে ৬ কোটি ২ লক্ষ টন খাদ্যশস্য কিনছে। খাদ্য সুরক্ষা আইনের জন্য বাড়তি ১০ লক্ষ টন খাদ্যশস্য প্রয়োজন হবে।
দলের মধ্যে মতবিরোধ কাটিয়ে নরেন্দ্র মোদী লোকসভা ভোটের রণকৌশল তৈরির আগেই কংগ্রেস যে ভাবে তুরুপের তাস ফেলে দিয়েছে, তাতে সমস্যায় পড়েছে বিজেপি। দলের নেতারা তাই একে নেহাতই ‘রাজনৈতিক চমক’ বলে উড়িয়ে দিতে চাইছেন। বামেরাও সর্বজনীন গণবন্টন ব্যবস্থার দাবিতে অনড়। আবার সরকারের বিপদের সময়ের বন্ধু মুলায়ম সিংহ যাদব এই খাদ্য সুরক্ষা আইনকে কৃষক স্বার্থ-বিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছেন। সরকার এত কম দামে খাদ্যশস্য দিলে কৃষকরা সঠিক দাম পাবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান। খাদ্যমন্ত্রী টমাসের পাল্টা যুক্তি, “এতে আসলে কৃষকরা লাভবানই হবে। কারণ সরকারই নিজে বিরাট পরিমাণ খাদ্যশস্য কৃষকদের থেকে কিনে নেবে। কৃষকরা সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যই পাবেন।”
নভেম্বরে পাঁচ রাজ্যে ভোট। তার মধ্যে তিনটি কংগ্রেস-শাসিত। ওই তিনটি রাজ্যেই খাদ্য সুরক্ষার জনপ্রিয়তা নিয়ে পরীক্ষা চালাতে চান কংগ্রেস নেতৃত্ব। |
পুরনো খবর
• খাদ্য সুরক্ষা অর্ডিন্যান্স খতিয়ে দেখছেন প্রণব
• বিহারের মেয়ে ইশরাত, কেন্দ্রের পাশে জেডিইউ |
|
|
|
|
|