মাস দশেক আগে দুষ্কৃতী সন্দেহে পুলিশের হাতে মার খেয়ে এক নির্মাণকর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল দুর্গাপুরের ভারতী এলাকায়। এ বার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশে সেই অভিযোগের ‘ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ইনকোয়ারি’ শুরু করেছেন দুর্গাপুরের এসিজেএম কাজি আবুল হাসেম। মঙ্গলবার থেকে শুনানিও শুরু হয়েছে। বুধবার মৃতের পরিবারের লোকজন এবং অভিজুক্তেরা হাজির ছিলেন এজলাসে।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর। ৩ সেপ্টেম্বর পেশায় রাজমিস্ত্রী সানোয়ার শেখ পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে জানান, গত কয়েক বছর ধরে তিনি সেপকো এলাকায় বিভিন্ন নির্মাণ কাজ করেন। মুর্শিদাবাদ থেকে বেশ কয়েকজন যুবকও তাঁর দলে কাজ করেন। তিনি জানান, ওই দিন কাজের শেষে তাঁদের মধ্যে তিন জন ভারতী রোডে বেড়াতে যান। সন্ধ্যায় বিদ্যাপতি রোড ও জয়দেব রোডের উল্টোদিকে জঙ্গলের রাস্তা ধরে ফেরার সময়ে দুষ্কৃতী সন্দেহে তাঁদের তাড়া করে পুলিশ। ভয়ে তাঁরা দৌড়াতে শুরু করে দেন। তখনই উত্তম মাল (৩৩) নামে একজনকে পুলিশ ধরে ফেলে। রাত ১০টা নাগাদ সানোয়ার শেখ জানতে পারেন, উত্তমবাবুকে গুরুতর জখম অবস্থায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভোরবেলায় পুলিশ উত্তমবাবুকে গাড়ি ভাড়া করে বহরমপুর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ সেখানে মারা যান উত্তমবাবু। সানোয়ার শেখের অভিযোগ, পুলিশের মারধরে জখম হয়ে মারা গিয়েছেন উত্তমবাবু। দোষী পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সেপকো এলাকার বাসিন্দারা দুর্গাপুর থানার সামনে দেহ রেখে বিক্ষোভও শুরু করে দেন। দিনভর বিক্ষোভ চলে। সন্ধ্যায় তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে।
বুধবার আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে উত্তমবাবুর এক আত্মীয় দুলাল মাল জানান, গত বছরের ১০ অক্টোবর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়। উত্তমবাবুর বাবা-মা স্ত্রী, আর চার মেয়ের সংসারে একমাত্র রোজগেরে ছিলেন তিনিই। ফলে এখন সংসার চালাতে হিমসিম দশা তাঁর স্ত্রী সুখীদেবীর। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ মে উত্তমবাবুর পরিবারকে আদালত থেকে নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশে এসিজেএম কাজি আবুল হাসেম অভিযোগের ‘ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ইনকোয়ারি’ করবেন। সেই মতো বুধবার পরিবারের সদস্যরা হাজির হন দুর্গাপুর আদালতে। ঘটনায় অভিযুক্ত দুই সিভিক পুলিশ কর্মী, বি-জোনের বিদ্যাপতি রোডের রাহুলকুমার বড়ুয়া এবং ওল্ড কোর্ট জলট্যাঙ্ক এলাকার লম্বোদর মাহাতোকেও এ দিন ডেকে পাঠায় আদালত। তাঁদের বক্তব্য শোনেন এসিজেএম। পরে অভিযোগকারীর তরফের আইনজীবি জ্ঞানেন্দ্রনারায়ণ সিংহ বলেন, “মৃতের মাথার পিছন দিকে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশ জানিয়েছিল, আটক করার পরে মোটরবাইকে করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে জখম হন তিনি। কিন্তু তাহলেও দায় এড়াতে পারে না পুলিশ। সেক্ষেত্রে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হয়েছে তাঁর।” আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনায় সাক্ষীর সংখ্যা ৪৫। ধাপে ধাপে সবার বক্তব্য শুনবেন বিচারক। |