হুল্লো ড়
শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনেও গোপন খবর পাচার হয়
বাঙালির সঙ্গে বিয়ে হলে কেউ হাফ বাঙালি হন না। তিনি নাকি তিন-চতুর্থাংশই বাঙালি হয়ে যান। এমনটাই মনে করেন পরিচালক নিখিল আডবাণী। ‘কল হো না হো’, ‘সলামে ইশ্ক’, ‘চাঁদনি চক টু চায়না’, ‘পাতিয়ালা হাউজ’ পরিচালনা করার পরে এখন বানাচ্ছেন ‘ডি-ডে’। বিয়ে করেছেন ১৯৯৬-এ। কলকাতার জামাই তিনি। ইচ্ছে আছে সুযোগ পেলে পরের ছবিটি কলকাতাতেই শ্যুটিং করবেন।
তবে আপাতত নিখিল ব্যস্ত ‘ডি-ডে’ নিয়ে। ঋষি কপূর, ইরফান, অর্জুন রামপাল, শ্রুতি হাসন, হুমা কুরেশি আর চন্দন রায় সান্যালকে নিয়ে তৈরি ছবি। ত্রিকোণ প্রেমের ছবির পরিচালনা থেকে বেরিয়ে সোজা সন্ত্রাসবাদের গল্প বলতে বসেছেন নিখিল। তা না করলে নাকি নিজেকে পরিচালক হিসেবে বেশ সীমিত মনে হত।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অন্যান্য হিন্দি ছবির থেকে ‘ডি-ডে’ কী ভাবে আলাদা?
করাচির নেপিয়ান রোড যৌনকর্মী পল্লির আদলে তৈরি সেটে অর্জুন রামপাল ও শ্রুতি হাসন
“ভাগ্য ভাল আপনি ‘ডি-ডে’-কে সন্ত্রাসবাদের ওপর ছবি হিসেবে বর্ণনা করলেন। আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি বোঝাতে বোঝাতে যে আমার ছবিটি আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভাইদের নিয়ে নয়। ছবিতে কোনও চরিত্র বর্ডারে দাঁড়িয়ে বলছে না যে পাকিস্তান খারাপ,” বলছেন নিখিল। তা হলে কী আছে ছবিতে? কিছু ‘র’-এজেন্টের কাল্পনিক গল্প যাদের করাচিতে পাঠানো হয়েছে। ইরফানের চরিত্রটি একজন নাপিতের। কিন্তু স্ত্রী বা ছ’বছরের বাচ্চা কেউই জানে না তাঁর আসল পরিচয়টা কী। অর্জুন হলেন মার্কোস ইউনিটের সাসপেন্ডেড অফিসার। করাচিতে এসে এক পতিতাপল্লিতে থাকেন, যাতে কেউ তাঁকে সন্দেহ না করে। ওখানেই শ্রুতি হাসনের প্রেমে পড়েন তিনি। হুমা হলেন ‘র’-এর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। কিন্তু করাচিতে তিনি একজন অভিবাসন আইনজ্ঞের পরিচয়ে বসবাস করেন। “এঁদের সবার উপর দায়িত্ব পড়ে এক ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গিকে ধরে আনার। তখনই এক কঠিন ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’য়ে এঁরা ভুগতে শুরু করেন। নিজের খুব কাছের জনকেও বলতে পারেন না তাঁদের আসল পরিচয়টা কী। অনেক গবেষণা করে জানতে পেরেছি এই ধরনের এজেন্টরা কী মানসিক চাপ নিয়ে থাকেন। একটা সময় তাঁরা এ সব ছেড়ে চলে আসতেও চান। কিন্তু তখন কোনও উপায় থাকে না। এক দিকে তাঁরা একটি দেশের ঘোষিত শত্রু, আর অন্য দিকে যে দেশ থেকে তাঁদের পাঠানো হয়ে থাকে, তাঁরা আবার এঁদের শেষ করে দিতে চায়। তখন এঁরা যেন ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-য়ে থাকেন,” বলছেন তিনি।
ছবিতে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’য়ের চরিত্রে ঋষি কপূর ও তাঁর ভাইপোর ভূমিকায় চন্দন রায় সান্যাল
গবেষণার সময় কি আশ্চর্য কিছু খুঁজে পেয়েছেন? “প্রচুর কিছু। কোনও ইসলাম দেশে কখনও গুপ্তচর হিসেবে এমন কাউকে পাঠানো হয় না যে ধর্মে মুসলমান নন। তার কারণ কিন্তু ধর্ম নয়, একান্তই শারীরিক। এঁরা কেউ ধরা পড়লে, শরীরের তদন্ত করলেই সত্যিটা প্রকাশ পাবে। ছবিতে অবশ্য আমি একটু স্বাধীনতা নিয়েছি। অর্জুনের চরিত্র হল হিন্দু। জানেন কী ভাবে এই সব এজেন্টদের খবর পাঠানো হয়ে থাকে? শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে! আমিও এটা ছবিতে দেখিয়েছি,” বলছেন পরিচালক। কিন্তু এ সব দেখালে দেশের নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে তো? “না, আমি শুধু শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনটাই দেখিয়েছি। কী ভাবে তথ্যটাকে ডি-কোড করা হয়, তা তো দেখাইনি!” ছবিটি অ্যাকশনে ভরপুর। ‘ইনসেপশন’, ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’-এর অ্যাকশন পরিচালক টম স্ট্রাদার্স আর জন স্ট্রিট এই ছবিতে কাজ করেছেন। তাই ছবিটির অ্যাকশন নাকি একেবারেই ‘রিয়েল’। “কেউ আহত হলে দর্শক নিজে কষ্ট পাবেন, এ ভাবেই শ্যুট করেছি। টম অর্জুনকে বার বার বলতেন, উনি যেন নিজের বুলেট গুনে তার পর ফায়ার করেন। এজেন্টরা এটাই করে থাকেন। কিন্তু হিন্দি ছবির এজেন্টরা সাধারণত আনতাবড়ি যত ইচ্ছে গুলি চালিয়ে যান,” বলছেন নিখিল।
বলিউডের পরদায় দাউদকে নিয়ে যে উচ্ছ্বাস, সেটা কি তাঁর কাজেও রয়েছে? “আমি ঋষি কপূরের চরিত্রকে মহান করে দেখাইনি। দেখিয়েছি একজন নিষ্ঠুর মানুষ হিসেবে। দর্শক হিসেবে আমার ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই’ বা ‘কোম্পানি’-র মতো ছবি ভাল লেগেছে। কিন্তু পরিচালক হিসেবে মনে হয়, ২৬/১১-র মতো ঘটনার পর সময় এসেছে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার। তবে সিনেমা সমাজে কিছু পালটাতে পারবে না। ‘ডি-ডে’ ছবিতে বিনোদন রয়েছে। যদি আমার ছবি দেখে মানুষ এ বিষয় নিয়ে কথা বলে, তা হলেই আমি খুশি। ঠিক যে ভাবে ‘নো ওয়ান কিলড্ জেসিকা’ দর্শকের মধ্যে ডায়লগ তৈরি করেছিল।”
তা এত ‘রিয়েল’ ছবির শ্যুটিংটা কিন্তু পাকিস্তানে হয়নি। হয়েছে অমদাবাদে। আজকাল অনেক ছবির জন্যই পাকিস্তানের সেট তৈরি করা হয়েছে ভারতে। ‘দ্য মাইটি হার্ট’, ‘দ্য রিলাকটান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট’ থেকে ‘জিরো ডার্ক থার্টি’ সব ছবির পটভূমি পাকিস্তান হলেও শ্যুটিং হয়েছে ভারতে। “অমদাবাদ শহরের নামটা আসে অহমেদ শাহ্ থেকে। ওখানে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল রয়েছে। তা ছাড়া কচ্ছের রনের একটা সিকোয়েন্সও ছিল। সেটা মাথায় রেখেই অমদাবাদে শ্যুটিং করি। আমার চিত্রপরিচালক বাঙালি। নাম তুষারকান্তি রায়। আগে ‘ধোবিঘাট’ শ্যুট করেছে। ওঁর লেন্সে আমার ছবিতে পাকিস্তান জীবন্ত হয়ে উঠেছে,” বলছেন নিখিল।
ইচ্ছে আছে পরের ছবিটি কলকাতাতে শ্যুটিং করার। “দশ বছর কলকাতায় যাইনি। কলকাতায় অনেক অনেক আত্মীয়স্বজন আছে আমার। জামাইষষ্ঠীটা ভালই বুঝি। সুপর্ণা (স্ত্রী) আর আমার সাত বছরের মেয়ে কেয়া বাংলা বলতে পারে। বেশ কিছু ভাবনা মাথায় আছে। পারলে কলকাতাতে একটা থ্রিলার শ্যুট করব,” জানাচ্ছেন তিনি। বাংলা বলতে পারেন? “গড়গড় করে বলতে পারব না। প্রথমে শিখেছিলাম কী করে ‘আমি জানি না’ বলতে হয়। ভাষাটা বুঝতে পারি। বিশেষ করে কেউ যদি অপছন্দের ভাষা ব্যবহার করেন,” বলে মুচকি হেসে ছবির স্ক্রিনিংয়ে চলে যান তিনি।


আমি কলকাতার জামাই। স্ত্রী বাঙালি। আমার ইউনিটের অর্ধেক সদস্যও তাই।
ইচ্ছে আছে পরের ছবির শ্যুটিং কলকাতায় করার। নিখিল আডবাণী



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.