ক্যাপ্টেন বিরাটকে
অনেক কিছু শিখতে হবে
সাবাইনা পার্কে পা দিয়ে প্রথমেই যে মন্ত্রটা মাথার মধ্যে গেঁথে নিতে হবে, সেটা হল, টস জেতো আর ফিল্ডিং নাও। সে নয় হল। টস জিতে ফিল্ডিংই নিল ভারত। ধোনির শেখানো বুলিই আওড়াল বিরাট কোহলি। কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও যা করা দরকার, তা যদি তার দলের বোলাররা না করতে পারে, তা হলে আর ঠিক সিদ্ধান্তটা নিয়ে লাভটাই বা কি?
শেখানো বুলি আওড়ানো যত সহজ, মাঠে নেমে খেলাটা তো আর তত সোজা নয়। ৩৫ ওভারে একটা উইকেটও তুলতে না পারাটা তারই সেরা উদাহরণ। টস জিতে অর্ধেক ম্যাচ জেতা তখনই হয়ে যায়, যখন টসজয়ীরা তাদের প্রয়োজনীয় খেলাটা খেলতে পারে। কিন্তু ৩৫ ওভার পরেও যদি শিকারের জন্য হাহাকার করতে হয় বোলারদের, বিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা যদি ৪০ ওভারে ২২৪ রান তুলে ফেলে অনায়াসে, তা হলে তো বড় সমস্যা।
নতুন অধিনায়ক কোহলির সঙ্গে কোচ ফ্লেচার।
ওপেনাররা ৩৮.৪ ওভারে তুলল ২১৩। মাহেলা জয়বর্ধনে (১০৭)-র ইনিংসটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু থরঙ্গা (১৭৪ ন.আ.) কী ভাবে ভারতীয় বোলিংকে এ রকম শাসন করে গেল, বুঝলাম না। ধোনি ছাড়া দলটাকে বেশ ছন্নছাড়া লেগেছে। বিরাটের হাতে যেন টিমের রাশটা ছিল না। ভবিষ্যতে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হতে গেলে ওকে কিন্তু আরও অনেক কিছু শিখতে হবে।
ধোনি একটা ম্যাচে না খেললেই যদি এমন হাল হয়, তা হলে তো ওকে আজীবন অধিনায়ক পদ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে বোর্ডকে। ওর জন্যই হয়তো ভারতীয় ক্রিকেটে ননপ্লেইং ক্যাপ্টেনের প্রচলন হবে।
আরও একটা ব্যাপারে বড় ধাক্কা খেলাম। যে টিমটা ইংল্যান্ডে এ রকম দুর্ধর্ষ ফিল্ডিং করে এল, তারা ক্যারিবিয়ানে এসে এটা কী করছে? এ দিন তো শুরুতে মুরলী বিজয় ছাড়ল মাহেলার ক্যাচ। পরে উমেশ যাদবও একই অপরাধ করল। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং খারাপ করল, রান আউট করতে পারল না। এ কি ধোনি না থাকার ফল? টিমটার মধ্যে প্রথম থেকেই যে কাঁধ ঝুঁকে পড়ার ব্যাপারটা দেখলাম, সেটা কিন্তু কোহলি মেরামত করতে পারল না।
ম্যাচ শুরুর আগে সন্ধ্যায় এক ওয়েবসাইটে দেখছিলাম, জামাইকার আবহাওয়া বেশ স্যাঁতস্যাঁতে। সকাল থেকে সেখানে বৃষ্টি হবে। তবে ভাগ্য ভাল, খেলা শুরুর আগেই তা থেমে গেল। বেলা যত গড়িয়েছে, আকাশ তত পরিষ্কার হয়েছে। সকালের এমন আবহাওয়া দেখে সামি আহমেদকে প্রথম এগারোয় রাখার সিদ্ধান্তটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। একেবারে ঠিক। কিন্তু একটা ঠিক কাজ করতে গিয়ে যে এত বড় ‘ব্লান্ডার’ করে ফেলবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট, তা ভাবতেও পারিনি। সত্যিই বিশ্বাস করিনি যে, ভুবনেশ্বর কুমারকে ড্রেসিং রুমে বসিয়ে রেখে মাঠে নেমেছে ভারতীয় দল।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অসাধারণ ফিল্ডিং করে আসা ভারতীয় দলকে ডোবাল ছন্নছাড়া ফিল্ডিং।
কেন ভুবনেশ্বর কুমার মাঠের বাইরে থাকবে? ওকে বিশ্রাম দেওয়া হল, না কি চোট আছে ওর? তা যদি না হয়, তা হলে বলব, এটাই এই ম্যাচের সবচেয়ে বড় ভুল, যেটা গোটা টুর্নামেন্টেরও সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে উঠতে পারে।
সুযোগ কাজে লাগানোর ব্যাপারে যে ও সর্বদাই নিখুঁত, তা সামি বরাবরই দেখিয়ে এসেছে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হল না। প্রথম স্পেলে টানা ছ’ওভার বল করল। দিল মাত্র ২০ রান। এর মধ্যে যদি একটা-বা দুটো উইকেট নিয়ে নিতে পারত, তা হলে আমি ওকে দশে দশই দিয়ে দিতাম। কিন্তু এই বোলিংয়েও দশের মধ্যে সাত-আট দেওয়াই যায়। ও যখনই মাঠে নামে, তখনই বুঝিয়ে দেয় যে, ও লম্বা রেসের ঘোড়া। এ দিনও প্রথম স্পেলে যথেষ্ট বিপজ্জনক দেখিয়েছে সামিকে। কিন্তু দ্বিতীয় স্পেলে যখন এল, তখন আর কিছু করার ছিল না। উইকেটে জমে গিয়েছে থরঙ্গা-ম্যাথেউজ।
একেই সবচেয়ে বেশি চাপে ফেলতে পারত যে বোলার, সে দলে নেই। তার ওপর যে সবচেয়ে বেশি সমীহ পাচ্ছিল, তাকে ১২ নম্বর ওভারের পর সেই ৪০তম ওভারে নিয়ে আসা হল। এ আবার কী ধরণের অধিনায়কত্ব? নিজেকে সঠিক ট্র্যাকে নিয়ে আসতে কোহলির এখন বেশ সময় লাগবে বলেই মনে হচ্ছে।
মঙ্গলবার সাবাইনা পার্কে বল গলাচ্ছেন অশ্বিন। ক্যাচ ফস্কাচ্ছেন উমেশ যাদব।
জয়বর্ধনে ও থরঙ্গা যে ভাবে ব্যাট করছিল, তাতে ওদের জুটি ভাঙতে হলে মাথা থেকে বিশেষ কিছু বের করতে হত অধিনায়ক-বোলারদের। কিন্তু এই বাড়তি তাগিদটা বিরাটের মধ্যে দেখলাম না। তবে আমি নিশ্চিত, ভুবনেশ্বর দলে থাকলে সামির সঙ্গে নতুন বলে শ্রীলঙ্কার ওপেনারদের ঝামেলায় ফেলে দিতে পারত ওরা। বাকি দুই পেসারকে দেখে তো আমি রীতিমতো হতাশ। যেন নেটে নিজের দলের ব্যাটসম্যানদের বল করছে। চাপ সৃষ্টি করার কোনও চেষ্টাই ছিল না ইশান্ত-উমেশদের মধ্যে। ৪৯তম ওভারে এসে ২২ রান দিয়ে গেল উমেশ। জাডেজা, অশ্বিনরাও উইকেট থেকে তেমন টার্ন পেল না বলে নির্বিষ। তা হলে আর ওদের নিজস্ব ক্যারিশমা কী রইল? এমন বোলিং নিয়ে ভারত কী করে ম্যাচ জিতবে, জানি না।
ধোনিহীন ভারত
• শেষ বার ২০১২-র ত্রিদেশীয় সিরিজে ব্রিসবেনে এক ম্যাচ নির্বাসনের জন্য খেলতে পারেননি ধোনি।
• এর আগে গোটা সিরিজে ধোনি খেলেননি ২০১১ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বিশ্রাম নেওয়ায়। সেই সিরিজে অধিনায়কত্ব করেন বীরেন্দ্র সহবাগ।
• চোটের জন্য ধোনি এর আগে কোনও ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থেকে ছিটকে যাননি।
• কেরিয়ারে ধোনি মোট ২৯টি ওয়ান ডে/টি-টোয়েন্টি খেলতে পারেননি বিশ্রাম/জ্বর/নির্বাসন-এর জন্য।
• চোটের জন্য খেলেননি ৪টি টেস্ট।

শ্রীলঙ্কা
থরঙ্গা ন.আ. ১৭৪
জয়বর্ধনে ক উমেশ বো অশ্বিন ১০৭
ম্যাথেউজ ন.আ. ৪৪
অতিরিক্ত ২৩,
৫০ ওভারে মোট ৩৪৮-১।
পতন: ২১৩।
বোলিং: সামি ১০-০-৬৮-০, উমেশ ৮-০-৬৪-০,
ইশান্ত ৯-০-৬৮-০, জাডেজা ৯-০-৫৫-০, অশ্বিন ১০-০-৬৭-১,
কোহলি ২-০-৯-০, রায়না ২-০-১০-০।
(স্কোর অসম্পূর্ণ)

ছবি: এএফপি




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.