বালি তুলতে গিয়ে ধাতব ষাঁড় উদ্ধার নিয়ে দুই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। কোচবিহারের বাণেশ্বর ও থানেশ্বরের বাসিন্দারা নিজেদের এলাকার শিব মন্দিরে ওই মূর্তি প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। দাবিদারদের মধ্যে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের হেফাজতে থাকা মূর্তিটি কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে জটিলতা বেড়েছে। কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “নিরাপত্তা, পরিকাঠামো-সহ সামগ্রিক তথ্য খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
|
এই সেই ষাঁড়।—নিজস্ব চিত্র। |
জুনে তৃতীয় সপ্তাহে বোকালিরমঠে ঘরঘরিয়া নদীর পাড়ে বালি তোলার কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। অনাথ রায় নামে এক শ্রমিক ধাতব ষাঁড়টি পান। তিনি তা বাড়িতে এনে পুজোও শুরু করেন। অনাথবাবু বলেন, “মূর্তিটি আমি পেয়েছি ঠিকই, তবে বাণেশ্বর মন্দিরে সেটি প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা হোক।” স্থানীয় বাসিন্দা তৃণমূলের কোচবিহার ২ ব্লক সভাপতি পরিমল বর্মন বলেন, “যে এলাকার বাসিন্দারা মূর্তিটি উদ্ধার করেছেন, তাঁরা বাণেশ্বরের শিবমন্দিরে সেটি প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। বাণেশ্বর মন্দিরে পুলিশি নিরাপত্তা থাকায় আমরা চাই সেখানেই মূর্তিটির প্রতিষ্ঠা করা হোক।” থানেশ্বর এলাকার বাসিন্দারা গত সোমবার মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত ভাবে তাঁদের এলাকার শিবমন্দিরে মূর্তিটি প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। তাঁদের বক্তব্য, বাজার লাগোয়া প্রাচীন শিবমন্দিরে শিবমূর্তির বাহন ষাঁড় ৩৫ বছর আগে চুরি হয়েছিল। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা উদ্ধার হওয়া মূর্তিটি মন্দিরের চুরি যাওয়া বলে জানিয়েছেন। থানেশ্বর শিবমন্দির কমিটির সভাপতি গাপালপুর অঞ্চল তৃণমূল সহ-সভাপতি মহেশ কার্জি বলেন, “খোঁজখবর নিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছে উদ্ধার হওয়া ষাড় মূর্তিটি আমাদের মন্দিরের। আমরা সকলেই সেটি ফেরত পেতে চাই।”
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এমন চাপানউতোরে দলের নেতাদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “গবেষকদের মত নিয়ে যাঁদের দাবি নায্য, সেটা মান্যতা দেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।” হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার বলেন, “বিতর্কে না গিয়ে প্রাচীন মূর্তিটি বিকল্প জায়গায় রাখা যেতে পারে। রাজবাড়ির মিউজিয়ামে মূর্তি রাখলে কিছু বলার থাকবে না।”
আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের ধারণা, মূর্তিটি ২০০ বছরের পুরানো। অষ্টধাতু না অন্য ধাতু দিয়ে তা তৈরি, পরীক্ষানিরীক্ষার আগে নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। |