শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের করিডরই যেন পার্কিয়ের জায়গা। হাসপাতাল কর্মীদের একাংশ বাইক থেকে সাইকেল সেখানেই রাখেন। আগেও এ ব্যাপারে কর্মীদের নিষেধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। দিন কয়েক নিষেধ মানার পর ফের একই অবস্থা। বিষয়টি জানেন সুপার থেকে রাজ্যের স্বাস্থ বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য সকলেই। এমনকী রুদ্রবাবুও আগে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। তাতেও যে কাজ হয়নি তা স্পষ্ট।
এক নার্স করিডরে রাখা তাঁর স্কুটার নিয়ে কাজ সেরে যাওয়ার সময় তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান এখানেই বরাবর রাখেন। সে ভাবে কেউ নিষেধও করেননি। স্বাস্থ্য কর্মীদের কয়েকজন জানান দীর্ঘদিন ধরে এটাই নিয়ম। কর্তৃপক্ষ দেখেও দেখেন না। জরুরি বিভাগের কয়েকজন কর্মীও জানান, রোগীর পরিবারের লোকদের যাতায়াতের সময় বা ট্রলিতে করে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় এই কারণে সমস্যাতেও পড়তে হয়।
বিষয়টি জেনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রুদ্রবাবুও। বিশেষ করে তিনি আগেও এ ব্যাপারে বলার পরও কেন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, “এখনও করিডরে বাইক, সাইকেল পার্কিং করা হয় বলে জানতাম না। আজ, বুধবার হাসপাতালে গিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে করিডরে পার্কিং বন্ধ করাব।”
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মেঘবরণ রায়ের দাবি, এর আগে কর্মীদের কয়েকজনের বাইক, সাইকেল হাসপাতাল চত্বর থেকে চুরি হয়েছে। তাই এখানেই অনেকে রাখছেন। তা ছাড়া হাসপাতাল চত্বরে বাইক, সাইকেল রাখার শেড না থাকার জন্য সমস্যাও রয়েছে। তিনি বলেন, “বর্ষার দিনে বাইরে বাইক, সাইকেল রাখলে বৃষ্টিতে ভেজে। তাই নিষেধও করলেও অনেকে এখন শুনছেন না।”
করিডর আটকে বাইক, সাইকেল রাখায় রোগী এবং তাঁর পরিবারের লোকদের সমস্যার কথা স্বীকার করেন মেঘবরনবাবুও। হাসপাতালের সুপার সঞ্জীব মজুমদার বলেন, “রোগী এবং লোকজনদের সমস্যা হওয়ারই কথা। তবে এখনও কেউ সে ভাবে অভিযোগ করেনি। তাই হাসপাতালের তরফেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” তবে তিনি জানান, হাসপাতালের কর্মীদের বাইক, সাইকেল রাখার জন্য পার্কিংয়ের জায়গা করা হবে। এ ব্যাপারে অর্থও বরাদ্দ করা হয়েছে। টাকা হাতে না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি বলে বলেই তিনি দাবি করেন। আপাতত কী করা যায় সেই বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে জানান।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভবনে সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট থেকে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট, ডায়েরিয়া বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড রয়েছে। তা ছাড়া করিডর দিয়ে ওষুধের স্টোর রুম-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে যাতায়াত করতে হয়। রোগীদের ট্রলিতে করে দোতলা বা তিন তলার ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে লিফটে ওঠার জন্যও করিডর দিয়ে যেতে হয়। সেখানেই করিডর আটকে পার্কিং করে রাখা থাকে বাইক, স্কুটার, সাইকেল। হাসপাতালের নার্স কৃতিকা প্রধান বলেন, ‘‘আমি আসার পর থেকেই দেখছি এখানেই সকলে সাইকেল, বাইক রাখেন। আমিও সে কারণে রেখেছিলাম। কেউ না রাখলে আমিও রাখতাম না।” চিকিৎসা করাতে আসা এক রোগীর আত্মীয় তমাল সূত্রধর বলেন, “অনেক সময়ই হাসপাতালে আসতে হয়েছে। সব সময়ই দেখি করিডরে বাইক, সাইকেল রাখা থাকে। গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ওই করিডর দিয়ে নিতে হলে বাইক, স্কুটার সরানোর জন্য দাঁড়িয়েও থাকতে হয়। তাতে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সময়ের অভাবে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তার দায় কে নেবেন?” |