নজরে মদানিও
বীরভূম স্কোয়াডের কারা ছিল, তদন্তে পুলিশ
দুমকার কাঠিকুণ্ডে পুলিশের ওপর হামলায় বীরভূম স্কোয়াডের অন্তত পাঁচ-ছ’জন মাওবাদী সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। রাজ্য গোয়েন্দা শাখা (আইবি)-র একটি দল ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ডে কাঠিকুণ্ড-সহ দুমকা জেলার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন। একই সঙ্গে বীরভূম জেলার রামপুরহাট, নলহাটি ও মুরারই এলাকাতেও মাওবাদীদের সাম্প্রতিক গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দারা তথ্য জোগাড় করছেন।
কাঠিকুণ্ডে হামলার পরে ২০০৯-এর জুনে দিল্লিতে গ্রেফতার হওয়া লস্কর-ই-তইবার মহম্মদ উমের মদানির কার্যকলাপ নিয়েও নতুন করে খোঁজ নিচ্ছেন এ রাজ্যের পুলিশ ও গোয়েন্দারা। জেরায় মদানি স্বীকার করেছিলেন, বীরভূমের নলহাটি ও তার সংলগ্ন ঝাড়খণ্ডের কয়েকটি জায়গায় মাওবাদী ও লস্করের মধ্যে যোগসূত্র গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা সেই সময়ে জানতে পারেন, পাকুড়ে একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনে মাওবাদীদের ঘটানো বিস্ফোরণে মদানির হাত ছিল। তাঁর দুই শাগরেদ তখন মাওবাদীদের বিস্ফোরক সরবরাহ করেছিল। মদানির মায়ের বাপের বাড়ি ও তাঁর প্রথম স্ত্রীর বাড়ি নলহাটিতে। কাঠিকুণ্ডের যে জায়গায় মঙ্গলবার বিকালে এসপি-সহ সাত পুলিশকর্মী খুন হন, নলহাটি থেকে সেখানকার দূরত্ব বড়জোর ৩০-৩৫ কিলোমিটার। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-ও মদানি ও তাঁর বীরভূমের যোগাযোগ নিয়ে ফের অনুসন্ধান শুরু করেছেন। চার বছর আগে দিল্লির কুতব মিনার এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়ার কয়েক মাস পর এসটিএফ মদানিকে লালবাজারে নিয়ে এসে জেরা করে।
প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, কাঠিকুণ্ডের হামলায় বীরভূম স্কোয়াডের মাওবাদীদের মধ্যে খয়রাশোল থানা এলাকার লোকপুর গ্রামের শ্যামাপদ দাস ও তাঁর স্ত্রী টুম্পা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ভুবনেশ্বর, সাগর এবং অমল ওরফে সুকান্তের নামও উঠে আসছে। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ওই স্কোয়াডের সব সদস্য স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র চালানোয় দক্ষ। তবে ওই স্কোয়াডের কমান্ডার তথা মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য মাধাই পাত্র ওরফে সুভাষ কাঠিকুণ্ডের হামলায় কী ভূমিকা নিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে গোয়েন্দারা এখনও নিশ্চিত নন। কিষেণজির ঘনিষ্ঠ ছিলেন মাধাই পাত্র। বীরভূম স্কোয়াড গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া বেলা সরকার ওরফে ঊষার গত দু’এক দিনের গতিবিধি সম্পর্কেও খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা এক সময়ে জেনেছিলেন, বীরভূম স্কোয়াডেরই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বাবলু ওরফে দীনেশ দাসের হাতে শিলদার ইএফআর শিবির থেকে লুঠ হওয়া একটি ইনস্যাস রাইফেল রয়েছে। যদিও বাবলুর গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দারা এখনও অন্ধকারে।
এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, “বীরভূমে মাওবাদীদের ওই স্কোয়াডটির কাজকর্ম গত দেড় বছর এক রকম বন্ধ থাকলেও অধিকাংশ সময়েই তারা রাজ্যের সীমানা টপকে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় ও দুমকায় গিয়ে থাকছে এমন খবর ছিল। তাই কাঠিকুণ্ডে মঙ্গলবারের হামলায় তাদের জড়িত হওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয়। আমরা আগেই জেনেছিলাম, জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ায় এই রাজ্যে তাদের প্রায় সব স্কোয়াড সদস্যই অধিকাংশ সময়ে ঝাড়খণ্ডে থাকছে এবং সেখানকার অভিযানে যোগ দিচ্ছে।”
মাওবাদীদের ওই বীরভূম স্কোয়াড ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে জেলায় সিপিএম নেতাদের খুন, ট্রেন লাইনচ্যূত করা-সহ সাত-আটটি হিংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছিল বলে পুলিশ পরে জানতে পারে। ২০১১-র নভেম্বরে ওই স্কোয়াডের তিন মাথা বরুণ দাস ওরফে সূর্য, সমীরণ রুইদাস ও উত্তম বারুই ধরা পড়ার পর স্কোয়াডটি বীরভূমে আর সক্রিয় নেই বলে পুলিশের দাবি।
ছত্তীসগঢ়ে গত ২৫ মে মাওবাদী হামলার পরে এ রাজ্যে মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার সুরক্ষা, বিশেষত ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা ঘেঁষা এলাকাগুলির নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্র ৬ কোম্পানি সিআরপি পাঠায়। এর মধ্যে নলহাটিতেই মোতায়েন রয়েছে এক কোম্পানি সিআরপি। আইবি-র এক অফিসার বলেন, “সিআরপি মোতায়েনের পর নলহাটিতে থাকা বীরভূম স্কোয়াডের কয়েক জন পাকুড়ে পালিয়ে যায়। এসপি-র ওপর হামলায় তাদের কাজে লাগানো হতে পারে।” প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, মাওবাদীদের বিহারের একটি স্কোয়াড ওই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.