কালীগঞ্জের এলাকার পলাশির তেজনগর শ্মশান ও নদীঘাট দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে। পলাশি বাসস্ট্যান্ড থেকে তেজনগর শ্মশানের দূরত্ব সাত কিলোমিটার। ওই রাস্তাতেই পড়ে তেজনগর ঘাট। শ্মশান ও ঘাট পরিণত হয় মদ্যপদের ‘সান্ধ্যকালীন আখড়ায়’। এই শ্মশানঘাটে তেহট্ট মহকুমার বহু এলাকা থেকে শ্মশানযাত্রীরা আসেন।
ভাগীরথীর তেজনগর ঘাটের পশ্চিমপাড়ে মুর্শিদাবাদের রামনগর। দু’জেলার বহু মানুষ যাতায়াত করেন এই ঘাট দিয়ে। অথচ এই নদী-ঘাটের ন্যূনতম পরিকাঠামো অবধি নেই। পাতলা লোহার চাদর উজিয়ে চার চাকার মোটরভ্যান ও মোটর বাইক নিয়ে নৌকায় উঠতে হয় যাত্রীদের। এক পশলা বৃষ্টিতেই ঘাট জল কাদায় ভরে যায়। সেই কাদা মাড়িয়েই সন্তর্পণে পা টিপে টিপে ঘাটে যেতে হয় লোকজনকে। ঘাট সংলগ্ন শ্মশানের অবস্থাও তথৈবচ। শ্মশানে আলোর কোনও বন্দোবস্ত নেই। রাতবিরেতে দাহ করতে আসা শ্মশানযাত্রীদের ভোগান্তির অন্ত নেই। কোনও কিছু খুঁজতে অন্ধকারে হাতড়ে মরতে হয় তাঁদের। শ্মশান চত্বরে বসার কোনও জায়গা নেই। এমনকী ভিজে জামাকাপড় পাল্টানোর কোনও সুযোগও নেই শ্মশানের চৌহদ্দিতে।
কিন্তু রয়েছে মদ্যপদের প্রতিদিনের উৎপাত। অথচ এই তেজনগর শ্মশান শুধু কালীগঞ্জ নয়, তেহট্ট, পলাশিপাড়া, করিমপুরের মানুষেরও দাহকার্যের প্রধান ভরসাস্থল। পলাশির বাসিন্দা রঘুনাথ মণ্ডল বলেন, “দিন দশেক আগে দাদুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তেজনগর শ্মশানে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি গোটা এলাকায় কাদায় ভর্তি। বসার ঠাঁই নেই, মহিলাদের কাপড় পাল্টানোর জায়গাও নেই। এলাকার দখল নিয়েছে মাতালরা। জায়গায় জায়গায় বসেছে জুয়ার ঠেক।”
প্রাক্তন সাংসদ জ্যোতির্ময়ী শিকদারের উদ্যোগে শবদাহের জন্য যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তা এখন পড়ে রয়েছে। শ্মশানযাত্রীদের বক্তব্য, গঙ্গা থেকে দূরে বলে সেখানে গেলে সমস্যাই বাড়ে। তবে স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, ভাঙনের ভয় থেকে বাঁচতেই একটু দূরে ওই শবদাহের স্থান করা হয়েছিল।
কালীগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি তৃণমূলের আলতাফ হোসেন বলেন, “পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। মদ্যপদের উপদ্রবও রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করেছি পরিস্থিতি পরিবর্তনের। শ্মশানকমিটির সঙ্গে একাধিকবার কথাও হয়েছে।” শ্মশান কমিটির সম্পাদক অনুপম মণ্ডল বলেন, “আমরা যতটুকু সামর্থ্য ততটা করেছি। মদ্যপদের সমস্যা রয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদও করেছি। কিন্তু প্রতিবাদ করলে আক্রান্ত হওয়ার ভয় রয়েছে।” |