নাতনির বিয়েতে যেতে গিয়ে অদ্ভুত আতান্তরে পড়লেন দিদিমা। ব্যান্ডেল থেকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে পৌঁছে বাস থেকে নামতে গিয়ে তাঁর পায়ে পড়ল বিয়েবাড়িরই একটি সাইকেল। গোড়ালিতে বিঁধে গেল সাইকেলের ঘন্টির লোহার পাত। বৃহস্পতিবার এমনই ঘটনা ঘটল পোকাবাঁধ বাসস্টপে। শেষ পর্যন্ত বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালের শল্য চিকিৎসকের তৎপরতায় ঘন্টিটি তুলে ফেলা গিয়েছে। বিয়েবাড়ির বদলে দিদিমার ঠাঁই এখন হাসপাতালে।
বৃহস্পতিবার ব্যান্ডেলের টায়ারবাগান থেকে বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া সুভাষপল্লিতে নাতনির বিয়েতে যোগ দিতে আসছিলেন সত্তরোর্দ্ধ বৃদ্ধা শোভারানি হালদার। একাই বাসে চড়েছিলেন তিনি। পোকাবাঁধে বিয়েবাড়ির কিছু জিনিসপত্র কিনে সাইকেল নিয়ে দিদিমার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন নাতনি প্রজ্ঞাপারমিতা ডাকুয়া। |
তাঁর কথায়, “দিদিমা বাস থেকে নামতেই কী যে হয়ে গেল, সাইকেলটা তাঁর পায়ে পড়ে গেল। তুলতে গিয়ে দেখি ঘন্টির ছোট্ট ধাতব অংশটা তাঁর পায়ে গেঁথে গিয়েছে।” এই অভাবনীয় কাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়তেই লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তাঁরাই কোনওরকমে ঘন্টির আংটা সাইকেল থেকে আলাদা করে দেন। ছুটে আসেন শহরের দুই কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও পবন বাউরি। ভ্যানরিকশয় চাপিয়ে শোভারানিদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে।
জরুরি বিভাগ থেকে তাঁকে যখন অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হয়, তখন বৃদ্ধার ক্ষত থেকে অনেকখানি রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে। এক্স-রে করার পরে শল্য চিকিৎসক সুনীল হালদার বলেন, “এমন ঘটনা আগে দেখেনি। সাইকেলের ঘন্টি বাজানোর অংশটি খুব ধারালো নয়। সম্ভবত বয়সের কারণে বৃদ্ধার হাড় নরম হয়ে গিয়েছে। তাই চাপ পড়তেই মাংস ফুঁড়ে হাড়েও ঘন্টির অংশ ঢুকে যায়।” হাড় কাটতে হতে পারে ভেবে ড্রিল মেশিন আনানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাড় কাটতে হয়নি। পরে ওই শল্য চিকিৎসক বলেন, “শোভারানিদেবীকে অজ্ঞান করে টান মেরে ঘন্টির ওই অংশটি বের করে আনা হয়। পরে ক্ষত সেলাই করে দেওয়া হয়েছে।” হাসপাতালের সহকারী সুপার নিবেদিতা মিশ্র বলেন, “ঘটনাটি অভাবনীয়। অস্ত্রোপচারটিও জটিল ছিল। শল্য চিকিৎসক সাহসের সঙ্গে দ্রুততায় কাজটি করায় আমরা খুশি।”
বিপদ কেটে গেলেও শোভারানিদেবী বিয়েতে থাকতে পারছেন না জেনে মুষড়ে পড়েছেন পরিজনেরা। নাতনি বলছেন, “দিদির বিয়েতে খুব মজা করার কথা ছিল দিদিমার। তিনিই এখন হাসপাতালে। বিয়ের আনন্দটা কি পাব?” |