লিফলেট বিলিকে ঘিরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও এসএফআই’র বিতণ্ডা। তা থেকেই হাতাহাতি। আহত হয়েছিলেন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, টিএমসিপির এক সমর্থক বাচ্চু দাস।
সামান্য আঘাত, প্রাথমিক চিকিৎসরা পরেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই ঘটনায় টিএমসিপি এসএফআই নেতা অর্ণব পালের নামে খুনের চেষ্টার নালিশ করে বসে চাপড়া থানায়। শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ পেয়েই পুলিশও অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। সঙ্গেই সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয় অর্ণবকে। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা ঠোকায় বিচারক ৬ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে শাসক দলের অঙ্গুলিহেলনেই কী পুলিশ এত তৎপর? প্রশ্ন উঠেছে ‘রায়গঞ্জে বেল আর মাজদিয়ায় বেল’এর পুরনো স্লোগানও। গত বছর, মাজদিয়ার সুধীররঞ্জন লাহিড়ী মহাবিদ্যালয়ের কয়েক জন এসএফআই সমর্থকের অধ্যক্ষ নিগ্রহের অভিযোগে ৩১ দিন জেল হাজত হয়। অথচ সেই সময়ই রায়গঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ নিগ্রহে অভিযুক্ত শাসক দলের কর্মী সমর্থকরা দিব্যি জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন। |
ওই ঘটনার রাজ্য জুড়ে শিক্ষাঙ্গণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে ঝড় উঠেছিল। মঙ্গলবার চাপড়ার বাঙালঝি কলেজের ওই ঘটনায় আবারও পুলিশের সাহায্যে কলেজ-ক্যাম্পাসে বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে বলে বিরোধী শিবিরের দাবি।
অভিযুক্ত ছাত্রের আইনজীবী সৌরভ ভট্টাচার্য বলেন, “মাজদিয়া কাণ্ডের মতই এ ক্ষেত্রেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হল অর্ণবকে। পুলিশ যে ভাবে জামিন অযোগ্য ধারা মামলা করেছে তা শাসক দলের প্রতিহিংসা প্রবণতার প্রমাণ।”
চাপড়া কেন্দ্রের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা জেলা আদালতের আইনজীবী সামশুল ইসলাম মোল্লার বক্তব্য, “বিরোধী মতকে চাপা দিতে পরিকল্পিতভাবে অর্ণবের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।” এসএফআই-য়ের জেলা সভাপতি কৌশিক দত্তের মন্তব্য: “সামান্য একটা ঘটনার জেরে একটা ছাত্রের জেল হাজত মেনে নেওয়া যায়! এটা গনতন্ত্রের পক্ষে লজ্জার।” আর, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি জয়ন্ত পালের বক্তব্য, “কলেজের মধ্যেই আমাদের কর্মী সমর্থকদের খুনের চেষ্টা হচ্ছে। এটা মানা যায় না।”
কলেজের শিক্ষকরাও প্রাক্তণ ছাত্র অর্ণব পালের পক্ষে দাড়াচ্ছেন। অধ্যক্ষ কৃষ্ণগোপাল রায় বলেন, “অর্ণবকে আমি চিনি। মেধাবী ছাত্র ছিল। ওর পক্ষে এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অসম্ভব। পুলিশের উচিত ছিল, গ্রেফতারের আগে অভিযোগের সত্যতা সর্ম্পকে তদন্ত করা।”
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্রের সাফ কথা, “অভিযোগের বয়ান অনুযায়ী পুলিশ ধারা দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।” মঙ্গলবার চাপড়ার বাঙালঝি কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের মধ্যে লিফলেট বিলি করছিল টিএমসিপি। সেই সময় কলেজের পাঠ চুকিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির জন্য সার্টিফিকেট প্রত্যয়িত করার জন্য কলেজে যান অর্ণব পাল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে অভিযোগ, এসএফআই তাদের লিফলেট বিলিতে বাধা দেন। এ নিয়ে দু’তরফের বচসা বাধে। পরে তা ধাক্কাধাক্কির পর্যায়েও যায়। অভিযোগ, কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বাচ্চু দাসকে এসএফআই সমর্থকরা কলেজ সংলগ্ন একটি মাঠে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন। |