এ বার বহরমপুর, হোমেই ধর্ষিত আবাসিক, ধৃত ১
রাজ্যের হোমগুলিতে মহিলা আবাসিকদের নিরাপত্তাহীনতার ছবিটা সামনে এসে পড়েছিল গুড়াপ-কাণ্ডের পরে। সেই তালিকায় এ বার সংযোজন ঘটল বহরমপুরের শিলায়ন হোমের। হুগলির গুড়াপে ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ নামে ওই হোমে গুড়িয়া নামে এক মনোরোগীকে ধর্ষণ করে খুন করার পরে দেহটি হোমের ভিতরেই কবর দিয়ে দিয়েছিলেন হোম কর্তৃপক্ষ। তদন্তে নেমে পুলিশ খোঁজ পায়, গুড়িয়া একা নন। ওই হোমে গুড়িয়ার পরিণতি হয়েছে আরও অনেকেরই।
বহরমপুরের শিলায়ন হোমটিও যে তার ব্যতিক্রম নয়, গত শনিবার ধর্ষণের ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ তা টের পাচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, গত কয়েক বছরে ওই হোমের আবাসিকদের নিরাপত্তাও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। শনিবার, ২৯ জুন, ওই হোমে এক আবাসিককে শৌচাগারের মধ্যে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ওই হোমে সংস্কারের কাজ চলছে। কয়েক জন রাজমিস্ত্রি আবাসিকদের ছাদ, রান্নাঘর, শৌচাগার মেরামত করছেন। তাদেরই এক জন ওই সদ্য তরুণীকে ধর্ষণ করে। মেয়েটিকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের দিন লিখিত অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তড়িঘড়ি সুজিত ঘোষ নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে।
ছবি: গৌতম প্রামাণিক
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হোমে গিয়ে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলাও দায়ের হয়েছে। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষার পরে তার দেহরসের নমুনা পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিক পরীক্ষাগারে।” তিন দিন হাসপাতালে থাকার পরে ওই তরুণীকে অবশ্য ফের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার পুরনো ঠিকানা শিলায়নেই। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশই ওই তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। তাঁর মেডিক্যাল টেস্ট হয়েছে।”
গুড়াপের রেশ থিতিয়ে যাওয়ার মুখে বহরমপুরের ওই ঘটনায় স্পষ্টই অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। কাউকেই রেয়াত করা হবে না। হোম কর্তৃপক্ষের গাফিলতি থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের পাশাপাশি ওই হোমে আবাসিকদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরি করেছে জেলা প্রশাসনও।
জেলা প্রশাসনের তরফে হোমগুলির দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রবীন্দ্রনাথ সরকার। তিনি বলেন, “বহরমপুরের মহকুমাশাসক এবং সমাজকল্যাণ দফতরের ভারপ্রাপ্ত জেলা আধিকারিক আলাদা ভাবে তদন্ত করে দু’টি রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে জমা দিয়েছেন। হোম কর্তৃপক্ষের যে গাফিলতি রয়েছে প্রাথমিক তদন্তে তা স্পষ্ট।”
বহরমপুরের মধুপুরে পঞ্চাননতলা রেল গেটের ধারেই শিলায়ম হোম। আবাসিক ১৩৫ জন। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “৮০-৯০ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও গাদাগাদি করেই আবাসিকদের রাখা হয়। খাবারও তেমন জোটে না।” ‘শ্লীলতাহানি’ কিংবা আবাসিকদের উপরে শারীরিক ‘নির্যাতনের’ ঘটনাও ওই হোমে নতুন নয়। কয়েক বছরে বেশ কয়েক বার বিভিন্ন অভিযোগের সাক্ষী শিলায়ন। ২০০৪ সালের নভেম্বরে হোমের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানিয়েছিলেন বেশ কয়েক জন আবাসিক ছাত্রী। ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করে তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন হোম কর্তৃপক্ষ।
পরের বছরেই হোমের এক আবাসিক অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। অভিযোগের আঙুল ওঠে এক হোম-কর্মীর বিরুদ্ধে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্ত শুরু হলেও আট বছর পরে রিপোর্ট জমা পড়েনি। ‘মুক্তি’ পেতে শিলায়ন থেকে প্রায়ই ঘটে আবাসিক পালানোর ঘটনা।
জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের অবশ্য বিশেষ হেলদোল নেই। হোমের দায়িত্বে রয়েছেন শোভা গোস্বামী। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে মুর্শিদাবাদের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম এটিকে নিছকই ‘ছোট ঘটনা’ বলে মনে করেন। নির্বিকার গলায় বলেন, “অত জন আবাসিকের দিকে নজর দেওয়া সম্ভব? এমন হতেই পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.