কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ এবং দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের সাফল্যকে সামনে রেখেই উত্তরবঙ্গে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে নির্বাচনী প্রচারসভা শুরু করল তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের বাসস্ট্যান্ডে নির্বাচনী জনসভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় অভিযোগ করেন, “বাম আমলে নেতারা মোচ্ছব করে ২ লক্ষ ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে গিয়েছেন। ওই ঋণের বাৎসরিক সুদ বাবদ ২১,০০০ কোটি টাকা ৩ বছরের জন্য মকুবের আবেদন কেন্দ্রের কাছে মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন। কেননা, বাম আমলে নেওয়া ওই বিপুল ঋণের অনুমোদনের দায়ভার কেন্দ্রীয় সরকারের উপরেই বর্তায়। তাই এর দায় কেন্দ্র এড়াতে পারেন না। কিন্তু কেন্দ্র তা মানলো না। প্রতি বছর এ রাজ্য থেকে কেন্দ্র ৪০,০০০ কোটি টাকা নিয়ে যায়, আর তার যতকিঞ্চিত রাজ্যকে দেয়। এটা মানা হবে না। পঞ্চায়েত ভোটের পরই আমরা সবাই পাওনা গন্ডা বুঝে নিতে দিল্লি যাব।” |
তাঁর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগে কংগ্রেস আমলে কোনও নেতা বা ৩৪ বছরে রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় কিংবা জঙ্গলমহলে গিয়ে শান্তি ফেরানোর সাহস দেখাতে পারেননি। শহরে বসে বুদ্ধ, বিমানরা কাপ্তেনি করে গিয়েছেন। এখন পাহাড় ও জঙ্গল শান্তিতে রয়েছে এটা অনেকের সহ্য হচ্ছে না। গেল গেল রব তোলা হচ্ছে।” শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি থেকে গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্যের এগিয়ে যাওয়ার দাবি করে মুকুলবাবুর মন্তব্য, “চরম আর্থিক অনটনের মধ্যেও রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। দেশের স্বাধীনতার ৬৪ বছর পরে কিংবা বাম আমলের ৩৪ বছরে মমতার মতো কোনও মুখ্যমন্ত্রী দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো প্রত্যন্ত জেলার উন্নতির কথা কি ভেবেছেন না জেলায় বারবার এসেছেন? এই জেলার প্রতিটি ব্লকে আইটিআই কেন্দ্র, গঙ্গারামপুরে পলেটেকনিক কলেজ, তপনে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্লকে ব্লকে কিসান মান্ডি, রাস্তাঘাট ও পাণীয় জল প্রকল্প তৈরি গুচ্ছ প্রকল্পে কাজ শুরুর মুলে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রত্যন্ত জেলার মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা।”
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে তিনি বলেন, “নারী নির্যাতনে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরুর পরে পশ্চিমবঙ্গের স্থান। কামদুনি অত্যন্ত খারাপ ঘটনা। কিন্তু তা নিয়ে এক শ্রেণীর সংবাদপত্র গেল গেল রব তুলেছে। কিন্তু তারা বাম আমলে বর্ণালী বিশ্বাস, অনিতা দেওয়ান, রানু ঘোষ, তাপসী মালিকদের কথা কি তারা ভুলে গিয়েছেন? বালুরঘাটে একটি ঘটনায়(পুলিশ লাইনের মধ্যে কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন) ২৯ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিয়ে অপরাধীর যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে এ রাজ্যে নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা দূর হবে। তার জন্য কড়া পদক্ষেপ করছেন মুখ্যমন্ত্রী।”
এ দিন তপনে ছোট সভা ডাকা হলেও তা জনসভায় পরিণত হয়। উপস্থিত জনতাকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতেও পরিবর্তন ঘটানোর আবেদন জানান মুকুল রায়। তিনি বলেন, “ঘোর বর্ষা ও রমজান মাসে পঞ্চায়েত ভোট চাননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি চেয়েছিলেন আগামী বছর ফেব্রুয়ারির শীতে ভোট হোক। তাতে যাঁরা ভোট দেবেন, যারা ভোট পরিচালনা করবেন এবং রাজনৈতিক দল-সকলের সুবিধা হতো। নির্বাচন কমিশন বড়। অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু তাতে এক জন মানুষ রয়েছেন, তিনি এবং কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি তা চাননি।” এ দিনের সভায় সমবায় মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী, তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র বক্তৃতা করেন। এ দিন কালিয়াগঞ্জের বোচাডাঙ্গা পঞ্চায়েতের তরঙ্গপুরেও সভা করেন মুকুল রায়। দীপার খাসতালুকে তাঁর সমালোচনা করে তিনি আবেদন করেন, “পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি, এই তিনটি স্তরেই তৃণমূল প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়ী করুন। আমি কথা দিচ্ছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যের যে উন্নয়ন হবে তাতে উত্তর দিনাজপুর সবার আগে থাকবে।” |