বিকেল তিনটে: সুপ্রিম কোর্টের সাত নম্বর এজলাস |
|
|
|
বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক ও বিচারপতি
রঞ্জন গগৈয়ের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ |
|
|
প্রোগ্রেসিভ ইউথ ফাউন্ডেশনের (সংখ্যালঘু সংগঠন) আইনজীবী মুকুল রোহতগি: পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ মুসলমান। রমজান মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা অন্ন-জল গ্রহণ করেন না। ১০ জুলাই থেকে ৯ অগস্ট পর্যন্ত রমজান মাস। এ দিকে ১১ জুলাই থেকে ভোট শুরু হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আদর্শ হল, যদি পুরো ভোটটাই ৯ অগস্টের পরে করা সম্ভব হয়। আরেকটি বিকল্প হল, শেষ দু’দফায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে ভোট হচ্ছে। সেই দু’টি ভোটের দিন যদি এগিয়ে আনা যায়।
বিচারপতি পট্টনায়ক: ১০ জুলাইয়ের আগে ভোট করা সম্ভব নয়। কেন্দ্র বলছে, এত তাড়াতাড়ি বাহিনী দিতে পারবে না। এর আগের দিন রাজ্য সরকারের আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম অগস্টে ভোট করার কথা বলেছিলেন। আমরা সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করেছিলাম, সংবিধান মেনে কি ভোট পিছনো সম্ভব? কারণ সংবিধানের ২৪৩ই অনুচ্ছেদ বলছে পঞ্চায়েতের মেয়াদ পাঁচ বছর এবং তা শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন সেরে ফেলতে হবে। ইতিমধ্যেই সেই মেয়াদ শেষ
হয়েছে। আপনার সামনে সংবিধান রয়েছে?
রোহতগি: হ্যা। ওই অনুচ্ছেদটি পঞ্চায়েতের মেয়াদ নিয়ে।
বিচারপতি পট্টনায়ক: অনুগ্রহ করে পড়ুন।
রোহতগি (বই খুলে): সময়ের আগেই ভেঙে দেওয়া না-হলে প্রত্যেকটি পঞ্চায়েত তার প্রথম বৈঠকের সময় থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত থাকবে এবং তার বেশি নয়।
বিচারপতি পট্টনায়ক: দেখছেন তো শেষে বলে দেওয়া হয়েছে, ‘তার বেশি নয়’! এ বার তৃতীয় ধারায় আসুন।
রোহতগি: প্রথম ধারায় যে মেয়াদ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তা শেষ হওয়ার আগেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে হবে।
বিচারপতি পট্টনায়ক: সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কি আমরা সংবিধান অগ্রাহ্য করতে পারি? উনিও (কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখিয়ে) আগের দিন জানিয়েছিলেন, পঞ্চায়েতের মেয়াদ জুনেই ফুরোতে শুরু করেছে। এ বার বলুন আমরা কি সংবিধান লঙ্ঘন করব, নাকি কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াই ভোট হবে?
রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়: রাজ্য নিজেই বাহিনীর বন্দোবস্ত করতে পারে।
বিচারপতি পট্টনায়ক: এ নিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে কবে থেকে মামলা চলছে?
কল্যাণ: ১৪ মে থেকে।
বিচারপতি গগৈ: আমরা রোহতগির সামনে একটা নির্দিষ্ট প্রশ্ন রেখেছি।
বিচারপতি পট্টনায়ক: তা হলে বলুন, আমরা কি সংবিধানকে এড়িয়ে যাব?
রোহতগি: তা তো সম্ভব নয়।
বিচারপতি পট্টনায়ক: এ দিকে কেন্দ্র বলছে, বাহিনী দিতে পারবে না। উত্তরাখণ্ডের উদ্ধারকার্যে বাহিনী দিতে হয়েছে।
রোহতগি: মহামান্য বিচারপতি যা বলছেন, তাতে কোনও ভুল নেই। কিন্তু এতে বার্তা যাবে যে, ওই এক-তৃতীয়াংশ মানুষের জন্য কেউ
ভাবিত নয়।
বিচারপতি পট্টনায়ক: সমস্যাটা বুঝতে পারছি। কিন্তু ধর্মীয় ভাবাবেগ না সংবিধান, কাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে? সংবিধান মেনে কিছু তো করার নেই।
রোহতগি: শেষ দু’দফার ভোট কি এগিয়ে আনা সম্ভব নয়?
বিচারপতি পট্টনায়ক: কেন্দ্র বলুক, আগে বাহিনী দিতে পারবে কি না?
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল রাকেশ খন্না: এমনিতেই ১১ তারিখের ভোটের জন্য আমাদের ৮ তারিখ থেকেই বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
রোহতগি: ৮ তারিখে দিতে পারলে কি আর দু’দিন আগে দেওয়া
সম্ভব নয়?
বিচারপতি পট্টনায়ক: কেন্দ্রের আইনজীবী সরকারি আমলাদের সঙ্গে কথা বলে নিতে পারেন।
এ এস জি খন্না (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডিরেক্টর (পার্সোনেল) দীনেশ মাথুরের সঙ্গে আলোচনা করে): না সম্ভব হবে না।
কল্যাণ: আমাদের একটা পরামর্শ আছে। কেন্দ্র দিতে না-পারলে রাজ্য সরকারই পুরো ৫০ হাজার নিরাপত্তা কর্মীর বন্দোবস্ত করতে পারে।
বিচারপতি পট্টনায়ক: শুনুন, আপনারা যদি ভোট চাইতেন, তা হলে এটা আগেই করতে পারতেন। এত দিন ধরে কলকাতা হাইকোর্টে গড়িমসি করতেন না।
সারা বাংলা সংখ্যালঘু পরিষদের আইনজীবী উপমন্যু হাজরিকা: আমাদের একটা অনুরোধ আছে। রমজানের সময় সন্ধ্যায় নমাজ পড়া
হয়। ওই সময় ভোটের প্রচারে লাউডস্পিকার বাজানো হলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। |
বিচারপতি পট্টনায়ক: এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ফলি নরিম্যান: আগের রায় অনুযায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে অনুরোধ জানানো হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। রাজ্যকে এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হোক।
বিচারপতি পট্টনায়ক: আজকের রায়ের পর রাজ্য সরকারকে বিজ্ঞপ্তি জারি করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
এ এস জি খন্না: সাধারণত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হয় না। স্পষ্ট করে দিন, এই মামলার রায় যাতে অন্য কোথাও দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা না হয়।
বিচারপতি পট্টনায়ক: তা হবে না। |
রায় ঘোষণা
আমরা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট বদলাতে পারছি না। |