যেন ‘বিগ বস’-এর ঘর। নিজেকে বাস্তবের মাটিতে পা রেখে চেনা, জানা। সোজা কথায় ‘বাস্তবের মাটিতে পা রাখা’। ক্যারিবিয়ান দ্বীপে জোড়া হার ভারতীয় শিবিরে এ রকম পরিস্থিতিই তৈরি করে দিয়েছে।
এই সিরিজে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে হা-হুতাশ করে যে আর লাভ নেই, তা বিরাট কোহলিরা ভাল করেই বুঝে নিয়েছেন। আগের দিন ম্যাচের পর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বলেছিলেন, “মাহি-র ঠান্ডা মাথাটা খুব মিস করছি”। মঙ্গলবার আরও বড় বুলডোজারের নীচে পড়ে শ্রীলঙ্কার কাছে ১৬১ রানে হারের পর কোহলি কিন্তু আর সেই পথই মাড়ালেন না। এ বার ওই কথাটাই বললেন, “এ বার মাটিতে পা রাখতে হবে”।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি যদি ভারতীয়দের কাছে হাইওয়েতে গাড়ি চালানো হয়ে থাকে, তা হলে চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজ অবশ্যই পাহাড়ে ওঠা। অথচ এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। কোহলিদের কাছেও এই কেন-র উত্তর নেই। না হলে স্টপ-গ্যাপ ক্যাপ্টেন কখনও বলেন, “আমাদেরও এখন বুঝতে হবে কোথায় গণ্ডগোলটা হচ্ছে”? তাঁর বক্তব্য, “আরও দুটো ম্যাচ তো রয়েছে। তার মধ্যে নিজেদের শুধরে ফেলতে হবে।”
কিন্তু ক্যালকুলেটরের চক্রব্যূহ ক্রমশ ঘিরে ধরছে ভারতীয় শিবিরকে। বাকি দুটো ম্যাচ জিততেই হবে কোহলিদের। তাতেও যে ফাইনালে ওঠা নিশ্চিত হবে, তা কিন্তু নয়। রবিবার যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেয়, তা হলেই তা সম্ভব। উল্টোটা যদি হয়, তা হলে ভারতকে বাকি দুটো ম্যাচই বোনাস পয়েন্ট নিয়ে জিততে হবে। যা এই পারফরম্যান্সের পর রীতিমতো কঠিন দেখাচ্ছে।
গত কাল শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা মাত্র এক উইকেট হারিয়ে ভারতের ঘাড়ে ৩৪৮ রানের পাহাড় চাপিয়ে দেওয়ার পর কোহলিদের ব্যাটিং মাত্র ১৮৭ রানে ভেঙে পড়ে। যে পারফরম্যান্সের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কোহলি শুধু বললেন, “দিনটা খুব খারাপ গেল আমাদের। বলটা একদম ভাল করতে পারিনি আমরা। ব্যাটিংয়েও তাই। ৩৪৯ রান তাড়া করতে গেলে শুরুটাই ঝড়ের বেগে করতে হয়। আমরা তো সেটাই করতে পারলাম না।” শ্রীলঙ্কার ওপেনার উপুল থরঙ্গা একা যা রান করলেন (অপরাজিত ১৭৪), ভারতের ব্যাটসম্যানরা সবাই মিলে তার চেয়ে মাত্র ১৩ রান বেশি তুলতে পারলেন। সবচেয়ে বেশি রান রবীন্দ্র জাডেজার (৪৯ অপরাজিত)।
|
প্রাক্তন সতীর্থ বলছেন |
গৌতম গম্ভীর
“এমন তো সব খেলাতেই হয়। ভাল সময়ের পর খারাপ সময় আসতেই পারে। এটা ক্রিকেটের অঙ্গ।
শুধু ভারতীয় ক্রিকেটারদের ক্লান্ত বলে কী হবে? শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররাও তো আমাদের সমান ক্রিকেট খেলছে। ওরা ক্লান্ত না হলে আমরা কেন হব? অন্য দল ভাল খেললে আমাদের বরং তা স্বীকার করে নেওয়া উচিত।
প্লিজ ভারতীয় দলের নেতৃত্ব নিয়ে কিছু জানতে চাইবেন না। এই নিয়ে কোনও কথা নয়। ধন্যবাদ।”
|
|
হঠাৎ ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সের রেখচিত্র এমন হুড়মুড় করে নীচের দিকে নামায় অন্য অনেকের মতো ‘গেল গেল’ রব তোলায় সায় নেই গৌতম গম্ভীরের। তিনি দলের সঙ্গে জামাইকায় না থাকলেও তাঁর মন পড়ে সেখানে। গম্ভীর বলছেন, এই ব্যর্থতা নিয়ে বেশি হইচই করার কোনও মানে হয় না। বুধবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের গম্ভীর বলেন, “এমন তো সব খেলাতেই হয়। ভালর পর খারাপ আসতেই পারে। এটা ক্রিকেটের অঙ্গ।”
টানা ক্রিকেট খেলার ধকল কি ভারতীয়দের উপর পড়ছে? গম্ভীর মানতে চান না। বলছেন, “শুধু ভারতীয় ক্রিকেটারা ক্লান্ত? শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররাও তো আমাদের সমান ক্রিকেট খেলছে। ওরা ক্লান্ত না হলে আমরা কেন হব? অন্য দল ভাল খেললে আমাদের বরং তা স্বীকার করে নেওয়া উচিত।” আর ক্যাপ্টেনশিপ? “প্লিজ না, এই নিয়ে কোনও কথা নয়। ধন্যবাদ”, কথা শেষ করে দেন গম্ভীর। একসময় যাঁকে নেতৃত্বের ব্যাটন দেওয়া নিয়ে নিয়মিত আলোচনা চলত ভারতীয় ক্রিকেট মহলে।
আরও একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেট মহলে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যাঁরা দুর্দান্ত ফিল্ডিং করে এলেন, তাঁদের এখানে এ রকম হাল কেন? খারাপ ফিল্ডিং নিয়ে কোহলির যুক্তি, “আমরা দু’জন সেট ব্যাটসম্যানের ক্যাচ ফেলেছি। ফলে আরও ১৬০-১৭০ রান তুলে ফেলল ওরা। তা হলে ওদেরও কম রানে বেঁধে ফেলা যেত।” কিন্তু ফিল্ডিং এত খারাপ হচ্ছে কেন? কোহলি সেই একটা খারাপ দিনের তত্ত্ব দিয়েই বিষয়টা সামলালেন। বললেন, “জন্টি রোডসেরও তো ক্যাচ পড়েছে। এক এক দিন এমন হয়। আগের ম্যাচে তো খারাপ ফিল্ডিং হয়নি আমাদের।”
খারাপ দিন কাটানোর যুদ্ধক্ষেত্র অবশ্য বদলাচ্ছে এ বার। আর জামাইকা নয়, পোর্ট অব স্পেন। যেখানে শুক্রবার প্রতিপক্ষের নাম আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
|
হারের ব্যাখ্যা অধিনায়কের
বিরাট কোহলি |
• দিনটা খুব খারাপ গেল আমাদের। বলটা একদম ভাল করতে পারিনি আমরা। ব্যাটিংয়েও তাই। ৩৪৯ রান তাড়া করতে গেলে শুরুটাই ঝড়ের বেগে করতে হয়। আমরা তো সেটাই করতে পারলাম না।
• আমরা দু’জন সেট ব্যাটসম্যানের ক্যাচ ফেলেছি। ফলে আরও ১৬০-১৭০ রান তুলে ফেলল ওরা। না হলে ওদেরও কম রানে বেঁধে ফেলা যেত।
• ন্টি রোডসেরও তো ক্যাচ পড়েছে। এক এক দিন এমন হয়। আগের ম্যাচে তো খারাপ ফিল্ডিং হয়নি আমাদের।
• আরও দুটো ম্যাচ তো রয়েছে। তার মধ্যে নিজেদের শুধরে ফেলতে হবে।
|
|