এ কেমন ফেরা, প্রশ্ন অমরজিতের শোকার্ত বাবার
বাড়ির উঠোনে টাঙানো শামিয়ানা। নীচে সারি পাতা চেয়ার। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে বেশ কিছু মানুষ। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন সত্তরোর্ধ্ব চন্দ্রমোহন বলিহার। পাশে বসা দুই বৃদ্ধার উদ্দেশে নিচু গলায় বললেন, “ছেলে তো বলেছিল আজ ফিরবে। কাল দুপুরেও ফোন করেছিল। আজ ফিরল। কিন্তু এ কেমন ফেরা?”
রাঁচির লোয়ারবাজারের পাথলকুডুয়ার বাড়িটিতে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে আজ সকাল থেকে।
বিড়বিড় করতে করতেই চন্দ্রমোহন ঢুকে গেলেন বাড়ির ভিতর। এক বার ঘড়ি দেখলেন। এক বার বৈঠকখানার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন, ঘর সাজানো শেষ হতে আর কত দেরি। ওই ঘরেই তো শোয়ানো হবে ছেলে অমরজিতকে। বিছানার এক প্রান্তে ফুল-মালায় ঢেকে গিয়েছে ছেলের পুলিশি পোশাক পড়া ছবিটি।
উঠোনের এক কোণায় তখন কাঠের ক্রুশে সাদা রং করা হচ্ছে। পাশে গোলাপি রিবনে নকশা করা, গোলাপ ফুলে সাজানো পালিশ করা কালো কফিন। বাড়ির অন্দর আর বৈঠকখানার মধ্যে ছোট্ট হল ঘরে তখন বসে অমরজিতের বৃদ্ধা মা, প্রমীলা। এক আত্মীয়কে নিচু স্বরে বললেন, “ঈশ্বর যে কখন কাকে কেড়ে নেন!”
অমরজিতের কফিন বন্দি দেহ ঘিরে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েরা। —নিজস্ব চিত্র
মৃত্যুর মাত্র ঘণ্টাখানেক আগেই, দুপুরে টেলিফোন করে অমরজিৎ জানিয়েছিলেন, আজ, বুধবার, না হলে সপ্তাহান্তেই বাড়ি আসবেন। সবাই খুব খুশি ছিল। কিন্তু মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে বাড়ির পরিবেশ আর পুরো পরিবারটাকেই ওলট-পালট করে দিয়েছে দুমকায় পুলিশের গাড়ির উপরে মাওবাদী হামলা। বাড়ির বড় ছেলে তথা পাকুড়ের পুলিশ সুপার অমরজিৎ বলিহার গুলিবিদ্ধ দুপুর তিনটে নাগাদ খবর আসতেই বলিহার পরিবারের সদস্যেরা বাক্যহারা।
আজ সকালেই দুমকা থেকে রাঁচির ডোরাণ্ডায়, রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের সদর দফতরে অমরজিতের দেহ নিয়ে আসা হয়। স্বামীর মৃতদেহ নিতে হাজির ছিলেন অমরজিতের স্ত্রী সুমনলতা, দুই কন্যা অপরাজিতা, শালিনী ও পুত্র অবিনাশ। সেখান থেকে বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ কফিনবন্দি অমরজিতের দেহ আসে পাথলকুডুয়ার বাড়িতে। ছিল পুলিশি কর্ডন। প্রথমে বৈঠকখানায় অমরজিতের দেহ রাখা হয়। তার পরে শরীর থেকে রক্তের দাগ পরিষ্কার করে ফের তা নতুন কফিনে ভরে রাখা হয় বাড়ির উঠোনে।
বলিহার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সুমিত কুজুরের কথায়, “এক ঘণ্টা আগে যে মানুষটা বাড়িতে টেলিফোন করে বলল, আজ বাড়ি আসবে, সে এক ঘণ্টার মধ্যে শেষ! আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না। আগে অনেকবার উনি বলেছেন বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু পুলিশের চাকরি তো। ফেরা হয়নি। কিন্তু এ ফেরা তো চাইনি।” বিশ্বাস করতে পারছে না পাথলকুডুয়াও। অমরজিতের জন্ম থেকে বড় হয়ে ওঠা, সবই এখানে। পাড়ার ছেলেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উঠোনে অমরজিতের কফিনের সামনে উপচে পড়ে ভিড়।
বিকেল চারটে নাগাদ কাঁটাটোলির কাছে সিএনআই সমাধিস্থলে নিয়ে যাওয়া হয় অমরজিতের দেহ। সেখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তাঁর। সরকারের তরফে দেওয়া হয় গান স্যালুট। যাওয়ার আগে কফিনে শোয়ানো ছেলের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে মায়ের স্বগতোক্তি, “ঘর আয়ে ভি তো ক্যায়সে আয়ে বেটা?”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.