আইএনটিটিইউসি-র বিক্ষোভের জেরে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ইসিএলের সোদপুর কারখানায়। দেড় দিন ধরে আধিকারিকদের ঢুকতে বাধা দেওয়ায় অচলাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। আইএনটিটিইউসি-র দাবি, নবনিযুক্ত ঠিকা সংস্থা পুরনো কর্মীদের নিয়োগ না করে নতুন কর্মী এনেছে। এই সিদ্ধান্ত না পাল্টালে বিক্ষোভ চলবে, জানিয়েছেন ওই সংগঠনের নেতারা। সমাধানের রাস্তা বের করতে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হলেও লাভ হয়নি বলে জানান কারখানা কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার। সে দিন কারখানার গেটে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন আইএনটিটিইউসি-র কয়েকশো কর্মী। কিন্তু বিক্ষোভ বড় আকার নেয় বুধবার। দফায় দফায় কারখানার আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ হয়। বৃহস্পতিবার কারখানার গেটে আটকে দেওয়া হয় সংস্থার এজেন্ট, ম্যানেজারদের। শুক্রবারও একই পরিস্থিতি ছিল। ফলে, উৎপাদন ব্যাহত হয়। সংস্থার এজেন্ট জয়ন্ত সেন জানান, শ্রমিক-কর্মীরা ভিতরে গেলেও আধিকারিকদের কেউ না যেতে পারায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নিরাপত্তারও অভাব বোধ করছেন আধিকারিকেরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কারখানার গেটে সিআইএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত বাহিনীও মোতায়েন করেছে কুলটি থানা। |
ইসিএলের সোদপুর ওয়ার্কশপের সামনে চলছে বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র। |
ইসিএলের কর্মশালাগুলির চিফ জেনারেল ম্যানেজার এস কে রায় জানান, মনোরঞ্জন মণ্ডল নামে এক ঠিকাদার শ্রমিক সরবরাহের নতুন বরাত পেয়েছেন। আইএনটিটিইউসি-র দাবি, ওই ঠিকাদারকে তাদের পছন্দের লোকজনকে কাজে নিতে হবে। তিনি বলেন, “আইএনটিটিইউসি নেতারা দাবিপূরণের জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা জানিয়েছি, এটি পুরোপুরি ঠিকাদারের নিজস্ব বিষয়।” এস কে রায় আরও জানান, বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সংস্থার ডিরেক্টর (পার্সোনেল) শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেও জানানো হয়েছে, এ বিষয়টিতে কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনও হাত নেই। কিন্তু শ্রমিক নেতারা নিজেদের অবস্থানে অনড়। ফলশ্রুতি হিসেবে শুক্রবার আন্দোলনের তীব্রতা আরও বেড়েছে।
আইএনটিটিইউসি-র সোদপুর কারখানার সম্পাদক গোবিন্দ মাজির দাবি, “নতুন লোক নিয়োগে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এক জনও পুরনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা যাবে না। এই দাবি না মানা হলে নতুন ঠিকাদারকে কাজে যোগ দিতে দেব না। আন্দোলন চলবে।” আধিকারিকদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার কথা অবশ্য তিনি মানতে চাননি। তাঁর দাবি, শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখানোয় আধিকারিকেরাই ঢুকতে পারেন নি। আইএনটিটিইউসি-র জেলা সম্পাদক তথা কয়লা শ্রমিক সংগঠনের নেতা হরেরাম সিংহের আবার দাবি, কর্তৃপক্ষ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অযথা জটিলতা তৈরি করছেন। আইএনটিটিইউসির পক্ষে আরও অভিযোগ করা হয়, তাঁদের সংগঠনের পতাকার অবমাননা করেছেন কারখানার সিজেএম এসকে রায়। তাঁদের দাবি, তিনি দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। যদিও সিজেএম তা মানেননি।
এমন আন্দোলন ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে ঘটনার বিরোধিতা করেছে সিটু এবং আইএনটিইউসি। স্থানীয় সিটু নেতা মানস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমরা শ্রমিক স্বার্থের পক্ষে। পুরনো শ্রমিকদের অবশ্যই বহাল করতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি আলোচনার মাধ্যমে মেটানো উচিত। এ ধরনের আন্দোলন করলে কারখানার ক্ষতি হবে।” আইএনটিইউসি-র খনি শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়, “এমন আন্দোলন করে ইসিএলকে বিপদে ফেলা হচ্ছে। তাতে জেরে আরও জটিলতা বাড়বে।” |