পঞ্চায়েত ভোটের আগে কোচবিহারে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ নিয়ে সরব যুযুধান ডান-বাম দুই শিবির। পরস্পরের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে দুই দলের নেতারাই। জেলায় বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করার অভিযানের দাবিও তুলেছেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে গত এক মাসে ৬ টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এই ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে জেলা পুলিশ কর্তাদের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে কোচবিহারে থানাগুলিকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে বাড়তি জোর দেওয়ার পাশাপাশি সতর্কতা গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি কোচবিহার কোতোয়ালি ও দিনহাটা থানা এলাকায় ২ টি করে, বক্সিরহাট, মেখলিগঞ্জ এলাকায় ১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য সব কটি থানাকে জোর দিতে বলা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।” |
ভোট দিচ্ছেন ভোটকর্মীরা। বালুরঘাট ব্লক দফতরে মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
তৃণমূলের অভিযোগ, কোচবিহার জেলা জুড়ে বামফ্রন্টের দুই বড় শরিক সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লক আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রয়েছে। গত জুন মাসে কোচবিহার ১ ব্লকে পসারিরহাটে বাড়ি ফেরার সময় এক তৃণমূল কর্মীকে দুলি করে খুনের ঘটনার পাশাপাশি দিনহাটার নান্দিনায় দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালনার ঘটনার কথা জানিয়ে, তৃণমূলের তরফে বামেদেরই অভিযুক্ত করা হয়েছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “গত ৩৪ বছর আগ্নেয়াস্ত্রকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস চালিয়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল বামেরা। এখনও বাম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাত থেকে সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। সে সব ব্যবহার করে এ বারেও জেলার সীমান্ত গ্রাম সহ নানা এলাকায় এলাকা দখল নিতে চাইছে সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লক। ওই অস্ত্র উদ্ধার করা না হলে জেলায় গোলমাল থামবে না।”
বামেরা অভিযোগ মানতে চাননি। তাদের পাল্টা দাবি, দিনহাটা, সিতাই, শীতলখুচি, কোচবিহার ১, তুফানগঞ্জে তৃণমূল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। কোচবিহারের ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ নৃপেন রায় বলেন, “সিতাই এলাকায় দলের এক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় তাঁর স্বামীকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে অপহরণ করা হয়, এখনও তাঁর হদিস মেলেনি। তৃণমূলই এই সব ঘটনা ঘটাচ্ছে। নানা এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লোকদের ভয় দেখানো হচ্ছে, পুলিশকে জানিয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না।”
কোচবিহারের প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক দীপক সরকার বলেন, “বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার না হলে ভোটে অশান্তি অনিবাযর্র্।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকা দখলের রাজনীতি তৃণমূল করছে। অস্ত্র উদ্ধার করা না গেলে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। এটা আড়াল করতে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” |